Monday, August 17, 2020

কলকাতা কলকাতা মনকেমন

ফট করে কলকাতা থেকে হাজার মাইল দূরে এসে পড়ার মধ্যে যে প্রকাণ্ড মনখারাপ, তা ম্যানেজ করা সহজ নয়। মাঝেমধ্যেই বুকের মধ্যে হুহু; আহা, কবে যে আবার বাড়ি ফিরব।

কলকাতার রাস্তাঘাটের খানাখন্দগুলোর কথা মনে পড়লেও বুকভার হয়ে আসে। কলকাতার বাড়ি থেকে আধমাইল এগোতেই রাস্তার ঠিক মধ্যিখানে সে এক ইয়াব্বড় গর্ত। সে গর্ত প্রতিটি ইলেকশনের আগে ভরাট হয় আর প্রতি বর্ষায় সে ফিনিক্সের মত স্বমহিমায় ফিরে আসে। কলকাতা ছাড়ার পর সে গর্তকেও বড় আপন বলে বোধ হয়; আহা, দিব্যি কেমন মাঝেমধ্যেই সে গর্তে গাড়ি-বাইকের চাকা পড়ে গোটা গা ঝনঝন করে উঠত৷ কলকাতা ছেড়ে এসে মনে হয় সে গা-ঝনঝনই যেন আমার প্রাণায়াম ছিল। 

কলকাতায় থাকাকালীন বেহালার ট্র‍্যাফিক জ্যামকে কত কটুকথা বলেছি। অথচ আজ আফশোস হয়৷ সে জ্যাম যে আমায় ডারবান-পিচে দ্রাবিড়ের ধৈর্যের মত মজবুত করেছে সে'টা তখন বুঝিনি। সেই জ্যামে ঠায় বসে থেকে এফএমে রেডিওর কত সহস্র বিজ্ঞাপন যে মুখস্থ করেছি তার ইয়ত্তা নেই। সেই জ্যামে আর বিজ্ঞাপনে একবার ফিরতে পারলে যেন সামান্য শান্তি পেতাম।

তবে। সামান্য যে'টুকু স্বস্তি, তা রয়েছে কলকাতার বন্ধুদের চ্যাট-সান্নিধ্যে। কিন্তু এ বন্ধুরাও অতিখতরনাক৷ এদের গলায় থাকে স্নেহ আর বুকে থাকে বিষ৷ রাজমা-রুটি চেবাচ্ছি শুনে টাইপ করে "আহা, উঁহু" কিন্তু পরক্ষণেই জানান দেয় "উত্তর দিতে দেরী হচ্ছে কারণ একহাতে ডাবল এগ চিকেন রোল তাই অন্যহাতে ধীরেসুস্থে টাইপ করতে হচ্ছে"। 

বাড়ির সামনের রাস্তার সেই গর্তটি আর যাই হোক এই বন্ধুগুলোর মত বিপজ্জনক নয়। 

**

- এত দেরী করে উত্তর দিচ্ছিস কেন রে ভজা?

- এই মাত্র হাতে একটা ডবল এগ-চিকেন রোল এলো। তাই একহাতে টাইপ করতে সামান্য অসুবিধে হচ্ছে বুঝলি।

- বেশ। রোল মন দিয়ে খা। তারপরেই চ্যাট হবে'খন। তার আগে শুধু একটা কথা ছিল।

- বলে ফেল ভাই। 

- বলতে পারিস, একটা আব্দার ছিল।

- আরে বন্ধুর কাছে আবার আব্দার কী রে। যা চাইবি৷ তুই শুধু বল একবার।

- না করতে পারবি না কিন্তু।

- তুই বলেই দেখ না রে। বালিগঞ্জে আজও আমাদের ফ্যামিলির একটা হোল্ড আছে ভাই। যা দরকার তুই শুধু বল।

- প্লীজ সেন্ড ন্যুডস।

- শালা হারামজাদা নচ্ছার। তোর পেটে পেটে এই? বলব বৌদিকে?

- দ্যাখ ভজা। আমি কবিতা লিখতে নাই পারি, কিন্তু স্বভাবের দিকে থেকে আই অ্যাম আ পোয়েট।

- তুই একটা রাস্কেল।

- পাতি ন্যুড চাওয়ার বান্দা আমি নই ভজা। নই। তুই কলকাতায় বসে রোলে কামড় দিচ্ছিস।  আমি এতদূরে বসে হাতে। পাতি ন্যুড চাওয়ার লোক আমি নই ভজা।

- অ-পাতি ন্যুডটা কী তবে?

- ওই রোলের গা থেকে কাগজের পরতটা সুপার-স্লো-মোশনে সরিয়ে...ডিম আর মুর্গিতে ঠাসা রোল করা পরোটার ছবিটা..কোনও রকম আবরণ ছাড়া...দিবি? লংডিস্ট্যান্সে নজর দিলে বোধ হয় পেটখারাপ হয়না। দে না রে ভাই। প্লীজ।

No comments: