Monday, October 12, 2015

পুজোর জোরে

- এই অদ্ভূত শঙ্কা আপনার মনে উদয় হল কেন দয়াশিব বাবু?

- শঙ্কা? শুধু শঙ্কা নয় ইন্সপেক্টরবাবু; আমি নিশ্চিত। 

- আপনি নিশ্চিত যে আপনাকে অনেক মানুষ পুজোর সময় ধর্ষন করার চেষ্টা করবে?

- আমি হান্ড্রেড পারসেন্ট নিশ্চিত। এবং সে'জন্যেই আপনাদের কাছে আবেদন নিয়ে এসেছি প্রটেকশনের জন্য।

- আপনার আশঙ্কার কারণটা এখনও জানা যায়নি, কাজেই সিকুউরিটি কমিট্‌ করার প্রশ্নই ওঠে না। 

- আমার ওপর ধর্ষনের চেষ্টা হবে এ পুজোয়, এ সহজ সত্যিটা আপনার চোখে কেন পড়ছে না আমি বুঝতে পারছি না ইন্সপেক্টরবাবু।

- ফের সেই এক কথা। আপনার কাছে কোন প্রমাণ আছে কী দয়াশিব বাবু?

- প্রমাণ তো আপনার চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছে মশাই। 

- চোখের সামনে প্রমান? কই?

- ওই যে! আমার নামে। 

- আপনার নামে প্রমাণ রয়েছে যে আপনাকে এ পুজোয় কিছু মানুষ ধর্ষন করবে?

- স্পষ্ট, তাই নয় কী?

- হাউ? কী করে?

- আমার পুরো নাম দেখলেই টের পাবেন।

- পুরো নাম? আপনার? এইত্তো। দয়া শিব লাহা রায়। তো?

- জলের মত সহজ। ইনিশিয়াল্‌স দেখুন। এরপরেও বলছেন পুজোয় আমার শ্লীলতাহানি ঘটার কোন চান্স নেই?

- দয়া শিব লাহা রায়। ডি এস এল আর...সব্বনাশ!

**

- এবার পুজোয় কোথায় চললেন মশায়? পাহাড়ে না সমুদ্রে?

- দু'টোতেই আছি।

- দু'টোতেই? হাউ?

- ওই; থালাভরা পোলাওয়ের পাহাড়ে আর মাংসের ঝোলের বাটির সমুদ্রে।

Sunday, October 11, 2015

খাপ

- এটা কীসের খাপ মশাই? চশমার?

- না। 

- তবে কী আছে এতে?

- খাপ।

- আই মিন, খাপের মধ্যে কী আছে?
- খাপ আছে। বড় খাপের মধ্যে; ছোট খাপ।
- সেই ছোট খাপের ভিতর?
- তস্য ছোট খাপ।
- তার ভিতর?
- তস্য তস্য। প্রোগ্রেসনে রয়েছে।
- এমন বিদঘুটে কেস কেন বলুন তো?
- আমার ছেলের নাম পঞ্চু যে।

ব্রুটাস

- জন্মদিনের শুভেচ্ছা ব্রুটাস। শুভেচ্ছা। 

- আমি ধন্য রাজাধিরাজ। আমি ধন্য। 

- তা কত হল? 

- আজ্ঞে?

- বলি বয়স কত হল?

- বয়েসের কি আর গাছ পাথর আছে রাজন!

- তা বেশ তো দাঁত বের করে দাঁড়িয়ে আছ, বলি হাতে ছুরি নাচাচ্ছ যে; কেক্‌টা কোথায়?

- আজ্ঞে পিছনে ঘুরলেই কেক দেখতে পাবেন রাজন।

- দেখি পিছনে ঘুরে...আঃ...আ আ আ...আঃ...ব্রু...ব্রু...শেষ পর্যন্ত......।

- রাজার পিঠের চেয়ে দামী কেক আর কোথায় পেতাম হে সম্রাট। তা আমার বয়স জানতে চেয়েছিলেন.....চলে যাওয়ার আগে জেনেই নিন...এই বিরাশিতে পড়লাম।

- এইটি টু ব্রুটাস?

গুলাম খই


- এ কী সেনাপতি? খই কই?

- খই শেষ মহারাজ।

- গুদোম ভরা খই শেষ? 

- একটা কণাও পড়ে নেই।

- তবে কী হবে? সেনা ভাজবে কী?
- নেই নেই।
- ভাজবে না তো কি কাজ করবে নাকি?
- মহামারি।
- না ভেজে কাজে মনে দিলে যে সব্বনাশ!
- বটেই তো; অভ্যেস নষ্ট হয়ে যাবে।
- তবে উপায়?
- খইয়ের নতুন স্টক আসা না পর্যন্ত একটা উপায় আছে মহারাজ।
- কী উপায়? জলদি বল। জলদি জলদি।
- রাজ্যে গুলাম আলি আসছেন, জলসা করবেন।
- তো? সে কি খই?
- খইয়ের বাবা। পাকিস্তানি শিল্পী।

- ওহ। অহ। ওহোহোহোহো। মার দিয়া কেল্লা ভাজ দিয়া খই।

- যাই তবে, ক্যালাকেলির আয়োজন করি।

মনোথেইজ্‌ম

- দুর্গার সাবজেক্টে আমি কাইণ্ড অফ আ মনোথেইস্ট।

- সে আবার কেমন কথা? সোনার পাথরবাটি? রাঙাআলুর বিরিয়ানি? 

- খুব গভীরের কথা।

- বল না। লেট মি সি হাউ গভীর। তুমি দুর্গাওয়াইজ মনোথেইস্ট; এ কথার মানে কী?

- আমি শুধু আমার পাড়ার বারোয়ারী পুজোর দুর্গাকে অ্যাক্সেপ্ট করি। থিম প্যাণ্ডাল হপিং ইজ ব্ল্যাসফেমি ফর মি।
- এটা মনোথেইজম নয়। এটার একটা সায়েন্টিফিক নাম আছে।
- সায়েন্টিফিক নাম? কী?
-ল্যাদেল্যাজেগোবরেইজম।

Saturday, October 10, 2015

বনলতা সেন

- বনলতা।

- আপনি ফের এসেছেন?  

- এমন কাঁচা মিঠে শান্তি আর কোথায় পাই বলুন?

- কিন্তু মশাই এ সম্পর্ক টেকার নয়। আপনি যত ভালো পাত্রই হোন, বা বাঙলাটা যতই ভালো শিখে থাকুন।

- কী মুশকিল। আমি কি আপনাকে বিয়েথা করতে বলছি নাকি?

- অদ্দুর থেকে নাটোর এসেছেন শুধু খানিক শান্তি পেতে?

- হেঃ! আপনি জানেন তো সমস্তটাই। আর আপনার বাড়ি আসতে ঝক্কি কি কম? রাতের এ সময় অটো রিক্সা কিছুই মেলে না। স্টেশন থেকে নেমে ঝাড়া হাজার বছরের হাঁটাপথ।  

- হাজার বছর?

- ওহোঃ, আপনাদের গ্রহ পৃথিবীর হিসেবে অবিশ্যি ঘণ্টা দুয়েক। তবে আমাদের সফেনে আবার আপনাদের এই দু'ঘণ্টাই হাজার বছর। কী সাংঘাতিক মহাজাগতিক ধাঁধাঁ বলুন দেখি? আমাদের বায়োলজিকাল বয়স এক অথচ সফেনের হিসেবে আমার বয়স দেড় কোটি আর পৃথিবীতে আপনি সবে সাতাশ।  ভাবাই যায় না।

- বাবার জেগে ওঠার সময় হল বলে। দু'দণ্ড বই তো নেই।

- তাতেই আমি একশো বছরের ভালোবাসা খুঁজে নেব বনলতা। বইটা কই?

- এই যে। শোনাই তাহলে?

- শোনাও।

- নতুন?

- সে তো শুনবই নতুন। তবে বোম্বাগড়ের রাজাটা আরেকবার শুনি প্রথমে। তারপরে অন্য কিছু।

Friday, October 2, 2015

সিদ্ধার্থ

- সারথি, রোক্কে! রোক্কে!

- কী ব্যাপার যুবরাজ? আবার দাঁড়ানোর কী দরকার? মহারাজ প্রাসাদে ফেরার আগেই আমাদের ফিরে যেতে হবে। নয়তো আবার হইচই  বাঁধবে।

- তুমি এত ভয় পাও কেন সারথি? আমি যুবরাজ সিদ্ধার্থ তোমায় অভয় দিচ্ছি, তা সত্ত্বেও এত ঘ্যানঘ্যান কর কেন?

- বেশ। দাঁড়ালাম। তা এখানে দাঁড়িয়ে কী হবে? 

- হুই দেখ।

- হুই? কই?

- হুই যে। ওই ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে। 

- ও? ও তো রামনরেশের খোকা। 

- রামনরেশের খোকা?

- আজ্ঞে।

- এই বিকেলে মাঠের ধারে ও অমন একা দাঁড়িয়ে কী করছে? ও বাকি খোকাদের সঙ্গে খেলছে না কেন? ওর হাতে কী ও'টা?

- হাতে? পুঁথি। 

- পুঁথি?

- আজ্ঞে পড়াশোনা করছে। গুরুমশায় টোলে বাড়তি পড়া দিয়েছে হয়তো। রামনরেশের এই খোকা তো আবার পড়াশোনায় দারুণ কী না। তাই। পড়াশোনা ছাড়া আর কোন কিছুতে তার মন বসে না। এ বয়েসেই কত কিছু জানে।

- খোকা এত জানে যে বিকেলে খেলে না? 

- আজ্ঞে না। পড়ে। যত বেশি পড়ে তত বেশি জানে। বাকি খোকাদের তুলনায় তত বেশি এগিয়ে যায়।  গুরুমশাই তার কত প্রশংসা করেন সর্বক্ষণ।

- সে কী! এ যে কচি বয়েসেই এ খোকা বুড়িয়ে থুত্থুড়ে হয়ে গেছে গো। হায় হায়। বুকের ভেতরটা যে দুঃখে হুহু করছে সারথি।

- দুঃখে কাজ নেই যুবরাজ। এগোনো যাক।


**

- সারথি। সারথি। রোক্কে। রোক্কে। 

- আবার কী হল?

- ওই দেখ। 

- কী দেখব?

- ওই যে! ওই বাড়ির দাওয়ায় বসে ওই বাচ্চা ছেলেটা কেমন আর্তনাদ করছে। বাছার কোন গম্ভীর ব্যামো হয়েছে বোধ হয়। কী কাণ্ড। 

- প্রাসাদের বাইরে তো আর বেরোন না। কোন খবরও রাখেন না। প্রতিযোগিতার  যুগ যুবরাজ।

- প্রতিযোগিতা? কাদের মধ্যে?

- প্রত্যেক খোকা খুকীর তার সমস্ত প্রতিবেশীর সঙ্গে। সর্ব ঘটে সর্বাঙ্গ সুন্দর কাঁঠালি কলা না হতে পারলেই চিত্তির। শুধু পুঁথি-পাঠে এগিয়ে থাকলে চলবে না। গীতবাদ্য নৃত্য অঙ্কন; যাবতীয় শিল্পে পারদর্শী না হতে পারলে যে পিতা মাতার নাক কাটা যায় যুবরাজ। ওই খোকা আর্তনাদ করছে না; ও সঙ্গীতের রেওয়াজ করছে। বেচারার কি না গলায় সুর নেই; তাই ওর গান আর্তনাদের মত শোনাচ্ছে।

- বল কী? গলায় সুর নেই তবে গান করছে কেন?

- প্রতিবেশীর পো রাগসঙ্গীতে পারদর্শী যে, কাজেই ওর গলায় সুর আছে কী নেই কী এসে গেল তাতে। ও গান না শিখলে বাপ মায়ের যে মাথা কাটা যাবে যুবরাজ।

- সর্বনাশ! যাক গে। তাড়াতাড়ি রথ এগিয়ে নিয়ে চল হে। এ যন্ত্রণার সুর শোনা দায়। ও খোকা অসুস্থ। নয়তো অমন বেখাপ্পা ভাবে গান কেউ গাইতে পারে? জলদি রথ আগে লো! 


** 

- সারথি! রোক্কে! রোক্কে! রোক্কে!

- আপনি কী আজ ঘরে ফিরবেন না? মহারাজ জানতে পারলে...। 

- কথায় কথায় মহারাজ মহারাজ কর কেন সারথি? আগে বল ওই ছেলেটা। ওই যে...। 

- কই। 

- ওই যে। বাসন মাজে। বছর পাঁচ সাতেকের বেশী বয়স বলে তো বোধ হয় না। অত কচি খোকা বাসন মাজছে কেন সারথি? এই বিকেলে না খেলে, না পড়ে, না গান গেয়ে; ও বাসন মাজছে কেন গো?

- যুবরাজ। ওর বাপ মা নেই। দোকানে বাসন মেজে দু'বেলা দু'মুঠো খেতে পারে। ওর আবার পড়াশোনা আর খেলা! 

- এ খোকা যেন একটা জ্যান্ত মৃতদেহ সারথি।

- দুঃখ করে লাভ নেই যুবরাজ। যার কপালে যে'রকম। বরং চলুন এগোই। প্রাসাদে ফিরতে হবে তাড়াতাড়ি। 

**

- সারথি! 

- ফের রথ দাঁড় করাতে হবে যুবরাজ?

- না, দাঁড় করিও না। তবে ও কে যায়? ওই পথে?

- ও ভবা বেলুনওলা!  এক সময় বেলুন বেচে ভালোই আয় ছিল। বিকেলে অল্প সময়ের মধ্যেই ওর সমস্ত বেলুন বিক্রি হয়ে যেত। কিন্তু এখন আর খোকা খুকিদের সময় নেই ওর বেলুন কেনার। তাই ভবা আজকাল খামারে কাজ করে। তবে বেলুন বেচাটা ওর ভালোবাসা কিনা। তাই রোজ বিকেলে এখনও বেলুন হাতে বেরোয়। পাগলের মত খুঁজে বেড়ায় বেলুন কেনার জন্য কোন কচিকাঁচা আছে কী না।

- কেউ কেনে না, তাই না?

- কেউ না যুবরাজ। আপনি নেবেন? বেলুন? রাহুলের জন্য?

- হুঁ?

- বেলুন কিনবেন ? রাহুলের জন্য?

- হেঃ, না! তবে বেলুন বিক্রি করতে মন চাইছে সারথি।

- মহারাজ শুদ্ধোদনের পুত্র যুবরাজ সিদ্ধার্থ বেলুন বিক্রি করবেন? হেঃ হেঃ!

- হেঃ হেঃ।