Skip to main content

ভ্যানিশচন্দ্র

- দর্শকদের বলুন আপনার নাম...।
- আমি...আমি...।
- আমার দিকে তাকিয়ে নয়। দর্শকবন্ধুদের দিকে তাকিয়ে বলুন।
- আমি শশধর মাইতি। বৈদ্যবাটিতে বাড়ি।
- বন্ধুরা, বৈদ্যবাটির শশধর মাইতির জন্য এক রাউন্ড জোর হাততালি হয়ে যাক। শশধরবাবু, এই বাক্সতে আমি আপনাকে ঢুকিয়ে দেব।
- এইটায়?
- আজ্ঞে। এইটায়। আর তারপর...।
- ভ্যানিশ?
- ঠিক ধরেছেন। ভ্যানিশ করে দেব আপনাকে। আপনার ভয় করছে?
- একটু কেমন কেমন লাগছে। এই প্রথম ভ্যানিশ হওয়া তো।
- আসুন এবার বাক্সের ভিতরে।
- যাই?
- আসুন....বন্ধুরা...এই দেখুন...বৈদ্যবাটির শশধর মাইতি এবারে আমার জাদু বাক্সে প্রবেশ করলেন। কী তাই তো?

**

- কই। আসুন।
- আ...আপনি....।
- হ্যাঁ। আমি।
- কিন্তু জাদুকর সাহেব, আপনি তো বাক্সের বাইরে ছিলেন। আমায় বাক্সের ভিতরে পাঠালেন ভ্যানিশ করবেন বলে...।
- ও'টা আমি না। আমার ভ্যানিশ।
- আপনার ভ্যানিশ?
- আজ্ঞে।
- মানে কী?
- মানে বাইরেরটা অরিজিনাল না। ভ্যানিশ করে বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছি। ও ম্যাজিক ফ্যাজিক দেখিয়ে বেড়ায়। আমি এই বাক্সে থাকি। ইন অরিজিনাল। দিব্বি। চা খাবেন?
- চা আছে?
- ম্যাজিক বাক্স তো। আমি আর আপনি ছাড়া পুরোটাই ম্যাজিক।
- বুঝুন কাণ্ড। বাইরের আপনি ফলস?
- ফলস না, ভ্যানিশচন্দ্র সরকার। এই নিন। চা। জেনুইন দার্জিলিং।
- আমায় অরিজিনাল বের করবেন তো এ বাক্স থেকে? আহ, বিউটিফুল বানিয়েছে মশাই চা'টা।
- বেরোতে চাইছেন?
- চাইব না?
- শিঙাড়া খাবেন?
- ম্যাজিক শিঙাড়া?
- ফুলকপির।
- আরিব্বাস।
- এবার বলুন। আপনার ভ্যানিশকে ভিতরে রেখে দিয়ে অরিজিনালকে বের করবো?
- লেজার লিখতে লিখতে আঙুলে কড়া পড়ে গেলো মশাই। আর রোজ বাসে ট্রামে বাদুড় ঝোলা। কহাঁতক সয়?
- ফ্যামিলি?
- ও আমার ভ্যানিশ গিয়ে ম্যানেজ দিয়ে দেবে'খন।
- আপনি থাকবেন শশধরবাবু? ইন অরিজিনাল? এ বাক্সে?  রিয়েলি?
- রিয়েলি। দিব্যি লাগছে কিন্তু। সরভাজা হবে? শিঙাড়ার পর জিভ টানছে।
- অফ কোর্স। এই নিন। সরভাজা।
- থ্যাংক ইউ জাদুকর সাহেব।
- শশধরদা, বাঁচালেন। এই প্রথম কেউ রাজী হলো বাক্সে থেকে যেতে। আরেকটা সরভাজা দিই?
- দিন, এমন ভাবে জোর করলে না করা যায় না।
- যাক, ওদিকে সময় হয়ে এলো। এবার তাহলে আপনার ভ্যানিশকে বাইরে পাঠয়ে দিই?

**

শশধরবাবু সোনামুখ করে নিমবেগুন, টকের ডাল আর মুলো ছেঁচকি দিয়ে এক থালা ভাত খেয়ে উঠে গেলেন। গিন্নী অবাক। আজ সন্ধ্যেয় ম্যাজিক শো দেখে মিনসে এতটাই মজেছেন যে খাওয়া নিয়ে তার নিত্যনৈমিত্তিক ঘ্যানঘ্যানটুকু এক্কেবারে ভ্যানিশ।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু