Skip to main content

অঙ্কের খাতা

অঙ্কের ক্লাস টেস্ট। কুড়িতে আড়াই। অমিয়বাবু কানটা টেনে মুচড়ে ছিঁড়ে ফেলতে চাইছিলেন। অমিয়বাবুর রাগের কারণ চারটে স্তরে। 

এক, দীপুর নম্বর।


দুই, এই খাতা দীপুর গার্জেনের সই করিয়ে আনার কথা ছিল। আনেনি। 


তিন, খাতার অবস্থা খুব খারাপ। দীপু গতকাল বৃষ্টি ভিজেছিল, কাঁধে স্কুল ব্যাগ নিয়ে। খাতা ভিজে নেতিয়ে একাকার। খাতায় স্বাভাবিক ভাবেই নীল কালির চেয়ে লাল কালি বেশি; সেই লাল কালি ছোপ ছোপ হয়ে সাদা পাতা জুড়ে। 


চার, সব চেয়ে বড় কারণ। দীপুর হাসছে না কিন্তু ওর মুখ জুড়ে হাসি। ওর চোখে ঝিলিক। হেডমাস্টার মনোময় মিত্তিরের ছেলে এমন বেহায়া বেয়াদপ ভাবাই যায় না।


বেআক্কেলে। গাধা। আরও কত ভার্বাল মিসাইল দীপুর দিকে ফায়ার হচ্ছিল। ওদিকে কান হ্যাঁচড়ানো শেষ হলে শুরু হল থাপ্পড়। হাই ভেলোসিটি থাপ্পড় সব।
তবু দীপুর চোখ থেকে হাসির ছলছল যাচ্ছিল না। অমিয়বাবু যতবার দীপুর চোখের সামনে লাল কালি ছোপানো অঙ্ক টেস্টের খাতা মেলে ধরছিলেন; ততবার দীপুর মুখ ঝলসে উঠছিল। দীপুর গাল লাল, কতকটা থাপ্পড়ে কতটা ভালো লাগায়। লাল ছোপ ছোপ সাদা খাতার পাতায় যে কী ভালো লাগছিল দেখতে।
অবিকল, অবিকল সে'রকম।

গত পরশু কিচির নাচ ছিল, পাড়ার রবীন্দ্র-নজরুল সন্ধ্যায়। কিচি পায়ে আলতা পরেছিল। গতকাল বিকেলে কিচি এসেছিল স্কুলের পর; অমুদের পুরনো বাড়ির ছাদে। জলের ট্যাঙ্কির ওপর উঠে বসেছিল; কেড্‌স খুলে - পা দুলিয়ে দুলিয়ে দীপুকে বলছিল ক্যালকুলাসকে ও কতটা ভালোবাসে। দীপু জানে কিচি প্রফেসর ক্যালকুলাসের কথা বলছিল না; তবু দীপু প্রতিবাদ করেনি। সে শুধু কিচির পায়ের মোজার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়েছিল; নীল বর্ডারের সাদা মোজা আলতা কাঁচা লালে ছোপানো; অবিকল বৃষ্টি ভেজা অঙ্ক খাতার লাল লাল ছোপের মত। অবিকল। অবিকল।

কিচিকে ছাদে বড় মানায়। কিচিকে বিকেলের ছাদে বড় মানায়। আর অমিয়বাবুকে মানায় ক্লাসে; ডাস্টার হাতে।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু