Skip to main content

প্ল্যানপ্ল্যানানি


- গত পুজোয় আমরা হিমাচল যাওয়ার প্ল্যান করেছিলাম৷ তাই না বউ?

- তাই তো। ট্রেনে দিল্লী। দিল্লী থেকে বাসে চেপে শিমলা।

- আর তারপর একটা প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে দু'হপ্তার ভ্রমণ। শিমলা, মানালি, রোটাং, কাজা, চিতকুল। আহা।

- তোমার ফ্যাক্টরির হইহইরইরই নেই৷ আমার স্কুলের গোলমাল নেই৷ অ্যাই, ওয়েলিংটন থেকে দু'টো জ্যাকেট এনেছিলে তুমি, মনে আছে? কত ভাবলাম হিমাচলের কনকনে শীতে ওই জ্যাকেট দু'টো কাজে লাগবে৷ 

- সে জ্যাকেট-জোড়ার কথা মনে থাকবে না আবার? বেশ ভালো দরে বাগিয়েছিলাম কিন্তু। আর টপ কোয়ালিটি।

- স্পিতি নদীর ধারে বসে ডিমসেদ্ধ আর ম্যাগি খাবো ভেবেছিলাম। তাই না গো বর?

- আর কাজা নামের ওই গ্রামটায় দিন-তিনেক গা এলিয়ে কাটিয়ে দেওয়া? সকালে হাঁটাহাঁটি? দুপুরে আমার গান শোনা আর তোমার বইয়ে মুখ গুঁজে বসে থাকা?

- আর সন্ধ্যেবেলা জমিয়ে গল্প আর তাস। তাই না গো?

- টাকাপয়সার সামান্য ইয়ের জন্য হিমাচল যাওয়া হল না বটে। কিন্তু যাই বলো, অমন জব্বর প্ল্যান ছকেও আরাম।

- বটেই তো৷ কেন, তার আগের পুজোয় সেই যে আন্দামান যাব ভাবলাম? সে'টা মনে নেই?

- মনে নেই আবার। সে তো গ্র‍্যান্ড প্ল্যান ছিল। তাই না গো বউ? প্লেনে পোর্ট ব্লেয়ার৷ সাতদিন লাটিয়ে জাহাজের ঘ্যামে ওয়াপিস কলকাতা।

- উফ। ভাবলেই থ্রিল। গায়ে কাঁটা।

- ট্র‍্যাভেল ম্যাগাজিনের সেই ছবিগুলো এখনও চোখে ভাসে জানো। আন্দামানের সেই নীল সমুদ্দুর...। আহা। দীঘার সমুদ্র সে নীলের কাছে পাতি চৌবাচ্চা।

- রাধানগর বীচ, হ্যাভলক, ভাইপার, নীল...।

- আহা। পোয়েট্রি। পোয়েট্রি। রাতের পর রাত আমরা গুগল ঘেঁটেছি। তাই না গো?

- রাতের পর রাত। আহা। সত্যিই। 

- সে'টাও তো গেল ভেস্তে। মাঝেমধ্যে মনে হয় বছরে একটা করে যদি লটারি পাওয়া যেত..।

- বছরে একটা বঙ্গলক্ষ্মী বাম্পার? বরকুমার, তা'হলে তার আগের পুজোয় লাদাখ যাওয়ার পরিকল্পনাটাও ভেস্তে যেত না গো। 

- আর তার আগের পুজোর রাজস্থান ট্রিপটাও...বানচাল হত না।

- আর তার আগের পুজোয়? তাত আগের পুজোয় কোথায় যাওয়ার প্ল্যান ক্যান্সেল করেছি আমরা?

- নাহ্। সে'পুজোর প্ল্যান ভোগে যায়নি গো৷ তখন তো আমাদের নন্দনে দেখা হচ্ছে প্রতি সন্ধ্যেয়।  অথবা মিলেনিয়াম পার্ক৷ 

- ও হ্যাঁ। সে বছর তো সদ্য আলাপ। আর চটজলদি হুজুগে পুজোয় বিয়ের প্ল্যান।

- ভাগ্যিস রেজিস্ট্রি বিয়েতে ট্রেনের টিকিট বা হোটেল বুকিংয়ের খরচটুকু ছিলনা। সেই পুজোর প্ল্যানটা তাই ভেসে যায়নি। কী বলো?

- হেহ্। এ'বার পুজোয় অবিশ্যি প্ল্যান ছকেও লাভ নেই। করোনা সে'সমস্ত ভাসিয়ে নিয়েছে।

- করোনা না থাকলেও যেতে পারতাম কই? একজোড়া সেল্ফিশ জায়্যান্টের মত দেশভ্রমণে বেরোলে, তোমার মায়ের ট্রিটমেন্ট আমার বোনের কোর্সফীর খরচ কে দিত?

- উম। তা ঠিক। কাজেই পুজোর ছুটিতে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যানটুকু অন্তত না করার কোনও মানেই হয়না। তাই না গো?

- শাবাশ ওয়াটসন! শাবাশ!

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু