- দেশলাই আছে?
- আসুন।
- থ্যাঙ্কস।
- অফিসে নতুন মনে হচ্ছে? ক্যান্টিনেও দেখিনি আগে। স্টোর্সে হরেনবাবুর বদলে এসেছেন?
- অফিস? আমায় ধরে রাখবে তেমন অফিস কোথায়?
- মানে?
- মানে...শুনেছিলাম আপনাদের ক্যান্টিনের বাটা মাছের ঝোলটা বেশ চমৎকার। তাই দিয়ে চাট্টি ভাত খেয়ে গেলাম। আপনাদের ল্যাবের সমাদ্দার আমার চেনা। ওর থ্রুতেই এলাম।
- সোমবারের ব্যস্ততার বাজারে অন্য অফিসের ক্যান্টিনে এলেন বাটার ঝোল খেতে?
- সোমবারকে ডরালে আমার নাম রজনীকান্ত হত না মশাই। সোমবারের গলায় বকলস পরিয়ে ঘুরি আমি।
- বটে?
- অফকোর্স। সকালটা কেটেছে লাইব্রেরিতে। এখন লাঞ্চ হয়ে গেছে। এবার সিগারেট ফুরোলেই সোজা অটো ধরে বাড়ি। সোমবারের দুপুরে আবার আমার ভাতঘুম জমে ভালো। আমার রিল্যাক্সেশন, আর এই আপনাদের ঘানি টানা। মনডে ব্লুজ।
- তা বটে। বাঙালি ক্লার্ক হয়ে জন্মেছি যখন, সোমে হদ্দ না হয়ে উপায় কী?
- করেক্ট।
- এই দেখুন না। এগারোটা নাগাদ অফিসে ঢুকতে হলো আজ।
- এগারোটা?
- ফার্স্ট ডে অফ দ্য উইক। দেরী করার উপায় আছে? এসে সবে আজকের আনন্দবাজার, আজকাল আর বর্তমানটা একটু উলটে পালটে দেখছি...এই ধরুন চল্লিশ মিনিটের বেশি হয়নি। অমনি গুপ্ত এসে ইলেকশনের এমন গল্প ফেঁদে বসলে যে কনসেন্ট্রেশন গেল চটকে। বিশুকে একটা চা দিতে বলে ফোকাস করলাম গুপ্তর লজিক খণ্ডনের দিকে। আজকাল ছেলে ছোকরা, চারটে এডিটোরিয়াল পড়ে ভাবে যে ইলেকশনের ট্রেন্ড তার হাতের মুঠোয়। একটু কড়কে দিলাম আর কী। একটা নাগাদ মল্লিক অ্যান্ড সনসের ফাইলটা খুলে একটু নাড়াচাড়া করতেই লাঞ্চ টাইম হয়ে গেলো। যাক রজনীবাবু, আপনার সাথে আলাপ হয়ে ভালো লাগলো। আমি বিপিন দত্ত। আমার তো আবার আপনার মত কপাল নয় যে মন্ডে দুপুরে ভাত ঘুম দেবো, যাই টেবিলে ফেরত।
- ওহ। আপনার তো আবার সে ফাইলটা রয়েছে...।
- ফাইল? কোন ফাইল?
- ওই যে বললেন। মল্লিক অ্যান্ড সন্সয়ের ফাইল।
- ওহ হো। ব্যাপারটা কী জানেন? সেকেন্ড হাফে নতুন কাজে হাত দেওয়ার কোন মানে হয় না। বুঝতেই পারছেন। একে সোমবারের প্রেশার, অন্যদিকে আজ আবার একটু তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বেরোব ভাবছি। একটু নিউমার্কেট যাওয়ার আছে সাড়ে চারটে নাগাদ। গিন্নীর শপিং আর আমার মনডে স্ট্রেস বাস্টিং। আপনি বরং আসুন, ইউ লাকি ম্যান। আমি যাই অফিসে ফেরত। গুপ্ত ভোট শেয়ার নিয়ে কিছু একটা বাতেলা ঝেড়েছিল। শায়েস্তা করতে হবে। চলি, কেমন?
- বেশ।
রজনীবাবুর জিভ থেকে বাটা মাছের টানটান ঝোলের স্বাদ উবে গিয়ে একটা তিতকুটে ভাব আসতে শুরু করেছিলো। পেটের ভিতর একটা বেমক্কা খালি খালি ভাব ঘুরপাক খাচ্ছিল।
বিপিন দত্তর অফিস থেকে বেরিয়েই সোজা একটা পত্রিকার স্টলে ঢুকে এক কপি কর্মক্ষেত্র কিনলেন রজনীকান্ত।
Comments