Wednesday, April 6, 2016

অরিন্দম হাজরার ইন্টারভিউ

- আসুন।
- থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।
- দাঁড়িয়ে কেন? বসুন।
- থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।
- আপনিই অরিন্দম হাজরা?
- আজ্ঞে। এমডি ফ্রম টপক্লাস প্লাস্টিক ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড।
- হুম! তা কোম্পানির রেজুমে তো দেখছি বেশ ইম্প্রেসিভ্‌।
- থ্যাঙ্ক ইউ। থ্যাঙ্ক ইউ।
- জব অফারটার বাইরে কিছু বলুন। বিজ্ঞাপন আর রেজুমের বাইরে গিয়ে বলবেন প্লীজ। অ্যাড ভ্যালু টু ইট।
- হেডক্লার্কের পোস্ট।
- প্রশ্নটা মন দিয়ে শুনুন। তাড়াহুড়ো করবেন না। বিজ্ঞাপন আর রেজুমেতে যে ইনফরমেশন দেওয়া আছে, তার বাইরে গিয়ে নতুন কিছু বলুন।
- অফ কোর্স স্যার। অফ কোর্স। আপনি বিকম করেছেন। অনার্স ছাড়া। চার বছর কিছু করেননি। এমন সিচুয়েশনে খুব বেশি লম্ফঝম্পের কাজে আপনার মন নাও বসতে পারে। সেদিক ভেবেই আমাদের টপক্লাস প্লাস্টিক ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির হেডঅফিসের হেডক্লার্ক হিসেবে জয়েন করে আপনার সবিশেষ ভালো লাগবে বলে আমার বিশ্বাস।
- বটে? এলাবোরেট করুন।
- মানে যেমন ধরুন। রোজ দশটা থেকে অফিস। তা বলে সাড়ে দশটায় যদি আপনি পৌঁছন, তার মানে এই নয় যে কেউ আপনাকে ধমক দেবে। তেমন কালচারই নেই আমাদের অফিসে। যদিও আপনার ওপরে আমি ছাড়াও আরও দশ বারোজন সিনিয়র থাকবে, তবু কেউ আপনার মাথার দিব্যি দেবে না যে সাড়ে পাঁচটায় ছুটি মানে সাড়ে চারটেয় বেরোনো যাবে না।
- ইন্টার্ভিউতে বড় বড় কথা অনেকে বলে। কিন্তু কাজের বেলায় অষ্টরম্ভা।
- স্যার আমাদের প্রতিশ্রুতির দৌড় শুধু বায়োডেটা অব্দি নয়। একটি বারের জন্য যদি টপক্লাস প্লাস্টিক ডট ইনে গিয়ে চেক করেন, দেখবেন আমাদের ক্লার্ক ও অন্যান্য কর্মচারীদের কত অমূল্য টেস্টিমোনিয়াল রয়েছে সে'খানে।
- অনলাইন টেস্টিমোনিয়াল আর নেতানো আলুর চপে আমার ঠিক ফেথ নেই।
- হে হে হে।
- আচ্ছা, বেশ। টেল মি মোর। আবাউট দিস রোল।
- কম্পিউটার বেস্‌ড হিসেবকিতেব। ফরম্যাটে ফেলা আছে। আপনি পাঞ্চ করবেন, বাকি কাজ কম্পিউটার করে নেবে। অবিশ্যি, মনোটনি ভাঙতে আমাদের অর্গানাইজেশন সম্পূর্ণ ভাবে কমিটেড।
- কী করে?
- এই যেমন কম্পিউটারে রয়েছে সলিটায়ার গোছের প্রচুর খেলা। গানের ভিডিও।
- ও ভালো কথা, এয়ার কন্ডিশনারের বন্দোবস্ত আছে তো?
- সেন্ট্রালি।
- অনেক ক্ষেত্রে আবার বড় সাহেবদের জন্য এসির হাওয়া বরাদ্দ। আর কেরানীদের কপালের ফ্যানের ঘটর ঘটর।
- কী যে বলেন স্যার!  উই ওয়াক দ্য টক।
- হিসেব টিসেবের বাইরে গিয়ে আবার এই ফাইলটা একটু দেখে দাও, অমুক চিঠি লিখে দাও; এ'সব বলা হয়?
- কক্ষনো না। ভুলেও না। সিনিয়ররা বেশির ভাগ কাজ নিজে খতম করায় বিশ্বাসী। 
- আচ্ছা। বেশ। এবারে একটা সিচুয়েশন দিচ্ছি। ধরুন আমি তিন দিন বলা নেই কওয়া নেই অফিসে আসিনি। আপনি আমায় ফোনে বহু চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারেননি। তিন দিন পর যখন আমি অফিসে এলাম তখন আমি আপনাকে জানালাম আমি পুরী ঘুরতে গেছিলাম। আপনার রেসপন্স কী হবে?
- আমার রেসপন্স?
- কঠিন হয়ে গেল? আচ্ছা বেশ। দু'টো অপশন। এক, আপনি বলবেন যে কাজটা আমি ভালো করিনি। দুম করে অফিসের কাজ ফেলে পুরী ঘুরতে যাওয়া, তাও ইনফর্ম না করে; আমার বেশ অন্যায় হয়েছে। দ্বিতীয়; আপনি আমার শরীরের খবর নেবেন।
- সিক্রেট থার্ড অপশন।
- ইন্টারেস্টিং। সে'টা কী রকম।
- এমপ্লয়ি ডিলাইট ভাবতে হবে। সে'টা ভেবেই আমি বলব যে আপনার মুখ সবিশেষ শুকনো লাগছে। পারলে পরের মাসে দিন তিনেকের জন্য আপনার দার্জিলিং ঘুরে আসা উচিৎ। তেমনটাই রেকমেন্ড করব। ফ্রেশ এয়ার আর কী! ইন ফ্যাক্ট অফিসের গেস্ট হাউসে থাকার ব্যবস্থাটাও অফার করব।
- শার্প।
- থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।
- এবারে মাইনের ব্যাপারটা...।
- আপনি যে'টা বলেছিলেন। সে'টাই।
- বোনাস।
- দু'মাসের বেসিক।
- তিন।
- কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী...।
- এই আপনার ফাইল।
- তিন। তিন মাসের বেসিক ডান।
- আপনার প্রম্পটনেস্‌ আমায় ইমপ্রেস করেছে।
- থ্যাঙ্ক ইউ। থ্যাঙ্ক ইউ।
- চাকরীটা তাহলে স্যার...পাকা রইল?
- সবে তো এপ্রিল। হিমসাগর কে সময় দিন।
- মানে স্যার, আমাদের দরকারটা খুব আর্জেন্ট...।
- ভেবে দেখব। আরও জনা দশেকের ইন্টার্ভিউ নিতে হবে।
- বোনাসটা চার মাসের বেসিক পর্যন্ত ভাবাই যায়।
- তবে ভাবুন। ভাবুন। ভাবা প্র্যাকটিস করুন।

No comments: