Skip to main content

বিনুর মা

- এহ্ হে।
- কী হল?
- আঙুলের ডগাটা গেল কেটে।
- দাড়ি?
- রেজারে বসানোর আগেই তো...।
- দেখলি তো, কেত দাড়িতে নেই। সরঞ্জামে।
- উফ! বাবা! ফার্স্ট এড বাক্সটা কই?
- ফলস ফার্স্ট এড বাক্সটার কথা বলছিস না গীতবিতান?
- আহ! বাবা। বেশ কেটেছে কিন্তু।

- বস!
- আমায় বস বলে ডাকছ কেন?
-  ডিভোর্স দিয়েছি, বসবাজি ছাড়ার লাইসেন্স দিইনি।
- ন্যাকামো করতে ফোন করলে?
- শোন না!
- কী?
- ডিভোর্সটা বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে।
- শাট আপ।
- আই উইল। কিন্তু তুমি না থাকলে চলছে না।
- এই আদেখলাপনাগুলো বাদ দিলে হয় না? আমাদের ডিভোর্স দু'দিন আগে হয়নি সৃজন। ষোলো বছর কেটে গেছে।
- সো হোয়াট? তোমায় এখনই সবচেয়ে বেশি দরকার। জানো কী কাণ্ড? আজ ফার্স্ট এড বাক্সটাই খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
- তার দরকার কেন পড়ল? কী হয়েছে?
- বিনু আজ প্রথম দাড়ি কামাতে গেছিল, ব্লেড রেজারে  লাগাতে গিয়ে সে রক্তারক্তি ব্যাপার।
- সৃজন, এমন কেন করছ?
- সে কী রক্ত নিভা!
- বিনু নেই। নেই। নেই।
- শাট আপ! শাট আপ! খচ্চর মেয়েছেলে কোথাকার! শাট আপ! শাট আপ!
- সৃজন, শান্ত হও। প্লীজ। প্লীজ।
- যা ভাগ! মর!  মর! মর!

- বাবা! বাবা!
- বি...বিনু....।
- তুমি ফোনের রিসিভারে কী গজরগজর করছিলে?
- মা! তোর মাকে ফোন করেছিলাম।
- বাবা! কেন এমন পাগলামি কর?
- তোর মা ফিরে আসতে চায় না।
- বাবা। মা নেই। মারা গেছে।
- হারামজাদা। চোপ!
- আমাদের ল্যান্ডলাইন কাটা আজ বহুদিন বাবা!
- তোর গলা কেটে ফেলব! বাপ কে মিথ্যেবাদী বলা! রাস্কেল!

সৃজনের চোখ আবছায়ায় ঢেকে যায়। বিকেলের আকাশ তিরতির করে চলে একটানা। নদীটার নাম কী?
নদীর জল কী জ্বলজ্বলে! ঘাসে কী নরম স্নেহ। বোতাম ছেঁড়া জামায় বড় হাওয়া খেলে যায়, বুকে মেঘ মেঘ ছাপ  লেগে থাকে।
যন্ত্রণা সামান্য স্তিমিত হয়ে আসে। দপ্ রাগ ডানা গুটিয়ে অপেক্ষা করে।

অপেক্ষা। রক্ত ধুয়ে যাওয়ার অপেক্ষা।

এ নদীর জল খুন ধুয়ে দেবে? দেবে?
নিভা চলে যেতে চেয়েছিল; ওকে নিয়ে। রাগ হবে না? হবেই।
তবে কি রাগ বেহিসেবি হয়েছিল?
হয়তো, সে খুন তো আর হিসেবের নয়।

ও কে ছিল? বিনু? না বিনি? নিভা জানতে দিল না। রাগ বড় বেহিসেবি হয়ে গেছিল। বড়।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু