Skip to main content

মন্মথ ও অমল



চায়ের কাপটা সামনের টেবিলে নামিয়ে রাখলেন মন্মথ। এবার যাওয়ার সময়। এবার বিকেল। 
অমল দরজার পাশে দাঁড়িয়ে। তার কাঁধে মন্মথের ব্যাগ। বুক পকেটে টিকিট। অনতিদূরে ট্যাক্সি।

- "হাওড়া যাবিই?", অমলের দিকে তাকিয়ে ম্লান হাসলেন মন্মথ।
- "আবার কবে দেখা হবে ঠিক আছে কোন?", ঢিপ করে প্রণামটা সেরে নিলে অমল।
- "সাবধানে থাকিস"।
- "আবার কবে আসবে মনুদা"?
- "দেখি। যবে। তবে"।
- "রাতে থাকলে তাও গল্প হত"।
- "উপায় নেই। জানিসই তো আমার কাজের কথা। তোর মত ব্যবসায়ী হলে বরং পায়ে পা তুলে কয়েকটা দিন কাটিয়ে যেতাম কলকাতায়"।
- "ভারী তো মাল সাপ্লাইয়ের কাজ, তাও তুমি সময়মত না ধরালে যে কী হত"।
- "ইম্পর্ট্যান্টলি এখন সংসারটা চালিয়ে নিচ্ছিস। দিনের শেষে জি হুজুরি করে দিনক্ষয় করতে হচ্ছে না"।
- " এ কাজেও কম সেলাম ঠুকতে হয় না জানো"।
- " হ্যাঁ রে অমল। তোদের সেই আমগাছটা কেটে ফেলেছিস না?"
- "দোতলা তোলবার সময় কেটে ফেলতে হল"।
- "গাছটার আম বড় মিঠে ছিল"।
- "মনুদা, কাল তৎকালে টিকিট কাটার একটা ব্যবস্থা করতে পারি এখনও। ট্যাক্সিওলাকে না হয় দশ বিশ টাকা দিয়ে দিচ্ছি"।
- "প্রণাম ঠুকেই ফেলেছিস। বাবা বলতেন প্রণামের ইনহেরেন্ট পারপাস্‌কে ঠেলে সরিয়ে দিতে নই"।
- "ধুস্‌। আমিই তো রিট্র্যাক্ট করতে চাইছি"।
- "ব্রহ্মাস্ত্র সাবান রাখার প্লাস্টিক কৌটো না বাপ। যে হাত পিছলে বাথরুমের ফ্লোরে পড়ল আর তুমি চুক চুক করে কৌটোটা তুলে তাকে রেখে দিলে"।
- "যাবেই"?
- " যাওয়ার কি আর উপায় আছে রে অমল? তবে এ ট্রেন যেতে দেওয়ার উপায় রাখিনি। চ'। বাকি কথা ট্যাক্সিতে হবে"।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু