Skip to main content

দুই ভাই

- দাদা।
- ডিস্টার্ব করিস না।
- আচ্ছা।
- জরুরি কিছু বলার ছিল রে বিলু?
- তেমন কিছু না। ছাড়।
- ডিস্টার্ব করেই ফেলেছিস। বলে ফেল।
- মারা গিয়ে কেমন আছিস?
- বই পড়াটা আটকাচ্ছে না।
- শেল্‌ফ টেল্‌ফ থেকে নামাতে কোন অসুবিধে?
- নান অ্যাট অল।
- বই আছে মানে তো মেজর একটা চিন্তা দূর হল।
- তা হল। তবে কেনায় অসুবিধে রয়েছে।
- ওহ।
- সেটুকু কোঅপারেশন তোর থেকে পাব আশা করছি।
- শিওর।
- তবে তোর কলেকশন মন্দ নয় রে। আগামী ছ'মাস বোধ হয় কোন চিন্তা নেই। তারপর বলে দেব।
- গুড।
- খাওয়া দাওয়া?
- নাহ্‌। সে দরকার হচ্ছে না। জলেরও না। ফলত বাথরুমও যেতে হচ্ছে না। ইন ফ্যাক্ট এইটুকু অ্যানোমালি না থাকলে ভূত হিসেবে নিজেকে অত্যন্ত খেলো মনে হতো বিলু।
- হুঁ। তা, কী পড়ছিস রে?
- একটু আবোলতাবোল পড়ে নিজের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভাবনাগুলোকে কনসোলিডেট করে নিচ্ছি। দিন কয়েক যাক। আচ্ছা, তোর শেলফ থেকে পামুক কেউ ঝেড়ে দিয়েছে রে? অ্যাক্সিডেন্টের দু'দিন আগেও তো দেখেছিলাম।
- তারপর তো বিশেষ কেউ আসেনি বাড়িতে।
- দেখি খুঁজে। ভূত হয়ে একটা সুবিধে হয়েছে রে বিলু। সোফার তল, আলমারির ওপরের তাকের কোণা, যে কোন দিকে সেঁধিয়ে যেতে পারছি অনায়াসে।
- এক্সট্রিম ফ্লেস্কিবিলিটি।
- ফ্লুইডিটি। আর এই যে তুই আমার কথা শুনতে পারছিস, আমায় দেখতে পারছিস, এটাও একটা মস্ত বড় রিলিফ।
- ব্যাপারটা অদ্ভুত। মা তোকে দেখতে পারছে না। বৌদিও না।
- সে'টা প্রথমে খারাপ লেগেছিল। তবে এখন দেখছি এটাই ভালো।
- বৌদির সাথে কথা বলতে পারিস না, ব্যাপারটা অসোয়াস্তিকর লাগে না?
- মনখারাপে সঞ্জীব।  বেঁচে থাকার মতই ব্যাপার।
- দাদা। সিগারেট ধরাব?
- ধরাতে পারিস। বেশ টের পাচ্ছি যে ভূতের ব্যাপারে স্টিরিওটাইপগুলো খাটছে না। আগুনে অসোয়াস্তি এখনও টের পাইনি।
- সিগারেট ধরাতে পারিস কিনা দেখবি?
- ফুসফুস ছাড়া ফুঁকে লাভ নেই।
- তুই পড়। আমি আসি।
- বিলু।
- কিছু বলবি?
- বুক শেল্ফের পাশে একটা রেডিও রেখে যাবি?
- যাবো।
- থ্যাংকস।
- লোভ হচ্ছে।
- মরার লোভ?
- বলতে পারিস। তা ভূতের গলা টেপার টেন্ডেন্সিও কি বাজে স্টিরিওটাইপ?
- বিলু..।
- কেন ন্যাকামি করছিস দাদা?
- সরি। মাথাটা তড়াং করে গরম হয়ে গেছিল...।
- নীলা আর আমার ব্যাপারটা...।
- শাট আপ বিলু। আমার মরার পর মাসখানেকের মধ্যেই  তোদের এই বিশ্রী ইন্টিমেসি...। লজ্জা করে না? তুই আমার সামনে নীলাকে বৌদি না বলে নাম ধরে ডাকছিস?
- ভূতেদের বিশেষ লজ্জা থাকতে নেই বোধ হয়। তোর কী মনে হত রে, তুই না বললে আমি টের পাব না?
- সিগারেট ধরাতে চেষ্টা করছিলিস, ভাবলাম ঠাহর করতে পারছিস না।
- মা আর আমায় দেখতে পারে না।
- অফ কোর্স। মা আর নীলা তোকে দেখতে পারবে কী করে? আমি নিজে তোর গলা টিপেছি।
- নীলা পারে। ও আমায় দেখতে পারে।
- মিথ্যে কথা বলার অভ্যাস তোর গেল না।
- না রে দাদা। নীলা আমায় দেখতে পারে। সে কথা বলে আমার সাথে।
- শাট আপ। তুই আমার সাথে কথা বলতে পারিস কারণ তুই আমারই মত। ভূত। নীলা তোর সাথে কথা বলবে কী করে?
- ভূতের স্টিরিওটাইপে তুই আমার গলা টিপতে পারলে, আমি পারব না?
- কিন্তু তুই সে'টা করবি কেন?
- ওর সঙ্গ ছাড়া আমার চলবে না...আমার এ পাগলামিটুকু ও জানে। গলা টেপাটাও মেনে নিয়েছে।
- রাস্কেল। মিথ্যের গাছ। নীলা যদি তাই হবে সে আমায় দেখতে পায় না কেন?
- পায়। শুধু ধরা দিতে চায় না রে দাদা। ঘেন্না বড় মামুলি চিজ নয়। চলি। রেডিওটা রেখে যাব। মা আজকাল এমনিতেই রেডিও শোনে না, সে বেচারি জ্যান্ত ভূত হয়ে পড়ে রয়েছে এ বাড়িতে।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু