Skip to main content

বিভূতি

বিভূতি এক্সপ্রেসের জেনারেল কামরায় কী প্রচণ্ড ভিড়। প্রতিদিনই থাকে, কিন্তু আজ যেন অস্বাভাবিক রকম বেশি। এক দাড়িয়াল ভদ্রলোকের নির্মম থুতনি কাঁধে বিশ্রি ভাবে ঠুসে পড়ছিল বারবার। ভদ্রলোকের অবশ্য কিছু করার নেই, আমার কাঁধ বেয়ে মাঝেমধ্যে উঠে না এলে অক্সিজেনের সাপ্লাইয়ে টান পড়তে পারে। পায়ের ওপর পা আর পায়ের পাতার টনটন মাথা পেতে নেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। আমার জুতোর তলে খান তিনেক পায়ের পাতা থাকলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই, আবার জুতোর ওপরে খান দুই ওজনদার পা।

এক চা-ওলা বদ সাহসে ভর দিয়ে ট্রেনে উঠেছিল, এখন ভিড়ে জব্দ হয়ে অপেক্ষা করছে কেটলি উঁচিয়ে, বর্ধমান এলেই নেমে হাঁপ ছাড়বে। এই ভিড়ে চায়ের কাপ সামলানো দূরের কথা, সল্টেড বাদামের প্যাকেট ছেঁড়াও অসম্ভব।

আর এই ভিড় বাঁচিয়ে বাঙ্কে এক বাপ তার বছর দুই বয়সের খোকাকে নিয়ে গ্যাঁট হয়ে বসেছে। বসেছে বটে, তবে খোকার ধড়ফড়ানিতে সোয়াস্তিতে বসার যো নেই। খোকার কথা স্পষ্ট ফোটেনি, কিন্তু মুখে হিজিবিজির ফুলঝুরি। তবে বাপের মুখে অবিরাম হ্যা-হ্যা ভাব সেঁটে আছে, খোকার শত ঘ্যানঘ্যানেও সে হাসি পরাস্ত হওয়ার নয়। খানিক পর বাপ একটা সবুজ প্লাস্টিকের টিফিন বাক্স খুলে রুটি সবজি বের করে খোকাকে খাওয়াতে শুরু করলে, সঙ্গে আগডুম বাগডুম গল্প। খোকা রুটি খায় কম, গল্প গেলে বেশি।

দেহাতি ভাষায় সে বাঘভল্লুকের গল্প বেশ জমে উঠেছিল। মিনিট তিনেক গল্প শুনলে খোকা এক গেরাস মুখে নেয়। বাপের মুখ থেকে হ্যা-হ্যা'র দাপট এক ইঞ্চিও এ'দিক ও'দিক হয় না। ভিড়ের চাপা গমগম ছাপিয়ে কার মোবাইল স্পীকারে তখন কিশোরকুমারের গান বাজছিল; "এক বার ইয়ু মিলি, মাসুম সি কলি..."।

টের পেলাম ভদ্রলোক নিজের বাপসুলভ হ্যা-হ্যা দিয়ে নিজের চোখের মা-মা ভাব ঢেকে রেখেছে। এ'দিকে পায়ের টনটন বেশ কমে আসছে। ইচ্ছে করছে গন্তব্যে না নেমে আরও দু'চার স্টেশন যাই বাপ-ছেলের সঙ্গে। খোকা ঘুমোনোর সময় বাপে গান গাইবে না?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু