Skip to main content

বৃষ্টির তিন

প্রেম

হঠাৎ ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি।

মন্মথ সিগারেত ছুঁড়ে ফেলে ছাত থেকে হুড়মুড় করে নামতে গেলে। ভিজলে মুশকিল, আগামীকাল এগজ্যামিনেশন। ফিজিক্স।

নয়নতারা চাইলে দুদ্দাড় করে সিঁড়ি বেয়ে উঠে যেতে চাইলে। আগামীকাল ছেলের বাড়ি থেকে আসছে তাকে দেখতে। যদি তারা পছন্দ করে ফেলে? শ্বশুরবাড়ির লোকজন যদি ফের বৃষ্টি ভিজতে না দেয়?

সিঁড়ির বাঁকে একটা জবরদস্ত ধাক্কার প্রোগ্র‍্যাম করা ছিল। দু'টো ইন্ডিপেন্ডেন্ট কার্ভ মিলে মিশে যাবে। কিন্তু খামখেয়াল বড় গোলমেলে চিজ। ঈশ্বর দেখলেন চপের দোকানটা আজ বন্ধ। উঠে গিয়ে বেসিনের আলগা ভাবে লাগানো কলের মাথা কষে ঘুরিয়ে বন্ধ করলেন।

দড়াম বৃষ্টি শুরু না হতেই থেমে যাওয়ায় মন্মথকে দ্বিতীয় সিগারেট ধরাতে হলো। ছাতের দরজার মুখ থেকে ফেরত এলে মনমরা নয়নতারা। কাল দু'জনের এগজ্যামিনেশন। মন্মথ আবার পাশ করতে বদ্ধপরিকর।

যুদ্ধ

সে এক ধুন্ধুমার বৃষ্টির রাত। স্ট্রিট ল্যাম্পের নিভু নিভু হলুদ গুলে যাচ্ছিল সরু গলির অন্ধকারে। বাতাসে অল্প জুঁই আর রামের ভাসা ভাসা সুবাস।

সামান্য অ্যাসবেস্টসের চালার আশ্রয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বৃদ্ধ মহেন্দ্রলাল। আধ ঘণ্টার ওপর হয়ে গেল; বৃষ্টি ধরার নাম নেই।

"দত্তবাবু"! ডাক শুনে অন্ধকার হাতড়ালেন বৃদ্ধ মহেন্দ্র।

"কে?"।

"আপনি? এ পাড়ায়?"।

"কে ওখানে?"।

"আপনাকে এ নষ্ট পাড়ায় দেখবো ভাবিনি"।

"আপনার ভুল হচ্ছে পালবাবু। আমি দত্ত নই"।

" পাল? কে পাল?"।

" দত্ত? কে দত্ত?"।

" ধুর ছাতা"।

"ছাতার মাথা"।

খানিক পরে বৃষ্টির ঝাপটা খানিকটা নরম হয়ে এসেছিল বইকি।

বিচার

- মাই লর্ড, আমায় এইভাবে আটক করার কী মানে?

- অর্ডার অর্ডার।  প্রথমত, এ কোর্টে চিবিয়ে কথা বলা বারণ। দ্বিতীয়ত, দৃষ্টিকটু ভাবে দাড়ি চুলকানোর জন্য আপনাকে বেয়াল্লিশ টাকা জরিমানা করা হলো।

- থামুন। আই মিন, মাই লর্ড! আমার অপরাধটা কী?

- আপনি বৃষ্টি দেখেছেন?

- সে'টা অপরাধ?

- প্রশ্নের সোজা উত্তর দিন।

- দেখেছি।

- বৃষ্টির ছবি এঁকেছেন?

- এঁকেছি। সো?

- সো? বৃষ্টি দেখলেন অথচ বেগুনী না ভেজে ছবি আঁকলেন? ওদিকে অতগুলো দামী মেঘ জাস্ট জলে গেলো। জাস্ট জলে।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু