Skip to main content

কল্পনা যন্ত্র

যন্ত্রটার দিকে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়েছিলেন বিপিনবাবু। কল্পনা যন্ত্র। কালে কালে এও আবিষ্কার হবে তা কে জানতো?

যন্ত্রটা মানুষ সমান লম্বা আর ভেন্ডিং মেশিনের মত চেহারা। সে যন্ত্রের ওপরের দিকে বড় স্ক্রিন। যন্ত্রের কোমরের কাছে একটা ফোঁকর, চিরকুটে যে কোন কল্পনার কথা লিখে সে ফোঁকরে গুঁজে দিলেই স্ক্রিনে ভেসে উঠবে কল্পিত চিত্রপট।
ভাবা যায় না। রোমহর্ষক অনুভূতি যে ঠিক কী, তা জীবনে এই প্রথম টের পেলেন বিপিনবাবু।

প্রথমেই চিরকুটে খসখস করে লিখলেন “ইউনিকর্নে টানা টাঙ্গা” এবং গুঁজে দিলেন যন্ত্রে। ফশ করে কালো স্ক্রিন জ্বলে উঠলো; সেখানে দেখা গেলো দু’টো ইউনিকর্ন একটা পেল্লায় টাঙ্গা টেনে নিয়ে যাচ্ছে ভিক্টোরিয়ার সামনে দিয়ে। একটা ইউনিকর্ন সবুজ রঙের, অন্যটা গোলাপি-নীল চেক চেক

উত্তেজনার লাফিয়ে উঠলেন বিপিন সমাজপতি।
চট করে নতুন চিরকুট টেনে লিখে ফেললেন দ্বিতীয় কল্পনা; পার্কস্ট্রিটে এভারেস্ট। যেই না সে চিরকুট পড়েছে যন্ত্রে; অমনি স্ক্রিন জুড়ে সাদা বরফের মোড়ক, তারই মাঝে টিমটিম করে জ্বলছে পিটার ক্যাটের বেড়াল চোখ আলো।

আনন্দাশ্রুর কথা বিপিনবাবুর জানা ছিল। আনন্দঘাম এই প্রথম এক্সপিরিয়েন্স করলেন।
সাহসও সামান্য বেড়েছে বইকি।

তৃতীয় চিরকুট হাতে নিয়ে খানিকক্ষণ কলম চিবলেন তিনি। এভারেস্ট ইউনিকর্নে কল্পনা আটকে থাকার কোন মানে হয় না। অবশেষে মিনিট চারেক পর অনেক ভেবেচিন্তে লিখলেন
“হাফ প্যান্ট পরা মেয়ে, ঠোঁটে জ্বলন্ত সিগারেট”।

লিখেই কেঁপে উঠলেন বিপিনবাবু। এ কল্পনা সমস্ত সীমানা ছাড়িয়ে গেছে! সমস্তটাই। চিরকুটে লেখার দিকে তাকিয়েই চোখ বুজে ফেলতে ইচ্ছে করছিল তাঁর।
তবু। বুক ভরে লম্বা দু’তিনটে শ্বাস নিয়ে, কপাল ঠুকে কল্পনা যন্ত্রে তিন নম্বর চিরকুট পুরে দিলেন বিপিনবাবু।

তখনই ঘটল ঘটনাটা। মেশিন থেকে গোঁগোঁ শব্দ বেরোতে লাগল আর স্ক্রিন হয়ে গেলো ফ্যাকাসে নীল! গোঁগোঁ শব্দটা ক্রমশ দুম পটাশ ফট আওয়াজে পরিণত হল। বিপিনবাবু বুঝলেন মেশিনটা গরম হতে শুরু করেছে; স্ক্রিনের চারপাশ দিয়ে গলগল করে বেরোতে শুরু করেছে ধোঁয়া।

বিপদ বুঝে সোজা দৌড় লাগালেন বিপিন সমাজপতি। সবে দশ পা এগিয়েছেন; ঠিক তখনই কান ফাটানো বুম্‌ম্‌ম্‌ শব্দে ঘাড় ঘুরিয়ে তিনি দেখতে পেলেন সেই অত্যাধুনিক কল্পনা-যন্ত্র প্রবল বিস্ফোরণে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। মেঝে জুড়ে শুধু ভাঙ্গা কাঁচ, স্প্রিং, ফাইবার আর পোড়া চিরকুটের বিশ্রী গন্ধ।  


Comments

Anonymous said…
সাহস আছে মশাই। দেখছেন জাগতিক উন্নয়ন মাথায় বাজ আছড়াচ্ছে আর আপনি বোধোন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন করছেন?

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু