Skip to main content

পেয়ারেলালের নিলাম

- নাম?
- পেয়ারেলাল।
- পেয়ারেলাল কী?
- পেয়ারেলাল। ব্যাস। 
- পদবী?
- ভূতের আবার পদবী!
- আচ্ছা বেশ। বয়স? 
- জন্ম থেকে না মৃত্যু থেকে?
- অকশনের কোয়ালিফিকেশন রুল্‌স দেখা আছে কি নেই?
- গরীব ভূত। চাষা  ভূত। নিয়ম কানুন দেখালে হবে স্যার?
- দশ বছরের বেশি পুরনো মড়া হলে চলবে না।
- আমার ওই বছর সাতেক হয়েছে। 
- আঁধার কার্ড দেখি?
- এই যে।
- হুঁ। ঠিক হ্যায়। 
- আজ্ঞে, নিলাম ডাকা ক'টা থেকে শুরু? 
- এই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শুরু হবে। ক্রেডেনশিয়ালস্‌ কই?
- আজ্ঞে?
- চাষাদের নিয়ে এই অসুবিধে। নিয়মকানুন পড়ার ক্ষমতা নেই অথচ এদের ভূতদের নিয়েই অকশন। শুনুন, আমি যে'টা বলছি; মানে, আপনার ক্ষমতার লিস্ট চাই! তুকতাকের দম কতটা! ভেল্কি দেখানোর ক্ষমতা কতটা! সে ফর্ম ফিল আপ করা আছে?
- মরার আগে টিপ সই দিতাম। 
- আচ্ছা বেশ। আপনি বলে যান। আমি টুকে নিচ্ছি। 
- বঢিয়া।
- তার আগে বলে দিই এ নিলামে আপনাকে কে কিনবে সে খবর  রাখেন তো?
- সে'সব জানি। আইপিএলের আটটা টিম ভূত কিনবে। চাষাদের ভূত। টিমকে জিততে সাহায্য করতে হবে। আর অপনেন্ট কে গুলিয়ে দিতে হবে। 
- কারেক্ট। এবারে বলুন। ব্যাটসম্যানদের সাহায্য করতে কী কী পারবেন আপনি? ব্যাটে ঢোকার ক্ষমতা আছে? ব্যাটে ঢুকে ভেল্কি দেখানোর?
- বিলকুল আছে। 
- ভেরি গুড।
- বলে ঢুকে বোলারদের হেল্প করতে পারবেন?
- বিলকুল। 
- ভেরি ভেরি গুড। আপনার বেস্‌ প্রাইস ওপরের দিকেই থাকবে।
- অপোনেন্ট ব্যাটসম্যান বা বোলারদের ব্যাটে বলে ঢুকে থাকা ভূতদের সঙ্গে কুস্তি করতে পারবেন?
- জরুর। 
- চমৎকার। আর ইয়ে। হাওয়ায় ভেসে গিয়ে মাঠ জুড়ে ছোট ইয়ে করে আসতে পারবেন? অপোনেন্ট বোলিংকে ডিউ প্রবলেমে কিস্তি মাত করার জন্য?
- ছোট ইয়ে? সে'টা কী সাহেব?
- ছোট বাথরুম।
- পেচ্ছাপ?
- আহ্‌! রাস্টিক ভাবে বলবেন না প্লীজ। প্লীজ। ইয়ে, পারবেন?
- ভূত হয়ে সে ক্ষমতা বহুত বেড়ে গেছে।
- যাক গে। ব্রিলিয়ান্ট। 
- পিচে থুতু ফেলে স্যুইংয়ে অ্যাসিস্ট করতে পারবেন?
- যেখানে বলবেন সেখানেই। থুতুই তো। ভূতদের বাছবিচার নেই ও'সবে। 
- বাহ্‌! সবেতেই তো টিক পড়ল। আপনাকে নিয়ে বেশ টানাটানি হবে। বুঝতেই পারছি। তাহলে বেস প্রাইস কত রাখা যাবে আপনার?
- বেস কী? 
- বেস প্রাইস! যার জন্যে আপনি নিলামে হতে এসেছেন।
- শুনলাম জল পাওয়া যাবে। 
- অফ কোর্স যাবে। ধরুন আপনার বেস প্রাইস যদি কুড়ি হাজার লিটার জল হল! আর তার মাথায় ডাকাডাকি করে ধরুন গিয়ে সে প্রাইস গিয়ে ঠেকলো তিরিশ হাজার লিটার জলে; তো সেই পরিমাণের জল আপনার ফ্যামিলির কাছে পৌঁছে দেবে সেই টিম যে আপনাকে কিনবে।
- যাক। মরে একটা কাজের কাজ হল। প্রতি বছরই এ নিলাম হবে তো?
- অফ কোর্স। চাষা ভূতদের অকশনটা প্রতি বছরই হতে চলেছে।
- তিরিশ হাজার লিটার জল। অনেক না?
- অনেক মানে? ভাবতেও পারবেন না। 
- গম ফলবে তাহলে? 
- বিলকুল। 
- ছেলেটাকে সামনের নিলামে তাহলে আর এখানে দেখতে হবে না হয়তো। এটা ভালোই হল। 
- ওহ। ইয়ে। যাক গে। এইখানে একটা টিপসই প্লিজ।  

Comments

Anonymous said…
ছিঃ ছিঃ। সা্রকাসের আঙিনায় তেরঙ্গার পত্ পত্ বন্ধ করার প্রয়াস মোটেও কাম্য নয়।
আপনার লেখাগুলি বেশ সুন্দর। ভালো লাগলো।

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু