Skip to main content

করব লড়ব জিতব




করব

- নাহ্‌! 
- না মানে?
- না মানে না। হবে না।
- হবে না বললেই হল?
- হল।
- তুই রেলের পরীক্ষা কিছুতেই দিবি না?
- না। 
- ভালো চান্স ছিল রে মোহন।
- থাম থাম। ক্লার্কগিরি করে শেষ হব ভেবেছিস?
- আঙুর! টক! এর আগে চার বার দিয়েছিস। 
- তুই দিসনি?
- দিয়েছি। কিন্তু এ তাবিজ পরে দিইনি। আমার মন বলছে এবারে ইন্টারভিউয়ের ডাক পেয়ে যাব। আর তাবিজের কিছু গুণ স্পিল করে তোর কলমেও সেঁধিয়ে যাবে'খন। তাই তো বলছি। এবারের পরীক্ষাটা চ' দিয়ে আসি।
- তুই বিজনেসে আছিস কিনা বল!
- বি...বিজনেস?
- শাড়ি। ধনেখালি থেকে কিনে আনব। বাড়ি টু বাড়ি বিক্রি করব। 
- ফিরি করব?
- বাবার টাকায় বিড়ি খাওয়ার চেয়ে না হয় শাড়ি ফেরি করার টাকায় সিগারেট খাব!
- বাড়ি থেকে কী বলবে রে?
- ডিসকারেজ করবে। আমার বাবার জাত যাবে। 
- মেজদা খিস্তি করবে মাইরি রে। 
- আমার কাছে দশ আছে। তুই পাঁচ দিলেই শুরু করে দেওয়া যাবে। পনেরোর শাড়ি কমসে কম কুড়ি বিক্রি হবে। 
- কুড়ি? পনেরোয় পাঁচ প্রফিট? মাইরি?
- মার্কেট আমার দেখা আছে। মোহন অ্যান্ড শ্যামল'স মোবাইল বুটিক।
- মোবাইল বুটিক। বাহ! বেড়ে বলেছিস তো। 
- বিজনেস। করবি?
- করব!
- ভেবে দেখ। 
- করব। 

**

লড়ব।

- পার্টিকে টাকা দিতে হবে?
-  বিমলদা শাসিয়েছে। নয়তো চামড়া গুটিয়ে নেবে। 
- আমাদের তো দোকানও নেই। ফিরিওলা। 
- দোকান নেই তো কী হয়েছে, পিঠের চামড়া তো আছে। 
- যাহ্‌ শালা!
- আরও নাম দে। হারকিউলিস সাইকেলে কেত মেরে ব্যানার ঝোলাও। মোবাইল বুটিক। 
- বিমলদা কে যদি মাসে আড়াই হাজার দিতে হয় তাহলে হবে কী করে? এদিকে মানুদার বৌ আর অলকা পিসিমা ধারে শাড়ি নিয়ে রেখেছে। 
- পইপই করে বললাম রেলের পরীক্ষাটা দে।
- থাম! থাম! চাকরী চাকরী করে হাভাতেপনাটা একটু বন্ধ কর!  বিজ্‌নেস করতে হলে অমন নেদু হলে চলে না।
- নেদু হলে চলে না? 
- চলে না। 
- রিয়েলি? দম আছে বিমলদাকে টাকা না দেওয়ার?
- এগজ্যাক্টলি। আমরা এগজ্যাক্টলি সে'টাই করব। বিমলদাকে টাকা দেব না। 
- পার্টি ফান্ডে চাঁদা না দিয়ে ব্যবসা করবি?
- করব! আলবাত করব।
- পেঁদিয়ে বৃন্দাবন দেখিয়ে দেবে। ব্যবসা মাথায় উঠবে। 
- ব্যবসা মাথায় উঠবে বললেই হল? আমরা প্রটেস্ট করব। প্রয়োজন হলে পুলিশে খবর দেবে।
- চাঁদার টুয়েন্টি পার্সেন্ট শুনেছি থানায় যায়। 
- ঠিক আছে। তাহলে এমএলএ সদাশিব লাহিড়ীর কাছে যাব। 
- বিমলদা তো সদুবাবুর রাইট হ্যান্ড। 
- বড্ড নেগেটিভ হয়ে যাচ্ছিস তুই দিন দিন শ্যামল। দরকার হলে বিধানসভার কাছে গিয়ে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকব কিন্তু তোলা দেব না।
- তোলা বললে বিমলদা খুব রাগ করে রে মোহন। বল সাবস্ক্রিপশন। ডেভেলপমেন্ট ফান্ডে। 
- তুই এ'সব বেয়াদপি সহ্য করবি? নিজেদের রক্ত জল করা টাকা ওই গুণ্ডাগুলোর হাতে চুপচাপ তুলে দিবি প্রতি মাসে? লড়াই করবি না? 
- লড়াই করব?
- না করলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবি রে? পারবি না। পারবি না। 
- বলছিস?
- বলছি। 
- বেশ। তাহলে চ'। লড়ব। 
- লড়বি তো?
- লড়ব। 

**

জিতব।

- নাহ্‌ রে শ্যামল। তোর তাবিজের দম আছে। 
- বলেছিলাম। ফিফ্‌থ টাইম লাকি। তাবিজটায় চুমু খাবি একটা? =
- এবার ইন্টারভিউটা ক্র্যাক করতে পারলেই সিকিওরড লাইফ। দশটা পাঁচটা। দু'বছরের মাথায় বিয়ে। 
- ক্র্যাক করব। করবই। দু'জনেই। 
-  ক্র্যাক করলেই জিত। 
- জিতব। 
- জিতব রে। জিতব।  

Comments

Unknown said…
বাস্তবতা ।।। অসম্ভব ভালো লাগলো দাদা।। ☺
Unknown said…
বাস্তবতা ।।। অসম্ভব ভালো লাগলো দাদা।। ☺

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু