Skip to main content

বছরটা জলে!

(গত বছর একটি পত্রিকার ওয়েবসাইটের জন্য লেখা)

- এ বছরটাও জলে গেল হে মহামন্ত্রী।
- আজ্ঞে, রাজন।
- এ বছরেও আমার জিমে যাওয়া হল না।
- হল না হে ভুঁড়িন্দ্রনাথ।
-  বড় সাধ ছিল এ বছর ভালো ভালো বই পড়ব। মিনিমাম মাসে দু'টো।
- মেনুকার্ড ছাড়া বিশেষ কিছু আর পড়া হল কই? মহারাজ?
- ভেবেছিলাম দমাদম দামী সিনেমা দেখব।
- দেখলেন হে রাজাধিরাজ, দেখলেন। সর্ষেফুল। খবরের চ্যানেলে, কাগজে। সিনেমাফিনেমার অবসর খবরেরকাগজবাজদের থাকতে নেই।
- ভেবেছিলাম রোজ ভোরে উঠে মর্নিং ওয়াকে বেরোব। ভোর পাঁচটার অ্যালার্ম বেজে ওঠা মাত্রই তড়াং করে লাফিয়ে উঠব।
- স্নুজরাজ, সমহাল কে। সমহাল কে।
- কিস্যু হল না।
- আহা, আহা রে।
- কিন্তু বুঝলে হে মহামন্ত্রী, এ বছর আমি ঘুরে দাঁড়াবই।
- বলছেন? সম্রাট?
- কফি হাউস থেকে এক পিস টেবিল এনে দাও, চাপড়ে প্রমাণ দেব আমি কতটা সিরিয়াস।
- যাবেন? জিমে? নতুন বছরে?
- জিম? ও'সব স্লিম টার্গেটের যুগ শেষ।
- বই সিনেমা মর্নিং ওয়াক? মহারাজ?
- ওয়াক থুঃ!  মারি তো গণ্ডার, লুটি তো বলরাম মল্লিকের ভাণ্ডার।
- ওহ। মেগা রিজোলিউশন? বলুন হে নরেশ।
- মেগার বাবা। এ বছর আমি পরোপকার করব।
- কী বললি বে?
- এ কী মহামন্ত্রী। রাজাকে তুইতোকারি?
- সরি হে বীরশ্রেষ্ঠ। পরোপকার শুনে বুকের ভিতরের পেসমেকার নড়ে উঠেছিল।
- জিম, বই, সিনেমা, মর্নিং ওয়াক। সমস্তই স্বার্থ কেন্দ্রিক।  কিন্তু আমি যে রাজা। দেশের কথা দশের ব্যথা আমি না বুঝলে কে বুঝবে?
- আপনি দেশের দিশা, দশের আশা, হে নৃপতি।
- তবে? আমি দশের হয়ে কাজ করব। অমুকের হয়ে রেশন তুলে দেওয়া। তমুকের সাইকেল রিপেয়ার করিয়ে আনা। এর বাড়ির বাজার করে দেওয়া। ওর কুকুরকে হিসু করিয়ে আনা। দিনভর।
- আহা, আপনি ধন্য মহারাজ। তবে একটাই ইস্যু।
- ইস্যু? পরোপকারে?
- আজ্ঞে সম্রাট।
- কী ইস্যু? পরোপকারে?
- আজ্ঞে ইয়ে...ওই মানে...।
- মানে কী? মন্ত্রী?
- মানে...গিয়ে...ইয়ে...পরোপকার করতে হলে আপনাকে যে ফেসবুক থেকে লগআউট করতে হবে।
- কী বললি শুয়ার?
- এ কী ভাষা দেবতা?
- সরি। ফেসবুক লগ আউট শুনে ব্রেনে অক্সিজেনের সাপ্লাই সামান্য কমে গেছিল। তা, তুমি বলছ  ফেসবুক থেকে লগ আউট না করে পরোপকার করা যাবে না?
- অসম্ভব। নইলে গ্র‍্যাভিটির কন্সেপ্ট যাবে পালটে। নিউটন আপেল গাছের ডালে উঠে মাথা ঠুকবেন।
- দেশের কাজ রাজা করলে দশে করবে কী?
- কাঁচকলা মহারাজ।
- তাছাড়া সুইডেন না সুমাত্রা কোথায় যেন কে পরোপকার করতে গিয়ে টপ করে মারা যায়। মেসোমশাই বলছিলেন আর কী।
- রাজার মেসো। তিনিই মেসিয়াহ্।
- অতএব মহামন্ত্রী, ফেসবুক লগ আউট বাদ। তুমি কাল ভোর পাঁচটার অ্যালার্ম লাগাও। ক্যুইক। কালকেই মর্নিং ওয়াকের শুরু। আর আমার জিমের জুতো জোড়া খুঁজে বার করো দেখি।

Comments

Anonymous said…
Facebook এর মোহ-মায়া তিন বছর হলো ত্যাগ করেছি, ভালোই আছি :D

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু