Skip to main content

মুকুল সামন্তের মানিব্যাগ

মানিব্যাগটা বেশ পুরনো তবে ছেঁড়া নয়। 

মানিব্যাগ থেকে সাত-পুরনো বাসের টিকিট বেরোল খান চারেক। একটা পাঁচশো টাকার নোট, তিনটে একশো টাকা। খুচরো মিলে আরও বত্রিশ টাকা। একটা ট্রেনের মান্থলি; বৈদ্যবাটি টু হাওড়া। সাথে একটা টু হুইলারের লাইসেন্স।  মুকুল সামন্ত। মুকুল। সামন্ত। তাহলে আমার নাম মুকুল সামন্ত। মাথার ঢিপঢিপটা অসহ্য লাগছে। পার্কের বেঞ্চিতে এলামই বা কী করে কে জানে। গায়ে অসহ্য ব্যথা। 

মানিব্যাগে একটা পাসপোর্ট সাইজের ছবি। মহিলার। দিব্যি দেখতে। আমারই পাশাপাশি বয়স। বৌ? সম্ভবত! পকেটে ফোন নেই। ঝেড়ে দিয়েছে। যারা নিয়েছে তারাই কি মারধোর করে পার্কের বেঞ্চিতে শুইয়ে রেখে গেছে? তারা চম্পট দেওয়ার আগে মানিব্যাগটা নিয়ে গেল না কেন? 

শার্টের ওপরের দু'টো বোতাম ছেঁড়া। চোয়ালে ব্যথা। কম মারধোর করেনি শালাগুলো। পার্কটা এখনও ফাঁকা। ভোরের আলো সবে ফুটতে আরম্ভ করেছে। আহ্‌। বাড়িতে সবাই না জানি কত চিন্তা করছে। আরেকবার মানিব্যাগ বের করে পাসপোর্ট সাইজ ছবিটা দেখলাম; মুখটায় বেশ একটা লক্ষ্মীশ্রী আছে। অনেক খুঁজেও মোবাইল নম্বর কোন পাওয়া গেল না। লাইসেন্সে দেওয়া ঠিকানাটাই ভরসা। আহ। বৌটা বড় চিন্তা করছে। ঘিলু নড়ে গেলে কী ফাঁপরেই না পড়তে হয়। 

খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে পার্ক ছেড়ে বেরোতে হল। হাঁটুতেও রীতিমত চোট। হারামিগুলো কী মারটাই না মেরেছে। যেহেতু মাথা থেকে সমস্তটাই বেরিয়ে গেছে, সেহেতু আর ঠিক কী কী খোয়া গেছে সে'টা বোঝা যাচ্ছে না।

আর একবার মানিব্যাগ খুলে ছবিটা দেখে নিলাম। নীল শাড়ি। টলটলে চোখ। বৈদ্যবাটির জন্য মনটা এবার রীতিমত আনচান করে উঠলো। 

পার্কের মেনগেটের পাশেই একটা চায়ের দোকান নজরে এলো। সবে উনুন ধরিয়ে সসপ্যান চাপিয়েছে। এক কাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে বেঞ্চিতে বসলাম। চা'ওলা একটা ছোকরা ছেলে। চটপট চায়ের ভাঁড় এগিয়ে দিল। তার বাড়িয়ে দেওয়া হাত থেকে মাটির ভাঁড়টা নিয়ে উষ্ণ চুমুক দিতেই প্রাণে একটু শান্তি এলো। একটা লেড়ো চাইলাম। লেড়ো চেয়ে চা'ওলা ছোকরার চোখে চোখ পড়তেই হঠ্‌ করে একটা গণ্ডগোল হয়ে গেল। 
বিশ্রীভাবে সে ছোকরার ভুরু কুঁচকে গেল। লেড়ো দেওয়ার বদলে যে'টা ঘটল তাতে মাথাটা গেল ঘুরে। 
আমার জামার কলার টেনে ধরল সে! 
"শালা ঢিট! এত মার খেয়েও পকেটমারা মানিব্যাগ নিয়ে দিব্যি গুপি হয়ে গেলি কাল? এবার দেখি কোথায় যাস! অ্যাই কেতো এদিকে আয়। দ্যাখ ব্যাটাকে ফের ধরেছি। কাল রাতের অন্ধকারে ব্যাটা পার্কে গিয়ে লুকিয়েছিল"। 

এক ধাক্কায় মাথার দমবন্ধ করা জটটা গেল কেটে আর শ্রীমান কেতো উদয় হওয়ার অনেক আগেই চা'ওলা ছোকরার চোয়ালটা গেল উড়ে। গায়েব হওয়ার আগে চা'ওলা ছোকরার পকেটকে নিষ্কৃতি দেওয়ার কোন মানেই হয় না। দিলামও না। মোড় পর্যন্ত দৌড়ে এসে ভোরের বাসে উঠে পড়ে দম নিলাম। সবার আগে বৈদ্যবাটির মানিব্যাগটা থেকে পাসপোর্ট সাইজ ফটোখানা বের করে কুচিকুচি করে ছিঁড়ে কাঁচা সকালের বড়রাস্তার নিরিবিলিতে ছড়িয়ে দিলাম। 

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু