Skip to main content

অবিচুয়ারি

চোখ ডলতে ডলতে দরজা খুলে ব্যালকনিতে এলেন অনল। সানডে লেট মর্নিংটা হকের ব্যাপার। রোল পাকানো টাইমস অফ ইন্ডিয়াটা খুলে অভ্যাসবশত পাতাগুলো ফরফর করে একবার উল্টে গেলেন তিনি।


বারো নম্বর পাতায় এসে চোখ গেল আটকে। নিচের দিকে ডান কোণে রয়েছে ব্যাপারটা। অবিচুয়ারি। ইন দ্য লাভিং মেমরি অফ অনল সেন। বোঝ। সঙ্গে তার ছবি। 

-অনলবাবু ভেতরে আসুন প্লীজ। ভুল ব্যালকনিতে রয়েছেন আপনি। 

অনল অবাক হয়ে দেখলেন বেডরুমের ব্যালকনিতে এক অপরিচিত মুখ দাঁড়িয়ে। 

- আরে ভেতরে আসুন না অনলবাবু।

একরকম অনলের  হাত ধরে জোর করে ঘরের মধ্যে নিয়ে এলেন ভদ্রলোক।

- আরে আপনি কে মশাই? হু আর ইউ?
- দেখলেন তো অনলবাবু! কী গোলমালটাই না পাকিয়েছেন আপনি।
- বেরোন। বেরোন বলছি।
- যাব কোথায়? উপায় নেই তো। সব দোষ আপনার।
- মানে?
- মানে ওই ঘুমের চোখে ভুল দরজা খুলেই করলেন গণ্ডগোল। এখন বুঝুন ঠ্যালা।
- এর মানে কী? আপনি উন্মাদ। রাখহরি! এদিকে।
- আচ্ছা লোক মশাই আপনি। খুললেন গলত দরওয়াজা। এখন ডাকছেন রাখহরি। বলি সে এখানে আসবে কী করে?বোঝ ঠ্যালা। আরে আপনি তো ঘুমের চোখে দু'মাস পরের দরজা খুলে ফেলেছেন।
- ননসেন্স।
- কী মুশকিল। বিশ্বাস অবিশ্যি করবেনই বা কী করে। এই টাইম অ্যানোমালি এত রেয়ার। 
- দু'মাস পরের দরজা মানে? এটা আমার ব্যালকনির দরজা। 
- বোঝ। তাই তো বলছি। ওইটে আপনার দু'মাস পরের ব্যালকনি। এমন কেয়ারলেসলি দরজা খুললে এই হবে। বিশ্বাস না হয় খবরের কাগজের ডেটটা দেখুন।
- কী যাতা বলছেন।
- দেখুন না। তারিখটা।
- জ্যা....জ্যানুয়ারি।
- করেক্ট। 
- আর এটা নভেম্বর।
- এটাও জানুয়ারি। তবে আপনি নভেম্বরের। ভেবেছিলাম দরজা দিয়ে ফের ভেতর নিয়ে আসলে আপনি নভেম্বরের বেডরুমে ফেরত আসবেন। কিন্তু হল না।
- মাথ গুলিয়ে যাচ্ছে।
- ন্যাচুরালি। নস্যি নেবেন?
- না। থ্যাংকস।  আপনি কে?
- টাইম অ্যানোমালি ম্যানেজার। কম্পলেক্স ব্যাপার।
- আপনি মানুষ নন?
- ইট ইজ কম্পলিকেটেড। তবে হতেও পারি।
- আচ্ছা এখন বেরোলে কি আমি জানুয়ারির রাস্তায় বেরোব?
- পারবেন না। আপনার এখন সাস্পেন্ডেড স্টেট। এ ব্যালকনি আর বেডরুম জানুয়ারির। আপনি নভেম্বরের। সরি আপনি বেরোতে পারবেন না।
- আচ্ছা ওই অবিচুয়ারিটা। আমি কি ইয়ে, মারা যাব? 
- অবিচুয়ারি?
- আমার নামে। জানুয়ারির কাগজে। এইখেনে।
- বটে। কী সাংঘাতিক। এমনটা তো হওয়া উচিত নয়। হলে আপনি সেই ভূল দরজার নাগাল পেলেন কী করে?
- আমি না কিচ্ছু বুঝতে পারছি না। কিচ্ছু না।
- এবার তো আমিও কনফিউজড। এটা আপনারই অবিচুয়ারি? আর ইউ শিওর?
- অফ কোর্স।
- যাচ্চলে। নিজের মৃত্যুর পরের টাইমলাইন তো টাচ করতে পারা উচিৎ নয়। সময় তৈরিতে এত বড় গলদ? যাঃ শালা।
- আমি জানুয়ারি বাইশের আগে মারা যাব?
- অবিচুয়ারি তো তাই বলছে। কিন্তু ইয়ে, সরি অনলবাবু। জানুয়ারিতে আপনার মরা হচ্ছে না। আপনার মরা তো আর টাইমের কনসেপ্টের চেয়ে বেশি জরুরী হতে পাতে না।
- আরে আমি নিজেও কি ছাই মরতে চাই নাকি? 
- আরে অমন দুম কর দরজা কেউ খোলে? কী ফ্যাসাদ। এখন সময়ের থিওরিকে বাঁচাতে আপনার মৃত্যুকে নিয়ে গোঁজামিল করতে হবে।


***
- ইন্সপেক্টর অনল...ইন্সপেক্টর অনল...ক্যান ইউ হিয়ার মি....।
- স্যার....।
- বল অনল। বল। 
- মি...মি...
- মিনি গুণ্ডা ধরা পড়েছে।
- আমি...গুলি....গুলি লেগেছে...।
- টু বুলেটস। বাট বি ব্রেভ। হস্পিটাল আর বেশিদূর নয়।
- টু মাচ ব্লিডিং...।
- হোল্ড অন অনল। বেস্ট ডক্টরস আর ওয়েটিং ফর ইউ।
- হোয়াট আই নিড...।
- কী চাও ইন্সপেক্টর,  জাস্ট টেল মি...।
- দেয়ার ইজ অনলি ওয়ান ওয়ে টু সেভ মি স্যার...।
- কী অনল, টেল মি।
- টা...টাইমস অফ ইন্ডিয়ায়...। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার কাল...কালকের এডিশনে...।
- কালকের এডিশনে...? কালকের এডিশনে কী ইন্সপেক্টর?
- আমার নামে একটা অবিচুয়ারি...প্লীজ।
- হোয়াট? হোল্ড অন টু ইওরসেল্ফ ইন্সপেক্টর।  তুমি বাঁচবে।
- দ্য অবিচুয়ারি...ইজ...ইজ দ্য অনলি ওয়ে টু সেভ মি...প্লীজ।
- কী বলছ?
- প্লীজ বস। প্লীজ।
- অনল...অনল...অনল!!!!

Comments

Unknown said…
Valo likhchhen.
T20 theke Test khelchhen dekhte chai, valo lekha pate porbe tobe, asha korte parbo.
Unknown said…
Valo likhchhen.
T20 theke Test khelchhen dekhte chai, valo lekha pate porbe tobe, asha korte parbo.

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু