Skip to main content

অরিন্দম হাজরার ইন্টারভিউ

- আসুন।
- থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।
- দাঁড়িয়ে কেন? বসুন।
- থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।
- আপনিই অরিন্দম হাজরা?
- আজ্ঞে। এমডি ফ্রম টপক্লাস প্লাস্টিক ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড।
- হুম! তা কোম্পানির রেজুমে তো দেখছি বেশ ইম্প্রেসিভ্‌।
- থ্যাঙ্ক ইউ। থ্যাঙ্ক ইউ।
- জব অফারটার বাইরে কিছু বলুন। বিজ্ঞাপন আর রেজুমের বাইরে গিয়ে বলবেন প্লীজ। অ্যাড ভ্যালু টু ইট।
- হেডক্লার্কের পোস্ট।
- প্রশ্নটা মন দিয়ে শুনুন। তাড়াহুড়ো করবেন না। বিজ্ঞাপন আর রেজুমেতে যে ইনফরমেশন দেওয়া আছে, তার বাইরে গিয়ে নতুন কিছু বলুন।
- অফ কোর্স স্যার। অফ কোর্স। আপনি বিকম করেছেন। অনার্স ছাড়া। চার বছর কিছু করেননি। এমন সিচুয়েশনে খুব বেশি লম্ফঝম্পের কাজে আপনার মন নাও বসতে পারে। সেদিক ভেবেই আমাদের টপক্লাস প্লাস্টিক ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির হেডঅফিসের হেডক্লার্ক হিসেবে জয়েন করে আপনার সবিশেষ ভালো লাগবে বলে আমার বিশ্বাস।
- বটে? এলাবোরেট করুন।
- মানে যেমন ধরুন। রোজ দশটা থেকে অফিস। তা বলে সাড়ে দশটায় যদি আপনি পৌঁছন, তার মানে এই নয় যে কেউ আপনাকে ধমক দেবে। তেমন কালচারই নেই আমাদের অফিসে। যদিও আপনার ওপরে আমি ছাড়াও আরও দশ বারোজন সিনিয়র থাকবে, তবু কেউ আপনার মাথার দিব্যি দেবে না যে সাড়ে পাঁচটায় ছুটি মানে সাড়ে চারটেয় বেরোনো যাবে না।
- ইন্টার্ভিউতে বড় বড় কথা অনেকে বলে। কিন্তু কাজের বেলায় অষ্টরম্ভা।
- স্যার আমাদের প্রতিশ্রুতির দৌড় শুধু বায়োডেটা অব্দি নয়। একটি বারের জন্য যদি টপক্লাস প্লাস্টিক ডট ইনে গিয়ে চেক করেন, দেখবেন আমাদের ক্লার্ক ও অন্যান্য কর্মচারীদের কত অমূল্য টেস্টিমোনিয়াল রয়েছে সে'খানে।
- অনলাইন টেস্টিমোনিয়াল আর নেতানো আলুর চপে আমার ঠিক ফেথ নেই।
- হে হে হে।
- আচ্ছা, বেশ। টেল মি মোর। আবাউট দিস রোল।
- কম্পিউটার বেস্‌ড হিসেবকিতেব। ফরম্যাটে ফেলা আছে। আপনি পাঞ্চ করবেন, বাকি কাজ কম্পিউটার করে নেবে। অবিশ্যি, মনোটনি ভাঙতে আমাদের অর্গানাইজেশন সম্পূর্ণ ভাবে কমিটেড।
- কী করে?
- এই যেমন কম্পিউটারে রয়েছে সলিটায়ার গোছের প্রচুর খেলা। গানের ভিডিও।
- ও ভালো কথা, এয়ার কন্ডিশনারের বন্দোবস্ত আছে তো?
- সেন্ট্রালি।
- অনেক ক্ষেত্রে আবার বড় সাহেবদের জন্য এসির হাওয়া বরাদ্দ। আর কেরানীদের কপালের ফ্যানের ঘটর ঘটর।
- কী যে বলেন স্যার!  উই ওয়াক দ্য টক।
- হিসেব টিসেবের বাইরে গিয়ে আবার এই ফাইলটা একটু দেখে দাও, অমুক চিঠি লিখে দাও; এ'সব বলা হয়?
- কক্ষনো না। ভুলেও না। সিনিয়ররা বেশির ভাগ কাজ নিজে খতম করায় বিশ্বাসী। 
- আচ্ছা। বেশ। এবারে একটা সিচুয়েশন দিচ্ছি। ধরুন আমি তিন দিন বলা নেই কওয়া নেই অফিসে আসিনি। আপনি আমায় ফোনে বহু চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারেননি। তিন দিন পর যখন আমি অফিসে এলাম তখন আমি আপনাকে জানালাম আমি পুরী ঘুরতে গেছিলাম। আপনার রেসপন্স কী হবে?
- আমার রেসপন্স?
- কঠিন হয়ে গেল? আচ্ছা বেশ। দু'টো অপশন। এক, আপনি বলবেন যে কাজটা আমি ভালো করিনি। দুম করে অফিসের কাজ ফেলে পুরী ঘুরতে যাওয়া, তাও ইনফর্ম না করে; আমার বেশ অন্যায় হয়েছে। দ্বিতীয়; আপনি আমার শরীরের খবর নেবেন।
- সিক্রেট থার্ড অপশন।
- ইন্টারেস্টিং। সে'টা কী রকম।
- এমপ্লয়ি ডিলাইট ভাবতে হবে। সে'টা ভেবেই আমি বলব যে আপনার মুখ সবিশেষ শুকনো লাগছে। পারলে পরের মাসে দিন তিনেকের জন্য আপনার দার্জিলিং ঘুরে আসা উচিৎ। তেমনটাই রেকমেন্ড করব। ফ্রেশ এয়ার আর কী! ইন ফ্যাক্ট অফিসের গেস্ট হাউসে থাকার ব্যবস্থাটাও অফার করব।
- শার্প।
- থ্যাঙ্ক ইউ স্যার।
- এবারে মাইনের ব্যাপারটা...।
- আপনি যে'টা বলেছিলেন। সে'টাই।
- বোনাস।
- দু'মাসের বেসিক।
- তিন।
- কোম্পানির নিয়ম অনুযায়ী...।
- এই আপনার ফাইল।
- তিন। তিন মাসের বেসিক ডান।
- আপনার প্রম্পটনেস্‌ আমায় ইমপ্রেস করেছে।
- থ্যাঙ্ক ইউ। থ্যাঙ্ক ইউ।
- চাকরীটা তাহলে স্যার...পাকা রইল?
- সবে তো এপ্রিল। হিমসাগর কে সময় দিন।
- মানে স্যার, আমাদের দরকারটা খুব আর্জেন্ট...।
- ভেবে দেখব। আরও জনা দশেকের ইন্টার্ভিউ নিতে হবে।
- বোনাসটা চার মাসের বেসিক পর্যন্ত ভাবাই যায়।
- তবে ভাবুন। ভাবুন। ভাবা প্র্যাকটিস করুন।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু