Skip to main content

মাঝমাসের হিসেব

সমস্ত খারাপ।
সমস্ত ভালো।
তার মাঝে অন্ধকার।
অন্ধকারে মধ্যিখানে হ্যারিকেনের অল্প হলুদ আবছায়া।
আবছায়াকে চাদর করে জড়িয়ে ধরে দু’জন।

-   হাতে কত আছে?
-   পাঁচশো বত্রিশ।
-   ব্যাঙ্কে?
-   আড়াই মত।
-   আজ চোদ্দ। মানে আরও সতেরো দিন।
-   মুদি পায় সাড়ে সাতশো।
-   ক্যালামিটি। ক্যালকুলেটর বের করো।
-   ব্যাটারি শেষ।
-   ডায়েরিতে লেখো।
-   ডট পেনটা লিক্‌ করেছে।
-   উফ। মুখে হিসেব রাখো।
-   মেন্টাল ম্যাথ? আমি? দীপক চ্যাটার্জি? মাধ্যমিকে বেয়াল্লিশ আর উচ্চমাধ্যমিকে বাহান্ন?  
-   অসহ্য। মুদি সাড়ে সাতশো। ধোপা দেড়শ। ইলেকট্রিক বিল সাড়ে ছ’শো। মানে সব মিলে সাড়ে পনেরোশো।
-   ঈশ। লোডশেডিং আরেকটু বেশি হলে বিল আরেকটু কম হত।
-   উফ্‌।
-   তোমার নাম উফ্‌কুমারী দিলে ল্যাঠা চুকে যেত।
-   এরপর আর কী রইল?
-   আমার বাস। তোমার অটো। দু’টো মিলে সাড়ে তিনশো।
-   কী হবে বাবু?
-   মুর্গি বাদ। সে’টা অবশ্য গুড নিউজ। চোয়াল দুদণ্ড জিরোতে পারবে। কাতলাটাও মনে হয় গেল, তাই না?
-   খিচুড়ি আর ফ্যানাভাত। অল্টারনেট্‌লি। আলুসেদ্ধ। ডিমের অমলেট।
-   হাঁসের?
-   নাহ! গরম পড়েছে। দাম বেশি। তাতেও টেন পার্সেন্ট পচা বেরোবে।  
-   ঘিয়ের স্টেটাস কী?
-   এ মাস কুলিয়ে যাবে।
-   তবে আর কী।তোফা! তবে গিয়ে ইয়ে, টোটাল কত দাঁড়াল?
-   উনিশশো।
-   ক্যাশ আর ব্যাঙ্ক মিলে প্রায় তিন হাজার। মানে হাতে রইবে এগারোশো।
-   আনাজপাতি?
-   কত?
-   মিনিমাম পাঁচশো।
-   সর্বনাশ। হাতে রইবে সাড়ে ছ’শো।
-   সাড়ে ছ’শো না। দেড়শ।
-   এই তুমি অঙ্কে লেটার? থ্রি থাউজ্যান্ড মাইনাস ইলেভেন হান্ড্রেড মাইনাস ফাইভ হান্ড্রেড।
-   মাইনাস আনাদার ফাইভ হান্ড্রেড করো।
-   ওহ! চটি? পর্দা?
-   ইডেন। উনিশে।ভার্সেস পাকিস্তান। পাঁচশো।
-   পাঁচশোয় জোড়া টিকিট? ধুস।
-   তুমি দেখে এসো।
-   পতির পুণ্যে সতীর ইয়ে?
-   ছড়িও না। ডার্বি থাকলে আমি যেতাম।
-   ফুটবল কোন খেলা হল গো?
-   বাঙাল শালা। কী বুঝবে তুমি ফুটবলের?
-   আমি ফুটবলের অবশ্য তেমন খবর রাখি না। তবে ইস্ট বেঙ্গল মোহন বাগান হেড কাউন্টটা সব সময় পকেটে নিয়ে ঘুরি। ঘটি-হেড গিলোটিনে দিতে সুবিধে।
-   তোর হচ্ছে!
-   তুই? তুমির প্ল্যান শেষ? রিসল্ভ্‌ খতম? মোহনবাগানের এই এক দোষ। অল্পে ডিস্‌ব্যালান্স হয়ে যাওয়া।
-   এই যে। ব্যাল্যান্স সম্রাট! হাত পা ব্যাল্যান্স না করতে পেরে দিলেন হ্যারিকেন উলটে। নতুন কাঁচ কুড়ি টাকা, পনেরো টাকার কেরোসিন।

অন্ধকার এক মুঠোর বালির মত ছড়িয়ে পড়ে চোখে নাকে মুখে।
ছেঁড়া পর্দা সামান্য লজ্জায় জানালার বাইরে ঘুরে তাকায়। হাওয়া অল্পই।
“আমায় ছেড়ে যাবি না তো দীপু?”র অপ্রয়োজনীয় আবদার ঢেউ হয়ে ঘরময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। সমুদ্র স্ফীত হয়। স্বর্গদ্বার কলকাতার ঘুপচি খুঁজে নেমে আসে। ঘরের স্যাতলা পড়া গন্ধ ছাপিয়ে; শ্মশান-রাতের মিঠে হাওয়া ঘুরপাক খেয়ে আছড়ে পড়ে দীপক চ্যাটার্জীর বোতাম খোলা ফতুয়া-কবচে। 

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

ব্লগ-বাজ

আর চিন্তা নেই । বাঙালিকে আর রোখা যাবে না । আর সামান্য (সম্ভবত কিঞ্চিত গোলমেলে ) কবিতা ছাপাবার জন্যে সম্পাদক কে তোল্লাই দিতে হবে না । আর প্রেমে লটরপটর হয়ে ডায়েরি লিখে প্রাণপাত করতে হবে না। পলিটিক্স কে পাবলিক-জন্ডিস বলে গাল দেওয়ার জন্য আর “প্রিয় সম্পাদক” বলে আনন্দবাজারের ঠ্যাং ধরতে হবে না। কেন ?  হোয়াই? বাঙালি ব্লগিং শিখে গ্যাছে যে। ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে শাণিত তলোয়ারের মত “ পোস্ট”-সমূহ জনতার ইন্টেলেক্ট এসপার-ওসপার করে দেবে ; হাতে-গরম গায়ে-কাঁটা। বাঙালি মননের নব্য জিস্পট ; ব্লগ-স্পট । কে বলে যে বাঙালি ব্রিগেডে বুক্তুনি দিয়ে আর ফুটবল মাঠে খেউড় করে খতম হয়ে গ্যাছে ? কে বলে যে বাঙালির ঘিলু কফি হাউসে ভাত ঘুমে মগ্ন ? বাঙালিকে একবার ব্লগখোর হতে দিন , সমস্ত অভিযোগ ভ্যানিশ হয়ে যাবে । পোপ থেকে পরশুরাম ; ডেঙ্গু থেকে মশাগ্রাম ; বং-ব্লগের দাপট রইবে সর্বত্র । বাঙালির সমস্ত আশা-ভরসা-জিজ্ঞাসা এইবারে ব্লগ মারফত্‍ পৌছে যাবে ট্যাংরা ট্যু টেক্সাস । তোপসে মাছের স্প্যানিশ ঝোলের রেসিপি কী ? বাঙাল-ঘটি মিল মহব্বত-হয়ে গেলে কি বাঙ্গালিয়ানা চটকে যাবে ? নেতাজী কি এখ

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু