Skip to main content

হেঁয়ালি

- কে? 
- আমি ছাড়া আর কে আছে যে কড়া নাড়বে?
- সারকাজ্‌ম বড় দ্রুত রপ্ত করেছ দেখছি।
- যা বিশ্রী গরমে রেখেছেন। ফুরফুরে মেজাজে কথা বলার উপায় আছে?
- কই! দাঁড়িয়ে কেন! বস!
- বসতে আসিনি।
- বসতে আসনি?
- আজ্ঞে না!  কাজে এসেছি। 
- কাজ? আমি তো জানি তুমি কাজ নেই বলে সর্বক্ষণ শশব্যস্ত থাক!
- মেজাজটা গরম করে দেবেন না মাইরি। আপনি তো সর্বক্ষণ আপিসঘরে বসে খুটখাট করে যাচ্ছেন। এই খাতায় হিসেব করছেন, তো পরক্ষণেই ল্যাবরেটরিতে গিয়ে খুচুরখুচুর। এই জাদু প্র্যাক্টিস করছেন তো তারপরেই আঁক নিয়ে বসে গাল চুলকে সাফ করছেন। এদিকে যত ঝামেলা তো আমার। 
- ঝামেলা আবার কীসের? দিব্যি খাচ্ছ, ঘুমচ্ছ! ঝামেলা আবার কীসের?
- ঝামেলা তো সেখানেই। শুয়ে বসে খেয়ে আর কদ্দিন সোয়াস্তিতে থাকা যায়। আমি তো আর আপনার ওই বাঁদর বা পুঁইলতা নই। মাথায় বুদ্ধি কিলবিল করছে অনবরত। 
- বুদ্ধি?
- বুদ্ধি। হাতে গরম। যখন তখন একটা কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারি। অথচ ঘটাতে পারছি না। এমন যন্ত্রণা নিয়ে টিকে থাকাটা কী মামুলি?
- না। মামুলি নয়। তবে তোমায় আমি একটানা হেঁয়ালি সরবরাহ করে চলেছি তো। অনবরত নতুন নতুন জবরদস্ত সব হেঁয়ালি তৈরি করে তোমায় সাপ্লাই দিয়ে চলেছি। মগজ ভোঁতা হওয়ার তো চান্সই নেই। 
- হেঁয়ালি! সাপ্লাই!। বাজে বড়াই করবেন না। ভারী আমার সুডোকু, ক্রসওয়ার্ড, ধাঁধা সাপ্লাই করছেন। পাতি। পাতি। 
- আমি তো জটিল করার আপ্রাণ চেষ্টাই করি। 
- ধুর ধুর। আজকাল সুডোকু সল্ভ করি ঘুম আনার জন্য। ক্রসওয়ার্ড -ফ্রসওয়ার্ড তো বাজে সময় নষ্ট। তার চেয়ে ঘাস গোনা সহজ। আর দোহাই দাদা, ওই বস্তাপচা ধাঁধাগুলো দেওয়া বন্ধ করুন। কোয়াড্রাটিক ইকুয়েশনের মত জলবৎ হয়ে যাচ্ছে সবকিছু। ধুর ধুর। জীবনে অভক্তি ধরে গেল। 
- ইয়ে, গতকাল যে ট্যানগ্রামগুলো দিলাম? আল্ট্রা ডিফিকাল্ট লেভেলের?
- আর বলবেন না। সেগুলো তো ভুলে সল্ভ করে ফেলেছি। 
- ভুলে?
- মানে সল্ভ করতে চাইনি। মনকে বোঝাতে চেয়েছি; সল্‌ভ করিস না বাবু, সল্ভ করিস না। এগুলোও সল্ভ করে দিলে কাল সকালে কী হবে? কিন্তু না। চেষ্টা করেও পারলাম না। ভারী সহজ। এত সহজ যে দেখলেই গা গুলোয়। 
- এ তো মহা ফাঁপরে পড়া গেল। 
- শেষ নাকি? হেঁয়ালির স্টক?
- না না। ভয় পেয়ো না। ভয় পেয়ো না। হেঁয়ালি আছে। জব্বর এক হেঁয়ালি আছে। 
- রাখুন মশাই আপনার জব্বর হেঁয়ালি। আড়াই হাজার খোপের ক্রসওয়ার্ড। তার বেশি কিছু তো নয়। 
- আরে না না। এ খতরনাক। 
- ধুর ধুর। হাতি ঘোড়া গেল তল, ক্যালকুলাস বলে কত জল। 
- আরে না রে বাবা। এ ধাঁধা তোমার দাঁত ভেঙ্গে দেবে। 
- হেহ্‌! হাসালেন মাইরি। এই বাতেলা মারার অভ্যাসটা এবার ছাড়ুন। 
- সত্যি বলছি। এ জীবনে সে হেঁয়ালিতে দাঁত বসাতে পারবে বলে মনে হয় না। 
- ফের বাতেলা। ধুস। আমি আসি। 
- হেঁয়ালিটা দেখবে না?
- এটা কী? ফিফ্‌টিন স্লাইডার গোছের কিছু ন্যাকামি?
- বললাম যে। তোমার হেঁয়ালির শখ ঘুচিয়ে দেওয়ার হেঁয়ালি। 
- অনেক ফটফট করেছেন। কই দেখান। কোথায় সে হেঁয়ালি। নতুন কিছু হলে তো মন্দ নয়। 
- পাশের ঘরে। জানালাটা খোল।
- ঘরের মধ্যে হেঁয়ালি?
- আহ! জানালাটা খোলই না। 
- অগত্যা। 
- দেখলে?
- ও...ও...ও'টা কী?
- ও'টা কী নয়। বল ও কে! 
- ক...কি...কো...মানে...কে ও?
- ও'র নাম ইভ। দেখ দিখি অ্যাডামবাবু; সল্ভ করতে পার কী না।

Comments

Anonymous said…
UNMATCHED, STILL CANT BE MATCHED WITH UR OTHERS.

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

ব্লগ-বাজ

আর চিন্তা নেই । বাঙালিকে আর রোখা যাবে না । আর সামান্য (সম্ভবত কিঞ্চিত গোলমেলে ) কবিতা ছাপাবার জন্যে সম্পাদক কে তোল্লাই দিতে হবে না । আর প্রেমে লটরপটর হয়ে ডায়েরি লিখে প্রাণপাত করতে হবে না। পলিটিক্স কে পাবলিক-জন্ডিস বলে গাল দেওয়ার জন্য আর “প্রিয় সম্পাদক” বলে আনন্দবাজারের ঠ্যাং ধরতে হবে না। কেন ?  হোয়াই? বাঙালি ব্লগিং শিখে গ্যাছে যে। ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে শাণিত তলোয়ারের মত “ পোস্ট”-সমূহ জনতার ইন্টেলেক্ট এসপার-ওসপার করে দেবে ; হাতে-গরম গায়ে-কাঁটা। বাঙালি মননের নব্য জিস্পট ; ব্লগ-স্পট । কে বলে যে বাঙালি ব্রিগেডে বুক্তুনি দিয়ে আর ফুটবল মাঠে খেউড় করে খতম হয়ে গ্যাছে ? কে বলে যে বাঙালির ঘিলু কফি হাউসে ভাত ঘুমে মগ্ন ? বাঙালিকে একবার ব্লগখোর হতে দিন , সমস্ত অভিযোগ ভ্যানিশ হয়ে যাবে । পোপ থেকে পরশুরাম ; ডেঙ্গু থেকে মশাগ্রাম ; বং-ব্লগের দাপট রইবে সর্বত্র । বাঙালির সমস্ত আশা-ভরসা-জিজ্ঞাসা এইবারে ব্লগ মারফত্‍ পৌছে যাবে ট্যাংরা ট্যু টেক্সাস । তোপসে মাছের স্প্যানিশ ঝোলের রেসিপি কী ? বাঙাল-ঘটি মিল মহব্বত-হয়ে গেলে কি বাঙ্গালিয়ানা চটকে যাবে ? নেতাজী কি এখ

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু