Skip to main content

গুড ফ্রাইডে

- আপনিই মিত্রা?
- ডু আই নো ইউ?
- না। তবে আলাপে দোষ নেই। আমি মিহির।
- আমার নামটা তো জানা আছে দেখছি।
- আসলে 'মদির আঁখির সুধায় সাকি' নারী কণ্ঠে আগে শুনিনি। এমন ভাবে মানিয়ে যাবে ভাবতেও পারিনি। 
- এ'সব পার্টিতে যে ভাবে মদক্ষয় হয়, সম্বিৎ টিকিয়ে রাখা বড় সহজ নয়। কী গাইতে যে কী গেয়ে ফেলেছি।
- বেশ তো ভাসিয়ে নিলেন।
- স্কচ যে'ভাবে ফোয়ারায় ছুটছে, কিছু কি আর ভাসিয়ে নেওয়ার জন্য বাকি ছিল?
- নজরুলগীতির ব্যাপারে আমি অবশ্য টিটোটল্যার নই। 
- যা হোক। কারুর তো কানে গেছে গানটা। 
- পিলু মিশ্র। কাহারবা। মেজাজে পাতিয়ালা। কানের দোষ কোথায় মিত্রাদেবী।
- কথায় তো বেশ নিট আপনি মিহিরবাবু। 
- এবার বরফ মেশাই। 
- মেশান। 
- আপনার আসল নাম তো হান্সা। তাই না? 
- মাই মাই মাই...আপনি কি গোয়েন্দা?
- শেঠ ভগওয়ান দাসের এক মাত্র কন্যা। এ দেশের সবচেয়ে ধনী মানুষের একমাত্র উত্তরাধিকারিণী। 
- নেশা ছুটিয়ে দিলেন। এ কথা গোপনে রেখে ঘুরতে চাই বটে, তবে কেউ জানলে ক্ষতি নেই। বাবা ভয় পায়, আমি পাই না। 
- ভয় পান না?
- না মিহির।
- ভয় পাওয়া উচিৎ। 
- জানি। 
- কী জানেন?
- জানি আমার প্রাণের ঝুঁকি আছে। অ্যাই, মিহিরবাবু, আপনি আমায় খুন করতে এসেছেন?
- আমি গোয়েন্দা। মার্ডারার নই। 
- ওহ। 
- তবে। মার্ডারারের টোপ আমি হান্সা। তিরিশ পেয়েছি। আপনাকে খুঁজে বের করার জন্য। গত ছয় মাস ধরে খুঁজে বেড়াচ্ছি। আজ পেয়েছি। এবার আমার কাজ শুধু একটি সৌজন্য চুমু আপনার গালে বসিয়ে দেওয়া। পাঁচটা স্নাইপার এই ওপেন এয়ার পার্টি তাক করে বসে আছে এ বাগানের চারিপাশে। আমি চুমু স্থাপন করলেই খুনি বুঝে যাবে তাদের টার্গেট কে। মিনিট কয়েকের মধ্যে আপনি ঝাঁঝাঁরা। 
- স্মুদ।
- ভয় করছে?
- আমার ভয় করে না। কতবার বলব?
- ওহ, তাই তো। 
- কিন্তু কী মুশকিল। আপনি আমায় বলে দিলেন কেন প্ল্যান? আমি যদি গালে চুমু খেতে না দিই? যদি আপনাকে ধরিয়ে দিই?
- আমিও ভয় পাচ্ছি না আপাতত। 
- রিয়েলি? হোয়াই?
- হান্সা। 'মঙ্গালস ও আঁখি তব, সাকি, দিল দোলা প্রাণে'।
- এহ! এ গানের সবচেয়ে পাতি লাইন তুলে শেষ পর্যন্ত ফ্লার্ট করছেন মিহির?
- হেহ্‌। 
- যদি চুমু খেতে না দিই মিহির? অন্য সিগন্যাল দেবেন?
- যদি কোন সিগন্যালই না দিই হান্সা?
- সে কী! এতগুলো টাকার কাজ পেয়েছেন। ছেড়ে দেবেন?
- 'গোলাবী গুলের নেশা, ছিল মোর ফুলেল কাননে'।  
- আর পরের লাইনটা? পরের লাইনটা মিহির? 'শুকায়ে গিয়াছে ফুলবন,  নাই গোলাব গুলিস্তানে'। 
- হান্সা। থাক। আমি আসি। 
- চুমু বাদ দিয়ে চললেন নাকি? ও মা! যাদের কাজ হাতে নিয়েছেন, তাদের গোঁসা হবে না?
- আসি।
- যাবেন না। 
- সে কী! কেন!
- সবাই বঢিয়া বলে। বহুত খুব বলে। প্লেব্যাকের অফার পাওয়া উচিৎ বলে ঢলে পড়ে। পিলু মিশ্র, কাহারাবা, পাতিয়ালা বলে পাশে আসে না। যাবেন না মিহির। 
- যাহ! আচ্ছা মুশকিল। বললাম তো, আমি স্নাইপারদের টোপ। আপনার কাকার লাগানো গোয়েন্দা আর স্নাইপার। আমি চলি। আপনিও চটপট বেড়িয়ে পড়ুন। বেশি কাছে আসবেন না বরং। 
- মিহির, 'জানি আমি তোমার কাছে, ব্যথা ভোলার চুমু আছে- হিয়া কোন আমিয়া যাচে, জান তুমি, খোদা জানে'। রুকো। যেও না।
- ব্যথা ভোলার দারুর বদলে চুমু? বাজে হান্সা। বেশ বাজে। 
- তোমায় গালে চুমু দিতে দিই কী করে বলো? গালে নয়। গালে নয়। 
- হান্সা। আপনি নেশাগ্রস্ত। ছাড়ুন। 
- যেও না মিহির। গালে না। ঠোঁটে। তারপর স্নাইপ করুক ওরা। আর পারা যাচ্ছে না। আমি মিত্রা নই, হান্সা। এতবার হান্সা বলে কদ্দিন কেউ ডাকে না। আমি মিত্রা নই। মিত্রা হাসে বোকার মত। হান্সা গায়। সবুজ সুর। ভোর মাখানো কথা। গানে ভিজে মাটির গন্ধ। হান্সা মিহির। হান্সা। 
- পাগলামি সে'টা। 
- আমায় মুক্তি দাও জুডাস। মুক্তি দাও। চুমু দাও। আজ শুক্রবার। মেক দিস আ গুড ফ্রাইডে ফর মি মিহির। বি মাই জুডাস। মুক্তি দাও। মুক্তি দাও। মুক্তি দাও। কিস্‌ মি।  

হান্সার শেষ চুমুতে গুনগুন মিশে ছিল;  
'সকলই গিয়াছে যখন, যাক ঈমান শরাব পানে'।   



Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু