Skip to main content

মৃণাল সরকারের ব্যবসা

- আসতে পারি?
- না।
- মানে...।
- এ'বার আসুন। ভিতরে আসুন সেন্সে নয়। বিদেয় হোন।
- মিস্টার সরকার! আমায় আপনিই ডেকেছেন।
- আমি?
- আমার কাছে আপনার চিঠি আছে। আমি অনন্ত মজুমদার।
- বারুইপুরের?
- আজ্ঞে।
- ওহ! মজুমদারবাবু। আই অ্যাম সরি। প্লীজ আসুন।বিদেয় হোন সেন্সে নয়, সামনের চেয়ারটা টেনে বসুন।
- থ্যাঙ্কস। কিন্তু আমায় ডেকেছেন কেন সে'টা ঠিক..।
- বুঝতে পারেননি। কিন্তু তবু এসেছেন।
- আমি একা মানুষ। ঝাড়া হাত পা। স্কুলে পড়াই, সে'খানেও ছুটি চলছে। নেয়ামৎপুরের টেরাকোটা মন্দিরগুলো দেখতে আসার ইচ্ছেই ছিল। আপনার ইনভাইটটা পেয়ে...। আফটার অল আপনার পাঠানো অতগুলো টাকা পায়ে ঠেলার কলজে আমার নেই।
- আমার ব্যাপারে কিছু জানেন?
- আপনি মৃণাল সরকার। সর্ষের তেলের কল আছে। তিনটে কলকাতায়। দু'টো এ'খানে। আর ইয়ে...আপনার একটা অদ্ভুত শখের কথা একবার কাগজে পড়েছিলাম। আপনার নাকি কাঁকড়া পোষার শখ?
- আমার ড্রয়িং রুমে একটা জায়্যান্ট অ্যাকোয়ারিয়াম আছে। আপনাকে দেখাব 'খন। ইম্প্রেসিভ। তা, মোদ্দা খবরটা জানেন কী?
- মোদ্দা?
- যে আমার অঢেল টাকাপয়সা। ব্যবসার আমার মুনাফা ব্যালান্স শিট ফুঁড়ে বেরিয়ে যায় প্রত্যেক বছর।
- মুখের ওপর বলতে চাইছিলাম না। মানে, অমন দুম করে বড়লোকদের বড়লোক বলাটা খারাপ শোনায়। তা একটা কথা বলুন, আমায় ডাকলেন কেন? আর অত টাকার চেকটাই বা পাঠাতে গেলেন কেন।
- আমি বিজনেসম্যান মিস্টার মজুমদার। বাজে খরচ আমার মোটেও ধাতে সয় না। অত টাকা পাঠিয়েছি যখন, প্রয়োজন নিশ্চয়ই আছে। আমার রিসার্চ বলছে আপনিই সঠিক লোক।  তা একটা কথা বলুন, আমার সর্ষের তেলের ব্যবসার মূল মন্ত্রটা জানেন তো?
- গোটা দেশ সে নিয়ে হন্যে হয়ে যাচ্ছে, আর আমি জানব না? আপনার কারখানায় সর্ষের তেল তৈরি হয় সর্ষে ব্যবহার না করে। আমেরিকা ইউরোপ থেকে সকলে আপনার সাক্ষাৎকার নিয়ে যাচ্ছে। অথচ গোপন রহস্য কেউই ভেদ করতে পারেনি।
- পারেনি। তবে আজ আপনি পারবেন। আপনাকে আমিই জানাব জনাব!
- আমায় কেন?
- আমি প্রত্যেক বছর আপনারই মত বাছাই কয়েক জনকে জানাই! যেমন আজ আপনাকে জানাব! তার আগে বলে রাখি, আমি ব্যক্তিগত ভাবে ডিকনস্ট্রাক্টেড অ্যালকেমিস্টও বটে। তবে আমি সোনা নয়, খাঁটি সর্ষের তেল তৈরি করি। সর্ষে ছাড়া।
- অ। কী বললেন কিছুই বুঝলাম না।
- আমার পাঠানো চেকটা এনক্যাশ করিয়েছেন দেখলাম। কিছু খরচাপাতি করলেন?
- ও টাকায় আমার আগামী বছর পাঁচেকের ঘোরাঘুরির চিন্তা থাকবে না। আমি যাকে বলে প্যাশনেট ট্র‍্যাভেলার!  সামনের বছর মানস সরোবর দেখে আসব ভাবছি।
- টু ব্যাড। টাকাটা তেমন কাজে লাগল না।
- আজ্ঞে?
- আমার বিজনেসের অবিশ্বাস্য মুনাফার মূলে আছে সর্ষের তেল ছাড়া সর্ষের তেল তৈরি। আর সে'টা তৈরি হয়ে ভ্রমণপ্রিয় বাঙালির পায়ের তলা নিংড়ে।
- হোয়াট? কী ননসেন্স!
- মিস্টার মজুমদার! একজন বাঙালির পায়ের তলার সর্ষে নিংড়ে একটা মিল গোটা বছর চলে যায়। প্রসেসটা একটু কম্পলিকেটেড, সামান্য কেমিস্ট্রি আর কিছুটা ক্লেয়ারভয়েন্স। বছরের পাঁচটা বাঙালির পায়ের তলার সর্ষে নিংড়েই আমার দিব্যি চলে যায়। তবে খারাপ লাগে এদের কাউকেই ফেরত পাঠানো যায় না।
- আপনি পাগল!
- তবে এখান থেকে পালানোর চেষ্টা করা আরও বড় পাগলামো। তিনটে বন্দুক আপনার দিকে তাক করা। একটু ত্যান্ডাইম্যান্ডাই করলেই খুলি উড়বে। বরং আপনার পায়ের তলার সর্ষে নিংড়ে নিলে আপনি অন্তত মরবেন না। ফিরতে পারবেন না ঠিকই, তবে প্রাণে মরবেন না।
- আমার পায়ের তলার সর্ষে নিংড়ে নিলে আমার কী হবে?
- আর পাঁচটা বাঙালির যে দশা হয়। পায়ের তলার সর্ষে হারিয়ে আর তারা মানুষ হয়ে থাকতে পারেন না। আনফরচুনেট মেটামরফোসিস। তাঁদের মতই আপনার স্থান হবে আমার ড্রয়িং রুমের রাখা ঝলমলে কাঁকড়ার অ্যাকোয়ারিয়ামে।

Comments

দারুণ লেখা তন্ময়।

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু