Skip to main content

রাহাজানি

- আর কতক্ষণ কপালে রিভলভারটা ঠেকিয়ে রাখবেন জানতে পারি?

- কলজে কাঁপছে নাকি খোকন?

- লোহার নল তো, কপালে ঠাণ্ডা লাগছে। আজ আবার একটু শীত পড়েছে। হাফ সোয়েটারটা শেষ পর্যন্ত বের করতেই হল। তবে এখনও ন্যাপথালিনের গন্ধ পাবেন..।

- যা আছে বের করুন। যত্ত বাজে কথা! অত সময় আমার নেই!

- তাই তো বলছি! রিভলভারটা সরান। হারুদার রুটিতড়কার দোকান বন্ধ হল বলে। সে আর এক কেলেঙ্কারি হবে'খন।

- তবে রে! দেব ট্রিগার টেনে তখন বুঝবি কত ধানে কত চাল!

- ট্রিগার টানার দম আপনার নেই স্যার। দেশলাই আছে? আজ বিড়ির বদলে একটা গোল্ডফ্লেক জ্বেলে শীত সেলিব্রেট করব ভেবেছি।

- খুলিয়ে উড়িয়ে দেব শালা!

- আপনার আলোয়ানের আড়াল থেকে আপনার  বুকপকেট উঁকি মারছে। সে'টার থেবড়ে যাওয়া ভাজ দেখে স্পষ্ট কেউ সে'খানে মাথা রেখেছিল, এই কিছুক্ষণ আগেই।  পকেটের ছাপ দেখে যা বুঝছি যে মাথা যে রেখেছিল তার বছর দুই বয়স, বড় জোর। একটু কমও হতে পারে। তবে খুকি না খোকা  সে'টা বুঝতে বেগ পেতে হত। কিন্তু কপালে রিভলভার ঠেকিয়ে সারকাস্টিকালি খোকা বলতে গিয়েও যে ভাবে ইমোশনে ছড়ালেন..। ট্রিগার টানার দম আপনার নেই। তবে আপনার বুক পকেটে লেগে থাকা লালার নেচারাটার জন্য চিন্তা হচ্ছে। খোকার কি শরীর খারাপ?

- আপনি কে?

- তার চেয়েও বড় কথা, খোকা কেমন আছে?

- ভালো নেই, বিশ্বাস করুন! এখুনি ভালো জায়গায় ভর্তি না করলে  খোকা হয়ত আর...। অথচ আমার কাছে..।

- সে আপনার জুতোর হাল দেখেই বুঝেছি। এই রিভলভারটা পেলেন কোথায়?

- পাড়ার এমএলএর পোষা গুণ্ডার সঙ্গে আলাপ আছে। রিভলভারও তার, আইডিয়াও তার।

- রিভলভারটা কপাল থেকে সরাবেন?  এ'বার?

- সরি! কিন্তু আমি কী করব! কোথায় যাব!

- রাহাজানি আপনার দ্বারা হবে না। বললাম তো। আর দেশ আপনার লেভেলের ক্রিমিনালে ভরে যাওয়ায় আমার পকেট ন্যাচুরালি গড়ের মাঠ।  তবে ডাক্তার সেনগুপ্তর কাছে একটা ফেভার পাওনা ছিল। খোকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। চলুন। সুভাষনগরের দিকে থাকেন তো?

- হ্যাঁ..ইয়ে।

- আপনার নাম?

- মধু সান্যাল।

- আর দেরী নয় মধুবাবু, চলুন!

- কী করে জানলেন...? ইয়ে...সুভাষনগরের ব্যাপারটা?

- বিভূদার চপের দোকানের আশেপাশে বাড়ি না হলে গোটা  নিজের সঙ্গে এমন মনমোহিনী সুবাস বয়ে আনবেন কী করে? এ সময় আবার বিভূদা ধনেপাতার বড়ায় কনসেন্ট্রেট করে। আহা। অহো। যা হোক। ডাক্তার সেনগুপ্তকে এসএমএস করে দিয়েছি। চলুন।

- কিন্তু টাকা?

- ডাক্তার সেনগুপ্ত টাকায় আমার ঋণ শোধ করতে পারবেন না। সে চিন্তা নেই।

- আপনি কে বলুন তো?

- আমার বটুকেশ্বর নামটা আমার বাপেরই দেওয়া শুনেছি। তবে ভদ্রলোকের বুকপকেটের সুবাস আমার মনে নেই। খোকার কাছে চলুন মধুবাবু। একটা ট্যাক্সি পাকড়াও করা যাক। আর পিস্তলটা আমায় দিন, আপনার হাতে পিস্তল আর আরসালানে বাঁধাকপি একই ব্যাপার।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু