Skip to main content

শাসমলবাবুর কাণ্ড

- ডাক্তার, আমায় নিয়ে এ'সব কী শুরু করেছেন বলুন তো?
- এখনও কিছুই শুরু হয়নি শাসমলবাবু। এ তো কলির সন্ধ্যা। আগামীকাল ইউরোপিয়ান ভাষাবৈজ্ঞানিকদের দল আসছে আপনাকে দেখতে। আপনার সাথে কথা বলতে, আপনাকে স্টাডি করতে। পরশু আসছে জাপানীরা। আমি তো একপ্রকার নিশ্চিত, আমেরিকানরা এ হপ্তার মধ্যেই একটা টিম পাঠাবে। দুনিয়া জুড়ে আপনাকে নিয়ে একটা সেনসেশন তৈরি হয়ে গেছে। শেষ এমন বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তৈরি হয়েছিল, আমার যদ্দুর মনে পড়ছে ফর্টি সিক্সে; যে'বার চাঁদে শিমুলগাছের চাষ করলেন জন ফোগার্ট।
- না মানে...সবাই একটু ইয়ে...ওভার রিয়্যাক্ট করছে না? ঘটনাটা কিন্তু অতি সামান্য ডাক্তার...।
- সামান্য? কী বলছেন? গড়িহাটের ভিড় ফুটপাথে এক ভদ্রলোক বেমালুম আপনার পা মাড়িয়ে দিলে আর আপনি তাকে বললেন 'দাদা, আপনি আমার পা মাড়িয়ে দিয়েছেন'। এ'টা সামান্য ঘটনা?
- সামান্যই তো...উনি পা মাড়িয়ে দিলেন, আমিও তাই বললাম।
- আমেজিং। ইনক্রেডিবল। ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে, একজন আপনার পা মাড়িয়ে দিল আর তাকে আপনি শুধু বললেন 'আপনি আমার পা মাড়িয়ে দিয়েছেন'। একটা খিস্তিও না জুড়ে আপনি এই সাংঘাতিক কথাটা কমিউনিকেট করতে পারলেন। চারক্ষর নয়, ইংরজির অমুকহোল তমুকহোল নয়, জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে কিউরিওসিটি নয়, এমনকি কানা-ইয়েও না জুড়ে আপনি দিব্যি নিজের উষ্মা প্রকাশ করে ফেললেন। আর নিজের রাগ শুধু প্রকাশ করতে পেরেছেন তা নয়, পা-মাড়িয়ে ভদ্রলোককে দিয়ে আপনাকে সরিও বলিয়ে নিয়েছেন। কমিউনিকেশনের ইতিহাসে এমন বিপ্লব আধুনিক পৃথিবীর ইতিহাসে আগে ঘটেছে কী?
- ঘটেনি?
- নেভার।
- না মানে...ইনফরমেশনটা কমিউনিকেট করতে পারা নিয়ে কথা...।
- সেটাই তো! অভাবনীয়,  অভূতপূর্ব,  অবিশ্বাস্য!  খিস্তি ছাড়া যে ইনফরমেশন বা সেন্টিমেন্ট কনভে করা যায়, গত দুই শতকে এমন কোনও এগজ্যাম্পল নেই যে! বিষেকানন্দকেও শিকাগোতে বললে হয়েছিল "মাই আমেরিকান ঢ্যামনাস অ্যান্ড ঢেমনিস"। মোহন গন্দিকেও মরার আগে আর্তনাদ করতে শোনা গেছিল "হে হারামি"।
সাবাস বসুও সে'বার পাবলিককে মোটিভেট করতে বলেছিলেন "ধুর বাল রক্ত ফক্ত না পেলে কী ছিঁড়ব?"। শাসমলবাবু আপনার একটা কথা "দাদা, আপনি আমার পা মাড়িয়ে দিয়েছেন"; একদিন পৃথিবী পালটে দেবে। দেবেই!

Comments

Anonymous said…
এনার লেখার ধরন বেশ ভালো, আগেও পড়েছি। কিন্তু বিশেকানন্দ, সাবাস বসু ইত্যাদি শব্দ থেকে ভুরভুর করে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতার গন্ধ বেরোচ্ছে। বড়চর্চা খারাপ জিনিস নয়, আমাদের ঐতিহ্যে দেবদেবীদের নিয়েও রসিকতার প্রচলন আছে। একজন সম্মানীয় ব্যক্তিকে নিয়ে নির্মল রসিকতা করা যেতেই পারে, কিন্তু নির্মল হলে নামবিকৃতির প্রয়োজন পড়ত না। কিছু কিছু বিষয় নিয়ে প্যারোডি করা যায়না।

It is commented by Dwaroka Sen Sharma, one of my FB friend, to whom I shared this story.. eta ki ektu onyo vabe lekha jeto?? 😊

@sushtweeting

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু