Skip to main content

অপটিমিজ্‌মের উপন্যাস



নিবারণবাবু গেলাসের দিকে তাকিয়ে ঘাবড়ে গেলেন।



অপ্টিমিজ্‌ম প্র্যাক্টিস করতে নিয়মিত টাইপরাইটার বয়ে নিয়ে ছাদে উঠে যান অমল সেনগুপ্ত। 



মৃদু খটখট যেটা কানে আসছে সে'টা গেলাসের মধ্যে থেকেই আসছে; নিবারণবাবু নিশ্চিত। 



পাঁচশো বত্রিশ নম্বর "আজ মেঘ করবে" টাইপ করে খানিক থমকালেন অমলবাবু; আর চারশো আটষট্টি লিখলেই ল্যাঠা চুকে যায়। 



খটখটটা ক্রমশ অসোয়াস্তিকর জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছিল;  কড়ে আঙুলে ফতফত করে কান চুলকে চেয়ার ছেড়ে সোজা দেরাজের দিকে হেঁটে গেলেন নিবারণবাবু। 



অল্প মেঘ জমছিল যেন, আচমকা দমকা হাওয়ায় সাফ হয়ে গেল; গজগজ করতে ফের টাইপে মন দিলেন বিকেল রোদে ঘর্মাক্ত অমলবাবু।



এটা কি ভয় না আশা; সে ভাবনায় মশগুল হয়ে না জ্বালিয়েই ঠোঁটের সিগারেট টানতে লাগলেন নিবারণবাবু।



সাতশো বাহাত্তর নম্বর "আজ মেঘ করবে"তে এসেও আকাশে মেঘের কালো দানা না বাঁধায় খানিক দমে গেলেন অমলবাবু; আজও নামবে না কি?

৯ 

"নাহ", ফুঁসে উঠলেন নিবারণ,"বড় কাজ ফেলে রাখতে নেই"; বলে সাহস করে দেরাজ খুলে সলিউশনের শিশিটা নামিয়ে ফের টেবিলে রাখা গেলাসটার দিকে এগিয়ে গেলেন তিনি। 

১০

টাইপিংয়ের স্পিড বাড়িয়ে দিলেন অমলবাবু, আজ দু'এক পশলা না নামালেই নয়। 

১১

দু'চামচ সলিউশন, আধ গেলাস গেলাসে গুলে ঢকঢক করে খেয়ে ফেলা ;এ জঘন্য দুনিয়ায় অনেক হয়েছে- এবার নিবারণ মুক্তি চান। 

১২

আটশো বিরানব্বুই নম্বর "আজ মেঘ করবে" টাইপ করতেই আকাশের এক নিপাট ভালোমানুষ কোণে কালশিটে নজরে পড়লো অমলবাবুর। 

১৩ 

মৃদু খটরখটর শব্দটা গেলাস থেকেই আসছে আর নিবারণবাবুর গা জ্বালিয়ে দিচ্ছে; কিন্তু এখন সময় চুমুকের - সাত পাঁচ ভেবে ধানাইপানাইয়ের নয়। 

১৪

আকাশের কালো উপচে এলো হঠাৎ; ন'শো তেপ্পান্নর মাথায় লাফিয়ে উঠলেন অমলবাবু। 

১৫

চুমুক দেওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তেই নিবারণবাবুর মনে হল যেন খটখট থামলো বোধ হয়; বাঁচা গেল, এবার নিশ্চিন্তে মরা যাবে। 

১৬ 

ঝপাৎ করে বাকি "আজ মেঘ করবে"গুলো টাইপ করে ফেলতে বসে পড়লেন অমলবাবু।


১৭

চুমুক দেওয়ার সময় নিবারণ স্পষ্ট টের পেলেন খটখট বিশ্রী শব্দটা গেলাস থেকে গড়িয়ে তার গলা বেয়ে বুকে নেমে গেল; সলিউশনের সাথে। 

১৮

অপ্টিমিজিমের তাগতে মুগ্ধ হলেন অমলবাবু; তবে ভিজে কাক হওয়ার আগে মাথার ওপর ছাতাটা মেলে ধরা কর্তব্য বলে মনে করলেন তিনি। 

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু