Skip to main content

সুমি আর বাবা


- বাবা?

- কেমন আছিস রে সুমি?

- তুমি..এ'খানে..।

- এ'খানে আমার থাকার কথা নয়। এ'টা তোদের জামশেদপুরের শোওয়ার ঘর। জানি। আমার থাকার কথা পাটনায়। অথচ আমি এ'খানে আছি৷ কী'ভাবে যে এলাম।

- বাবা। তুমি দিব্যি আমার কথা শুনতেও পাচ্ছ।

- শুনতেও পাওয়ার কথা নয়৷ তাও জানি। বছর পাঁচেক হল আমি কানে কিছুই কিন্তু শুনতে পাইনা। টোটালি ড্যেফ৷ অথচ আজ তোর কথাগুলো স্পষ্ট শুনতে পারছি। ম্যাজিক।

- আমি বোধ হয়..বোধ হয়..স্বপ্ন দেখছি। 

- হতে পারে৷ তোর স্বপ্ন। হতেও পারে। কিন্তু..।

- কিন্তু? কিন্তু কী বাবা?

- এ'টা আমার স্বপ্নও হতে পারে তো। তাই না?

- যারই স্বপ্ন হোক,এদ্দিন পর দেখা হচ্ছে; এ'টাই বড় কথা৷ কদ্দিন তোমায় এত কাছ থেকে দেখিনি। 

- তা ঠিক।

- বাবা, তোমার আর মায়ের জন্য আমার খুব মনকেমন করে।

- স্বাভাবিক।  বুড়ো বাপ-মায়ের জন্য মনকেমন করবে।সে'টাই স্বাভাবিক। হ্যাঁ রে, সুমন কেমন আছে?

- ভালো। আমরা দু'জনে এ'বার পুজোয় উত্তরাখণ্ডের দিকে যাব ভেবেছিলাম। এই ভাইরাসের ঠেলায় সে'সব গোল্লায় গেল। সে নিয়ে যে সুমনের কী মনখারাপ।

- ভাইরাসের ঠেলাই বটে।

- মা কেমন আছে বাবা?

- আছে৷ মনমরা হয়ে থাকে গোটাদিন। যা বলে কিছুই তো ছাই শুনতে পাইনা।

- আমি মাঝেমধ্যে এমন ব্যস্ত থাকি বাবা, মায়ের কল এলেও রিসিভ করা হয়ে ওঠেনা৷ আর দিনের শেষে এত ক্লান্তি...তাই হয়ত রোজ কথা বলে ওঠা হয়না..কিন্তু বাবা..।

- আমরা কি তা বুঝিনা রে সুমি? তা নিয়ে তুই ভাবিসনা সুমি৷

- বাবা, আমায় পাটনা নিয়ে যাবে?

- যাবি সুমি? সুমনকে নিয়ে? জানি ওরও অফিসের ব্যস্ততা কম নয়..।

- বাবা, আমার বড় মনখারাপ। 

- সুমি। তুই এত ক্লান্ত কেন রে?

- আমায় পাটনা নিয়ে যাবে? বাবা? মা ঘি দিয়ে আলুসেদ্ধ মাখবে।  তুমি বেসুরো গলায় টপ্পা গাইবে। 

- এত মনখারাপ কেন সুমি?

- বাড়ি নিয়ে যাবে বাবা? আমায় বাড়ি নিয়ে যাবে?

- স্বপ্নটা যে ছাই কার। আমার না তোর..।

- আচ্ছা বাবা, শোনো। এ'টা যারই স্বপ্ন হোক। সে আগামীকাল অন্যজনকে ইমেল করে গুছিয়ে এই স্বপ্নের গল্প বলবে। 

- তোর এত মনখারাপ? সুমি?

- আলুসেদ্ধ আর টপ্পায় সেরে যাবে। 

- সুমি। আমারও মনখারাপ৷ খুব৷ তুই নেই, বাড়িটাকে বেসুরো টপ্পার মতই মনে হয়।

- বাড়ি ফিরব বাবা। পুজোয়৷ কেমন?

- পিতৃমনখারাপের শেষ। সুমিপক্ষের শুরু।

***

অবাক লাগে অনুপমার৷

এতগুলো বছর কেটে গেল অথচ আজও সুমি আর সুমির বাবার মনখারাপের কথা ভেবেই দিন কেটে যায়। নিজের মনকেমনগুলো ফিকে হতে হতে আজ এমন অবস্থা সে নিজের স্বপ্নেও সে'গুলো ধরা পড়েনা। 

নিজের স্বপ্নেও নিজের ঠাঁই নেই, এ কথা ভেবে হেসে ফেললেন অনুপমা।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু