Skip to main content

কোহলিয়

সুইসাইড নোটে 'তোমরা ভালো থেকো আমি চললাম' বা 'এ দায় কারুর নয়' গোছের কথা লেখা কী বোরিং।

তাই ভেবে সদ্য লেখা চিরকুটটা দলা পাকিয়ে ওয়স্ট পেপার বাস্কেটে ছুঁড়ে ফেললেন সমরবাবু।

নতুন করে লেখা শুরু করলেন;

"
অনু,

সমস্ত প্ল্যান মাফিক চলছিল। সমস্তই। জীবন ইডেন গার্ডেন্স। উচ্ছল।  প্রানবন্ত। হুজুগে। প্রেমের পাকিস্তানকে ব্যাট করতে পাঠিয়ে শুরুতেই শায়েস্তা করে ফেলেছিলাম। এরপর টুকটুক ব্যাটিংয়ে সে পাতি টার্গেট চেজ করে বিয়ের পিঁড়ি পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল। ওই যেমনটা থাকে আর কী। কেক-ওয়াক। হাতের মোয়া গোছের।

গড়বড় করে দিলে টপাটপ তিনটে বাজে উইকেট, থুড়ি তিনটে খুব অসভ্য গোছের ঝগড়া। আচমকা সন্দেহের জুজুতে কাঁপিয়ে দিয়েছিল পিলে-পিচ। অকারণ স্পিনের ভয় আর অকারণ সন্দেহর খোঁচা; একইরকম বিষাক্ত।

তখন। ঠিক তখনই আমার বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোর কথা ছিল। কাঁধে হাত রেখে বলার কথা ছিল 'ধুর বোকা, তোমার রাগ আমার লক্ষ্মী।  ঝগড়াকে ডরাই ভেবেছ? সব ধুইয়ে মুছিয়ে দেব। সমস্ত সইয়ে নেব। যেওনা প্লীজ। তুমি গেলে সব শেষ। থাকো। থাকো'।

বলা হল না। হল না। ভেসে যাওয়া আটকানো হল না। আমার বিরাট কোহলি হওয়া হল না।

চলি। প্রেসেন্টেশন সেরিমনিতে যদি আসো, তাহলে ওই সবুজ সিল্ক চাপিয়ে এসো। প্লীজ। কেমন? হালকা লিপস্টিক আর কাজল, এর বেশি কিছু হলেই মাখিয়ে একাকার করে ফেলো।

ইতি সমর"।

চিঠিটা বার তিনেক পড়ে নিশ্চিন্ত হলেন সমরবাবু।

পড়ার টেবিলের ড্রয়ার থেকে গত মাসের স্পোর্টসস্টারটা বের করে সে'টাকে হাত পাখার মত করে ধরে হাওয়া করতে শুরু করলেন; আচ্ছা লোডশেডিংয়ের খপ্পরে পড়া গেছে - ধুস।

Comments

D.Maiti said…
Onek din dekha nei, Ki bapar bhai ? Berate gelen naki??
Berate gele bhaloi... ghure asun chokh, kan, nak, jiv er natun oviggotay samridhho hoe... ar amrao opekhha kori ei sober nirjas kakhon apnar pen die jhore porbe...
:)

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু