Skip to main content

কাকাবাবুর শখ

-   কাকাবাবু।

-   কে? অসীম নাকি?

-   আজ্ঞে।

-   জরুরী কিছু?

- নাহ মানে! এত রাত্রে তো এদিকে কেউ সচরাচর আসে না।

-   আসলে গোপালপুর এলেই একবার অন্তত এখানে আসি। এই সৌধের পাশে মিনিট দশেক কাটিয়ে যাই। গত দশ বছরের অভ্যাস।

-   কর্নেল কল্লোল স্টেফান মিন্‌জ, ব্যাপারটা রিয়েলি স্যাড।

-   ডেয়ারডেভিল বলতে যা বোঝায়, এ ভদ্রলোক ঠিক তেমনই ছিলেন। অ্যান্ড আ গুড ফ্রেন্ড। নিজের প্রাণ দিয়ে আমার সে’বার বাঁচিয়েছিল আফগানিস্তানে।

-   সে ঘটনা আমার শোনা।

-   জানো অসীম, ভদ্রলোক কবিতা ভালোবাসতেন, কিন্তু লিখতে পারতেন না। অবিশ্যি এই যে তাঁর উইলে রেখে যাওয়া ইচ্ছে; যে তাকে যেন সমুদ্রের ধারেই গোর দেওয়া হয়, সে’টা কি কম পোয়েটিক?

-   আর্মির কেউকেটারা পুশ না করলে কিন্তু এখানে এমন শ্বেতপাথরে বাঁধানো স্মৃতি সৌধ বানানো পসিব্‌ল হত না। অবিশ্যি যে লেভেলে গিয়ে স্যাক্রিফাইস করেছেন কর্নেল মিন্‌জ, এটুকু তাঁর প্রাপ্যই ছিল।

-   অফ কোর্স ছিল।

-   কাকাবাবু, অনেক রাত হল। এবার ফেরা দরকার।

-   হ্যাঁ। চলো। জানো অসীম, কবিতা ব্যাপারটা অদ্ভুত। কত লোকের কাব্যি করার ক্ষমতা নেই, কিন্তু কবিতার প্রতি নিবিড় ভালোবাসা রয়েছে। যেমন এই কল্লোল মিন্‌জ। যেমন আমি। যেমন আমার কলকাতার মর্নিং ওয়াকের সঙ্গী।

-   আমি তো ভাবতাম মর্নিং ওয়াক ব্যাপারটা আপনি একাই সারতে ভালোবাসেন।

-   কিছুটা তাই। তার মূল কারণ হচ্ছে আমি ক্রাচ বগলে নিজের গতিতে হাঁটতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করি। কিন্তু এ ভদ্রলোকের সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর থেকে ব্যাপারটা মন্দ লাগছে না। হাসিখুশি। ভালোমানুষ। মজার। মেদবহুল তাই আমার চেয়ে সবিশেষ জোরে হাঁটতে পারেন না। ওদিকে ভদ্রলোক বাংলার শিক্ষক, কিন্তু কবিতা লেখার আর্টটা আজ পর্যন্ত গ্রিপ করতে পারেননি। তাই বলে চেষ্টার ত্রুটি রেখেছেন তেমন নয় কিন্তু।

-   ইন্টারেস্টিং।

-   কোয়াইট সো। কাজেই রোজ সকালে আমাদের এক ঘণ্টা হাঁটার রুটিনের সঙ্গে যোগ হয়েছে দুই কবিতা গবেটের কাব্যালোচনা।

-   রিয়েলি?

-   রীতিমত। ইনফ্যাক্ট ওর ইন্সপিরেশনেই আজকাল মুখে মুখে দু’একটা কবিতা ভেঁজে ফেলার চেষ্টা করে মাঝে মাঝে। তবু সেগুলো শুনে সন্তু যেভাবে তাকায়, বুঝতে পারি সেগুলো ভদ্রলোকের পাতে দেওয়া চলে না। এই যেমন ধরো কিছুক্ষণ আগে তুমি যখন ডাক দিলে, তখনই মাথায় দু’টো লাইন খেলে গেলো। এখন অপেক্ষা, কবে কলকাতা ফিরব আর কবে আমার সঙ্গীটিকে লাইন দু’টো শোনাব।

-   তা আমায় শোনানো যায় না কাকাবাবু?

-   শোনানো তো যায়, যদি তুমি কথা দাও যে ভির্মি খাবে না।

-   কথা দিলাম না হয়।

-   ‘অসীমের ডাক শুনি কল্লোল মর্মরে, এক পায়ে খাড়া থাকি একা বালুচরে’। কী? দাঁড়িয়েছে?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু