Skip to main content

আলাপ


- কম্পলেক্সে নতুন মনে হচ্ছে?

- ফাইভ-এ-তে এসেছি। গতকালই।

- ওয়েলকাম। আমি সত্যব্রত ধর, ফাইভ-বি। 

- ওহ। তা'হলে তো আমার ইমিডিয়েট নেবার। আমি অমিতাভ সেন। তা আসুন না একদিন। দুই বাঙালির আলাপ কি চা আর টা ছাড়া জমে নাকি।

- কেন? দিব্যি জমে।

- না মানে..।

- অমিতাভবাবু। পাশের ফ্ল্যাটে নতুন কেউ এলেই আমি আলাপ করার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়ি। কেন জানেন?

- মানুষ তো সামাজিক ইয়ে। আলাপের ইচ্ছেটা তো অস্বাভাবিক নয়। যে কোনও বিপদেআপদে বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয়স্বজনের আগে তো পাড়াপড়শিরাই ছুটে আসবে। 

- এই মিসকনসেপশনটাই বড় ভাবায় আমায় জানেন। সে জন্যই আমি নতুন প্রতিবেশীদের লবিতে পাকড়াও করি।। শুনুন, ও'সব সামাজিক ইয়েটিয়ে পুরোপুরি ব্লাফ। মানুষ অত্যন্ত ধান্দাবাজ। আর প্রতিবেশীর সঙ্গে বেশি গা-মাখামাখি মোটে ভালো কথা নয়।

- আমি ঠিক..।

-  এই যে চা আর টা খেতেখেতে আলাপ, এ'সব বড় ভাবায় আমায়।

- ভাবায়? কেন বলুন তো?

- সেই তো আপনার বাড়ির সোফায় বসে চা পকোড়া খেতে খেতে আপনাকেই মনে মনে কঞ্জুস বা বাতেলাবাজ বা অন্যকিছু বলে হ্যাটা করব। আপনিও আমার প্লেটে পকোড়া ঢালতে ঢালতে মনে মনে বলবেন শালা আপদ। 

- ও মা। তা কেন?

- ঠিক তাই৷ চা পকোড়া খেতেখেতে গল্পগুজব যেটুকু যা জমবে তা আদৌ কোনও কোয়ালিটি গল্প নয়,  পুরোটাই সস্তা গুজবের ভিত্তিতে পরনিন্দা। অথবা তার চেয়েও ক্ষতিকারক জিনিস এসে পড়বে আড্ডায়; পলিটিক্স। 

- আপনি কিন্তু মশাই বেশ বিটার।

- সে'টাই বেটার। সুইট হলে আজ চাইতেন চিনি আর পরশু চা-পাতা। না না, আমায় চশমখোর ভাববেন না। চা চিনি ডিম দেওয়ানেওয়াতে আমার অসুবিধে নেই৷ আমার চিন্তা ওই ছিচকে ট্র‍্যান্সক্যাশনগুলোর জন্য যে  প্রাণান্তকর খেজুরে আলাপটুকু সহ্য করতে হয় তা নিয়ে। চার চামচ মিল্কপাউডার নিতে এসে চোদ্দ মিনটের বাজে গল্প। উফ। তবে হ্যাঁ, ওই খেজুরে আলাপ বাদ দিয়ে মনের মতন বই আদানপ্রদান করতে চাইলে এনকারেজ করতে পারি। 

- আমি আসি সত্যব্রতবাবু।

- ও মশাই। চটলেন নাকি? আহা, ভ্যাক্সিনে খোঁচা আছে কিন্তু লংরানে উপকারি। পাশের ফ্ল্যাটে নতুন কেউ এলেই আমি তাকেতাকে থাকি কখন লবিতে তাকে পাকড়াও করব। এক্সপেক্টেশনগুলো গোড়াতেই ক্যালিব্রেট না করলে সমূহ ক্ষতির সম্ভাবনা। 

- বেশ। চায়ের নেমন্তন্ন করে আপনাকে বিব্রত করব না। এখন আসি।

- হেহ্। যাক, আর কোনও কনফিউশন রইল না। ইয়ে, আমি কিন্তু ব্যাড নেবার নই মশাই।  আপনার ফ্ল্যাটে আগুন লাগলে আমি অবশ্যই দমকলে খবর দেব। আর আমার ফ্ল্যাটে আগুন লাগলে আপনি দমকলে খবর দেবেন। ব্যাস, প্রতিবেশীর দায়িত্ব শেষ। টোটাল উইন উইন,তাই না?

Comments

Anonymous said…
সত্যি এবং সুন্দর
এই দুটিই যথাযথ প্রশংসা হবে এই লেখাটার জন্য।
ভদ্রলোক প্রথম আলাপেই প্রলাপ বকেন দেখছি।

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু