Skip to main content

কাপ্তান


একটা মেয়েকে কারা যেন গুলি করেছিল সে স্কুলে যেতে চেয়েছিল বলে। কিছু মানুষের ধর্মরক্ষা হয়েছিল মেয়েদের স্কুল ভেঙে দিয়ে। কেউ বিপ্লব খুঁজে পেয়েছিল স্কুলপড়ুয়াদের খুন করে।
হাজার ফতোয়া আর সহস্র বছরের দুমড়ে দেওয়া অন্ধকার, এগুলোকে আঁকড়ে কত মানুষের জীবন গুজরান।

আমাদের এই সমস্ত গোঁয়ার্তুমি ফুঁড়ে কয়েকজন বেরিয়ে আসার দুঃসাহস দেখিয়ে ফেলেন। আলোর নেশা বড় খতরনাক, সে নেশায় 'নিয়ম'কে কাঁচকলা দেখিয়ে ফেলেন কয়েকজন।

কাপ্তান মির সেই কয়েকজনের একজন। বা সেই কয়েকজনের একটু বেশি।
সমস্ত 'নিয়ম'য়ের তোয়াক্কা না করে,
স্কুলভাঙিয়েদের কান মুলে
একদল মেয়েকে নিয়ে ক্রিকেট খেলতে নামেন তিনি।

চওড়া কাঁধে একটা দলকে বয়ে নিয়ে যান কাপ্তান। তাঁদের সাফল্যে ভেসে যান তাঁদের হয়ে দুনিয়াকে চ্যালেঞ্জ জানাতে কসুর করেন না। আর সানা মির ভালোবাসেন, খেলাটকে আর তাঁর দলের প্রত্যেকটা মেয়েকে। তাঁদের প্রত্যেকটা চোট আঘাতে ককিয়ে ওঠেন, তাঁদের প্রতিটা মাইলস্টোন নিজের বুকে চেপে ধরেন।

কাপ্তান সানা মির। দল যখন অন্য কারুর অধিনায়কত্বেও মাঠে নামে, তখনও মেরুদণ্ড হয়ে স্পষ্ট হয়ে থাকেন একজনই। সানা মির।

এক মুঠো অন্ধকারে ক্রিকেটের ঝিরঝির আলো ছড়িয়ে দেন সানা মির। দাপুটে জ্বলজ্বলে টেনে নেন আরও কয়েকজনকে। অমন এক কাপ্তান পাশে থাকলে সবকিছু সহজ হয়ে যায়। গান তৈরি হয়, যুদ্ধ থামে। সানা মির কাঁধে হাত রাখলে মুঠো শক্ত হয়। এ দেশে সমস্তটুকুই বারুদ গন্ধে বুঁদ নয়, এখনও সবুজ আছে। এখনও আকাশে আলো। গুলাম ফাতিমা, বিসমা মারুফদের প্রতিটা সাফল্যে সানা মিরের ক্রমাগত উত্তরণ ঘটে চলে।

কাপ্তান সানা মির। যুদ্ধের নয়, ভালোবাসার। আশার। সানা মির শুধু পাকিস্তানের নন। বীরভূমের যে মেয়েটা স্কুল থেকে ফিরেই বাসন মাজতে বসেছে, সানা মির তারও।

#দিলদিলসানামির #দিলদিলকাপ্তান

( বছর খানেক আগে প্রথম পাকিস্তানি মহিলা ক্রিকেটার হিসেবে একদিনের ক্রিকেটে একশো উইকেট আর হাজার রানের 'ডাবল' করেছিলেন  সানা। সেই সময়ের লেখা এ'টা। 
তবে আদত কাপ্তানদের হিসেব স্রেফ নম্বরে হয় কী?)

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু