Skip to main content

ছাত ও মেজানাইন

মাথায় অল্প মিঠে ঝিমঝিম ভাব, চোখে আবছা হলুদ নীল মেশানো অন্ধকার। ছাদের গন্ধ কি রাতের এদিকটায় বদলে যায়? ঠাহর করা যাচ্ছিল না। পাঁচিলে ঠেস দিয়ে বসেছিল দীপু, দুই পা ছড়িয়ে।
জিভ গলা শুকিয়ে আসছিল, বুকের ফড়ফড়ানিটা অবশ্য বেশ মিষ্টি। বেশ।

"গাঁজা খেয়েছিস? স্কাউন্ড্রেল, গলা কেটে নেব"!! কিচির মুখটা পতপত করে চোখের সামনে ভাসছিল। ওর ঠোঁটের ডান কোণ ঘেঁষে ঝাপসা একদানা তিল, মোমের আলোর মত ভাসছিল।

মেয়ের গন্ধরাজ প্রিয়, মেয়ে অতুলপ্রসাদে কাঁদে; সে কিনা বলে গলা কেটে নেবে। ছাতটা দুলে ওঠে; সামান্য। স্নেহ তিরতিরিয়ে ওঠে। দীপু ভয় টের পায়।

ছাতে তো সে একা। বাবা মা মালদা গেছে, দিদাকে দেখতে। দীপু বাপ্পার বানানো কল্কের আকাশে, ভাসমান। নয়নতারার টবগুলো জ্বলছে নিভছে, দীপু এক্স অ্যাক্সিসে ডিগবাজি খেয়ে ওয়াই অ্যাক্সিসে গিয়ে রিবাউন্ড খাচ্ছে। এফোঁড় ওফোঁড় হচ্ছে।

অবভিয়াসলি কিচির গনগনে মুখটা কল্কে জেনারেটেড।
গন্ধটা স্পষ্ট যদিও, বোরোলিনের মত খটখটে। অথবা অঙ্কের খাতা আর ক্যাসেটের ইনলে কার্ড মেশানো একটা তিরিক্ষি ব্যাপার মিশে। কিচির ঠোঁট ফেটেছে অসময়ে। ঠোঁটের ডান কোণে ঝাপসা এক দানা তিল, মোমের আলোর মত ভাসছিল। কিচির মুখ ফের পতপত করে ভেসে উঠলো; "স্কাউন্ড্রেল, গাঁজা খেয়েছিস? এই তোর উচ্চমাধ্যমিকের ফোকাস?"।

কিচির গন্ধে গলা ভেজে। ওকে বলা যায় না। শুধু বলা যায় দিদার বায়োপ্সি রিপোর্ট খারাপ। কিচির না থাকা ছাদে এসে জমা হয়। জমা হয় দিদার বায়োপ্সি রিপোর্ট। কিচির ঠোঁটের পাশে আবছা কালো তিল, লাস্ট স্টেজ। কিচির গন্ধরাজ প্রিয়।

বারোয়ারীতলার মাঠের পেট বরাবর পার্পেন্ডিকুলার কাটলে, বিস্কুট রঙের বাড়ির মেজানাইন ফ্লোরের ছোট্ট ঘরে কিচির নাইট ল্যাম্প। সবজেটে।

কিচির কান্নায় বালিশ ভেজে। দীপুকে বলা যায় না। কাকীমা কাকু স্রেফ দিদার রিপোর্ট শুনে আজ ছুটে যাননি। দীপুর কাল উচ্চমাধ্যমিকের শেষ পরীক্ষা খতম হলে তবে জানবে যে ছোটবেলা খতম।

কিচি নিজের ওষ্ঠ কামড়ে ধরলে আবছায়ার তিল ডুবে যায়। দীপু জানে। কিচিকে বলা যায় না। বড় হওয়াগুলো কিচিকে বললে সে গলা কেটে নেবে।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

ব্লগ-বাজ

আর চিন্তা নেই । বাঙালিকে আর রোখা যাবে না । আর সামান্য (সম্ভবত কিঞ্চিত গোলমেলে ) কবিতা ছাপাবার জন্যে সম্পাদক কে তোল্লাই দিতে হবে না । আর প্রেমে লটরপটর হয়ে ডায়েরি লিখে প্রাণপাত করতে হবে না। পলিটিক্স কে পাবলিক-জন্ডিস বলে গাল দেওয়ার জন্য আর “প্রিয় সম্পাদক” বলে আনন্দবাজারের ঠ্যাং ধরতে হবে না। কেন ?  হোয়াই? বাঙালি ব্লগিং শিখে গ্যাছে যে। ঘ্যাচাং ঘ্যাচাং করে শাণিত তলোয়ারের মত “ পোস্ট”-সমূহ জনতার ইন্টেলেক্ট এসপার-ওসপার করে দেবে ; হাতে-গরম গায়ে-কাঁটা। বাঙালি মননের নব্য জিস্পট ; ব্লগ-স্পট । কে বলে যে বাঙালি ব্রিগেডে বুক্তুনি দিয়ে আর ফুটবল মাঠে খেউড় করে খতম হয়ে গ্যাছে ? কে বলে যে বাঙালির ঘিলু কফি হাউসে ভাত ঘুমে মগ্ন ? বাঙালিকে একবার ব্লগখোর হতে দিন , সমস্ত অভিযোগ ভ্যানিশ হয়ে যাবে । পোপ থেকে পরশুরাম ; ডেঙ্গু থেকে মশাগ্রাম ; বং-ব্লগের দাপট রইবে সর্বত্র । বাঙালির সমস্ত আশা-ভরসা-জিজ্ঞাসা এইবারে ব্লগ মারফত্‍ পৌছে যাবে ট্যাংরা ট্যু টেক্সাস । তোপসে মাছের স্প্যানিশ ঝোলের রেসিপি কী ? বাঙাল-ঘটি মিল মহব্বত-হয়ে গেলে কি বাঙ্গালিয়ানা চটকে যাবে ? নেতাজী কি এখ

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু