Skip to main content

বইমেলাফিকেশন

(পুরনো লেখা)


- দাদা রে, কাল যাবি?


- কোথায়?


- যেখানে যাওয়া উচিৎ। অবিলম্বে। চটপট। তুরন্ত।


- রান্নাঘর? পায়েসের ট্রায়াল মা অ্যালাউ করা শুরু করেছে? 


- উফ। না রে। 


- তা'হলে? অমন মনোহারিণী সুবাসে ঘর ভরে গেছে। তোর ব্রেন পায়েস ছাড়া অন্য কোনও ইনফর্মেশন প্রসেস করতে পারছে রে? 


- দাদা। খাইখাই একটু বাদ দে।  


- তুই ডেঁপোমিটা বন্ধ কর।


- আমার সঙ্গে যাবি কিনা বল।


- কোথায়? শুনি।


- বইমেলা। কাল। প্লীজ।


- কাল টিট্যুয়েন্টি আছে।


- বইমেলা বলে কথা। চ'না, তুই না গেলে আমার যাওয়া হবে না।


- বই? বাড়ির তাকে, বাবার আলমারিতে, তোর স্কুলের আর আমার কলেজের লাইব্রেরীতে, বন্ধুদের শেল্ফে, ফ্লীপকার্টে; চারিদিকে একগাদা বই পড়ে আছে তো। অবশ্য ধুলোবালি আর ভিড়ের ঠ্যালাঠেলি যদি তোর সাইডডিশ হিসেবে দরকারি মনে হয়, তাহলে সেটা আলাদা কথা।


- তুই যাবি না?


- বললাম তো। টিটুয়েন্টি।


- মামা আমায় দু'হাজার টাকা দিয়েছে।


- মামা? তোকে দু'হাজার? আর আমি এক প্যাকেট হজমিগুলি চাওয়ায় গাঁট্টা মারলে?


- তুই তো আর মাধ্যমিকে আমার মত রেজাল্ট করিসনি।


- তুই বড্ড এলিটিস্ট হয়ে যাচ্ছিস। কথায় কথায় অমন বাতেলা ভালো নয়। যাক গে, দুহাজার নিয়ে কী বলছিলিস?


- বলছিলাম তোমায় বইমেলা থেকে ফেরার পথে রোল না হয় আমি খাওয়াবো।


- অত ইজি না চাঁদু। এক আমার এক তোর।


- মামা আমায় ভালোবেসে টাকাটা দিয়েছেন।


- কংসকেই বল তাহলে,তোকে বইমেলা ঘুরিয়ে আনবে।


- বেশ, এক হাজার তোর। কিনিস বই।


- সরি। বইমেলায় আমি বই কিনি না। আমার ফ্লিপকার্ট আর কিন্ডল বেঁচে থাক।


- তবে?


- সোল অফ বইমেলা কী? জানিস তো?


- বই অফ কোর্স।


- কচুপোড়া।


- নয়তো কী?


- বইমেলার প্রাণ ভোমরা রয়েছে বেগুনী আর বেনফিশে। বেশক্। বেফিকর। 


- বেশ। তুই কাল আমার সঙ্গে গেলে আমার ফান্ডের পঞ্চাশ পার্সেন্ট বেগুনিতে আর বেনফিশে। এবার কাটাতে পারবি টিট্যুয়েন্টির মায়া?


- টিট্যুয়েন্টি আবার ক্রিকেট নাকি? টেস্ট ম্যাচ হলে বইমেলা ক্যানসেল করার কথা ভাবতাম। কাল তাহলে দুপুর দুপুর বেরিয়ে পড়ব, কেমন?


Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু