Skip to main content

কলকাতা কলকাতা মনকেমন

ফট করে কলকাতা থেকে হাজার মাইল দূরে এসে পড়ার মধ্যে যে প্রকাণ্ড মনখারাপ, তা ম্যানেজ করা সহজ নয়। মাঝেমধ্যেই বুকের মধ্যে হুহু; আহা, কবে যে আবার বাড়ি ফিরব।

কলকাতার রাস্তাঘাটের খানাখন্দগুলোর কথা মনে পড়লেও বুকভার হয়ে আসে। কলকাতার বাড়ি থেকে আধমাইল এগোতেই রাস্তার ঠিক মধ্যিখানে সে এক ইয়াব্বড় গর্ত। সে গর্ত প্রতিটি ইলেকশনের আগে ভরাট হয় আর প্রতি বর্ষায় সে ফিনিক্সের মত স্বমহিমায় ফিরে আসে। কলকাতা ছাড়ার পর সে গর্তকেও বড় আপন বলে বোধ হয়; আহা, দিব্যি কেমন মাঝেমধ্যেই সে গর্তে গাড়ি-বাইকের চাকা পড়ে গোটা গা ঝনঝন করে উঠত৷ কলকাতা ছেড়ে এসে মনে হয় সে গা-ঝনঝনই যেন আমার প্রাণায়াম ছিল। 

কলকাতায় থাকাকালীন বেহালার ট্র‍্যাফিক জ্যামকে কত কটুকথা বলেছি। অথচ আজ আফশোস হয়৷ সে জ্যাম যে আমায় ডারবান-পিচে দ্রাবিড়ের ধৈর্যের মত মজবুত করেছে সে'টা তখন বুঝিনি। সেই জ্যামে ঠায় বসে থেকে এফএমে রেডিওর কত সহস্র বিজ্ঞাপন যে মুখস্থ করেছি তার ইয়ত্তা নেই। সেই জ্যামে আর বিজ্ঞাপনে একবার ফিরতে পারলে যেন সামান্য শান্তি পেতাম।

তবে। সামান্য যে'টুকু স্বস্তি, তা রয়েছে কলকাতার বন্ধুদের চ্যাট-সান্নিধ্যে। কিন্তু এ বন্ধুরাও অতিখতরনাক৷ এদের গলায় থাকে স্নেহ আর বুকে থাকে বিষ৷ রাজমা-রুটি চেবাচ্ছি শুনে টাইপ করে "আহা, উঁহু" কিন্তু পরক্ষণেই জানান দেয় "উত্তর দিতে দেরী হচ্ছে কারণ একহাতে ডাবল এগ চিকেন রোল তাই অন্যহাতে ধীরেসুস্থে টাইপ করতে হচ্ছে"। 

বাড়ির সামনের রাস্তার সেই গর্তটি আর যাই হোক এই বন্ধুগুলোর মত বিপজ্জনক নয়। 

**

- এত দেরী করে উত্তর দিচ্ছিস কেন রে ভজা?

- এই মাত্র হাতে একটা ডবল এগ-চিকেন রোল এলো। তাই একহাতে টাইপ করতে সামান্য অসুবিধে হচ্ছে বুঝলি।

- বেশ। রোল মন দিয়ে খা। তারপরেই চ্যাট হবে'খন। তার আগে শুধু একটা কথা ছিল।

- বলে ফেল ভাই। 

- বলতে পারিস, একটা আব্দার ছিল।

- আরে বন্ধুর কাছে আবার আব্দার কী রে। যা চাইবি৷ তুই শুধু বল একবার।

- না করতে পারবি না কিন্তু।

- তুই বলেই দেখ না রে। বালিগঞ্জে আজও আমাদের ফ্যামিলির একটা হোল্ড আছে ভাই। যা দরকার তুই শুধু বল।

- প্লীজ সেন্ড ন্যুডস।

- শালা হারামজাদা নচ্ছার। তোর পেটে পেটে এই? বলব বৌদিকে?

- দ্যাখ ভজা। আমি কবিতা লিখতে নাই পারি, কিন্তু স্বভাবের দিকে থেকে আই অ্যাম আ পোয়েট।

- তুই একটা রাস্কেল।

- পাতি ন্যুড চাওয়ার বান্দা আমি নই ভজা। নই। তুই কলকাতায় বসে রোলে কামড় দিচ্ছিস।  আমি এতদূরে বসে হাতে। পাতি ন্যুড চাওয়ার লোক আমি নই ভজা।

- অ-পাতি ন্যুডটা কী তবে?

- ওই রোলের গা থেকে কাগজের পরতটা সুপার-স্লো-মোশনে সরিয়ে...ডিম আর মুর্গিতে ঠাসা রোল করা পরোটার ছবিটা..কোনও রকম আবরণ ছাড়া...দিবি? লংডিস্ট্যান্সে নজর দিলে বোধ হয় পেটখারাপ হয়না। দে না রে ভাই। প্লীজ।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু