Skip to main content

ব্যালকনির রাজ্যে

ব্যালকনির রাজ্যে তখন বিকেলের মরসুম।
মহারাজের পরনে পাজামা, গায়ে নামাবলির মত জড়ানো গামছা, মাথায় ব্যাথা। কাঠের ছোট্ট টুলের সিংহাসনে সেঁটকে বসে।
মহারানী ডেস্পোটিক মেজাজে মহারাজের মাথায় জবাকুসুম তেল মালিশ করে চলেছেন। আঙুল চটাপট চাপড়ে যাচ্ছে মহারাজের চওড়া বাঁটুল ভক্তিতে লটপট কপাল।
মহারাজ বার্তা পাঠালেন "রানী, তোমার আঙুলে ফ্রেঞ্চ আঙুরের গন্ধ। জানো?"
মহারানী ধাঁচিয়ে উঠলেন "পাঁচ মিনিট আগে মাছ কেটেছি। আঙুরের গন্ধ? ন্যাকার ডিম"।

মহারাজের মুখে হাসির হিরের ঝিলিক; "পাবদার দাম জানলে এ গন্ধকে ছোট করতে না গো, তোমার আঙুলে পাবদার সুবাস মিশে ওয়াইন আলবাত তৈরি হয়। বিকেলে ওয়াইন আর তার সাথে রাতের হেঁসেলের তেল হলুদ মিশে তোমার আঙুলগুলোর মুণ্ডুতে তৈরি হয় চাঁদনি রাতের জাদু চোলাই। তবে খেয়াল করে দেখো, আমার মধ্যে লোভ নেই। আমি তোমার আঙুলেই কনটেন্ট। আমি এসেনশিয়ালি বাউল"।
রানী ভেবে বলেন "তুমি একটা গবেট"।
এমন সময় কী হওয়ায় রানী গবেট ছেড়ে উঠতে যান। অমনি শাড়ির কোণ ধরে টান। অমনি রাস্তায় ঘুগনিওলার ঠেলা বেয়ে চলে যাওয়ার ডাক। অমনি মহারাজ গানের ল্যাসোতে রানীকে বাঁধেন;
"চিরসখা হে.....ছেড়ো না"!

রানী আঁতকে ওঠেন "এটা সুর? "
থমকে রাজা সারেণ্ডার করেন "আসলে ঘুগনিওলা স্কেলটা এমন চড়ায় বেঁধে দিয়ে গেল"।
রানীর পাশে গুটিসুটি এগিয়ে এলেন রাজাধিরাজ ; "বুঝলে। এবার থেকে এই গানটাই ব্যালকনির অ্যান্থেম, তোমার আঁচল আমাদের পতাকা, সেটা বহিবারে আমায় দাও শকতি"।
রানী বার দুই গবেট বলে ফের হাতের তালুতে জবাকুসুমের দু'ফোঁটা নিলেন।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু