Skip to main content

ধর্ম, ব্লগ আর এক ঘেয়ে খুন-টুন

"আমরা কেউ ধর্মে বিশ্বাস করি, কেউ হয়ত ধর্মকে পরিত্যাগ করিনি কিন্তু ধর্ম নিয়ে মাথাও ঘামাই না, কেউ কট্টর নাস্তিক আবার কেউ বা ধর্মনিরপেক্ষ – কিন্তু একটা জায়গায় আমাদের গভীর মিল আছে, আমরা সবাই বাকস্বাধীনতায় প্রবল ভাবে বিশ্বাসী। আর সেই জন্যই রাজীব হায়দার, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাস, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়রা যে কথাগুলো বলতে চেয়ে প্রাণ হারালেন সে কথাগুলো যাতে হারিয়ে না যায় তার জন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাব, ওনাদের সঙ্গে আমাদের মতাদর্শের মিল আছে কি নেই সেটা এই মুহূর্তে অবান্তর প্রশ্ন। কথাগুলো পৌঁছে দেওয়ার অভিপ্রায়েই সা্রা বিশ্ব জুড়ে একাধিক ব্লগার কীবোর্ড নিয়ে বসেছেন, সেই লেখাগুলো সঙ্কলিত করে দেওয়া হল পাঠকদের জন্য – তালিকাটি দেখা যাবে এই ব্লগপোস্টের শেষে। ] 


১। 

- ঈশ্বরে বিশ্বাস আছে তাহলে তোমার?
- অফ কোর্স আছে।
- আজকাল তো এডুকেটেড লিবারেটেড মাইন্ড মানেই বাতিকগ্রস্ত। ঈশ্বর বিশ্বাসটাই তো এ যুগে ব্ল্যাস্‌ফেমি।
- পরম কল্যাণময়ের প্রতি বিশ্বাস না রেখে উপায় কী আছে বলুন স্যার। নয়তো জীবনটাই তো বৃথা।
- ভেরি গুড ইয়ং ম্যান। শুনে বেশ ভালো লাগছে। বটেই তো। পরম কল্যাণময় বিনা এ মানব জীবন যে মূল্যহীন। তোমার মত অল্প বয়েসির মুখে এমন কথা শুনে গর্ব হচ্ছে। এই জেনারেশন এখনও উৎসন্নে যায়নি। তুমি তোমার ঠুনকো শিক্ষার বেসিসে বোকার মত লজিকে ঠুসে ঈশ্বর কে কোণঠাসা করতে চাইছ না। এই তো চাই।
- একেবারেই তাই স্যার। আর আমার শিক্ষাও তো সেই ঈশ্বরে ভর দিয়েই।
- বাঃ, বাঃ, ঈশ্বরে ভরে দিয়ে শিক্ষালাভ। চমৎকার আপ-ব্রিঙ্গিং। তোমার সাথে আলাপ করে বড় ভালো লাগল বাবা। এই তো চাই। তোমরাই এ যুগের আলো। শ্রী কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ বা অন্য কেউ- একজনকে অন্তত হৃদয়ের মার্গ দর্শক করে জীবন অতিবাহিত না করতে পারলে, পরকালে কে দেখবে বাবা?
-পরকাল? পুজোর ছুটিই প্ল্যান করতে পারলাম না স্যার। সমস্ত ট্রেনে ওয়েটলিস্ট। তবে যে ক্যারেক্টারদের নাম করলেন, তাঁদের ব্যাপারে সামান্য পড়াশোনা আমার আছে বইকি।
-ক্যারেক...মানে...কৃষ্ণ,বুদ্ধ...?
-যীশু , মহম্মদ। ভারী ইম্প্রেসিভ সব পার্সোনালিটি স্যার।
-পার্সোনালিটি? মানব সভ্যতার উন্মেষ যে তাঁদের হাত ধরেই। ঈশ্বর তো তাঁদের মধ্যে দিয়েই ম্যানিফেস্টেড।
-রিয়েলি? মানব ইতিহাস তো আশি হাজার থেকে এক লাখ বছরের। সে হিসেবে এই ভদ্রলোকেরা তো জাস্ট রিসেন্টলি পিক্‌চারে এসেছেন।
-ভদ্রলোকেরা মানে? তুমি এতক্ষণ ঠাট্টা করছিলে?
-না মানে। তাদের এন্ট্রির আগেই কত হাজার হাজার মানুষ কষ্টে, দুঃখে, রোগে, ভোগে, অজ্ঞানতায় সাবাড় হয়ে গেলেন তো। কাজে কাজেই মানবতার উন্মেষ সেই ভদ্রলোকদের হাত ধরে ঘটেছে, সেটা কানে কেমন যেন ঠেকল স্যার। আমার ফুল রেস্পেক্ট আছে তাঁদের প্রতি বাই দি বাই।
-এতক্ষণ ছিচকেমি করছিলে ? এই তোমার ঈশ্বর বিশ্বাস?
- রেস্পেক্টটাই কী যথেষ্ট নয়?
- সাবমিশন। কমপ্লিট সাবমিশন টু দ্য হোলি মাস্টার। টু দ্য অল মাইটি। দ্যাট ইজ রেস্পেক্ট।
- অল মাইটি স্যার? অল মাইটিই যখন তখন মানুষের মঙ্গল সাধনে এত দেরী করে এলেন কেন? প্রথম আশি হাজার বছর কী পরমেশ্বরের কোলে রাখা পপকর্ণের টাবটা ভরা ছিল? অল মাইটি মানে কী তারা যা খুশি তাই পারেন? ওই কমপ্লিট সাবমিশন না থাকলে কি বিপদ হতে পারে? ভক্তি অন গান-পয়েন্ট?
- থাম! থাম! আহাম্মকি। ঈশ্বর বিশ্বাসের নামেই যত সারকাজ্‌ম উপচে আসে না? অবিশ্বাসীর দল। যত্তসব ফ্যান্সি শো-বাজ নাস্তিকতা।
- আমি বাঙালি স্যার। নাস্তিক হওয়ার উপায় আছে?
- মানে?
- মানে আমি আলবাত ঈশ্বরে বিশ্বাসী; বিদ্যাসাগরে। ঠাকুর না মেনেও উপায় নেই- গুরুদেব বলে কথা। আর ইসলামেও আছি- নজরুল ইসলামে।

২। 
-গিল্টি!
-ইওর অনার, আমি শেষ বারের জন্য অনুরোধ করছি চটজলদি সিদ্ধান্তে আসার আগে অন্তত একটিবার বিবেচনা করে...।

-এ বিষয়ে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই। অপরাধীরর দোষ প্রমাণিত। আর ঘৃণ্যতম এ অপরাধের শাস্তি একটাই।

-দোহাই ধর্মাবতার, অপরাধী কে ফাঁসি দেওয়ার হুকুম দিন, কিন্তু ওই শাস্তি দেবেন না। 

-আমি নিরুপায়, আইনে নাস্তিকতার শাস্তি একটাই।
-ইওর অনার...!!!!
-এ আদালতের বিচারে আসামীর অপরাধ প্রমাণিত এবং কঠোরতম শাস্তি তার প্রাপ্য। আদলত আদেশ দিচ্ছে; অবিলম্বে আসামী যেন ধর্ম ও যুক্তিবাদ নিয়ে ব্লগ লেখা শুরু করেন।


৩। 
পার্সেলটা দেখেই দিল খুশ হয়ে গেল তাঁর।
হুড়মুড় করে ঝাঁপিয়ে পার্সেলটা খুলতেই বেরিয়ে এলো এক ঝাঁক ফুল,সুরাবোতল ভরা প্রার্থনা, সোনা-হীর ভরা কয়েকটা থলে আর কয়েক বাণ্ডিল টাকা। কিন্তু আসল জিনিষটাই নেই দেখে তাঁর মাথায় রক্ত চড়ে গেল; মাথায় গনগনে আঁচ।
থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে নম্বরটা ডায়াল করলেন ঈশ্বরবাবু। অন্যদিক থেকেই হ্যালো ভেসে আসার আগেই ঝাঁপিয়ে পড়লেন তিনি -
"এসব পাতি ভেটে আমায় ভোলাবে ভেবেছ বেতমিজের দল? এই জন্য কমিশন দিয়ে তোমাদের পুষছি? ব্লগারের সদ্য উপড়ানো হৃৎপিণ্ড কই? কই? কই? কই?"

৪। 


৫।

-আস্তেজ্ঞা হোক স্যার। বস্তেজ্ঞা হোক স্যার।

-বাঃ, বাঃ, মৃত্যুলোকেও এমন চমৎকার রেস্তোরাঁ? ভাবাই যায় না। তা হে ওয়েটার, মেনু লাও। জলদি জলদি।

-আমাদের এখানে দু' ধরণের মেনু স্যার। আস্তিক মেনু আর নাস্তিক মেনু। আপনার জন্য কোনটা আনব স্যার?

-হোয়াট? আস্তিক মেনু আর নাস্তিক মেনু? তফাৎ কী দু'টোতে?

-আজ্ঞে দু'টো মেনুতে সবই এক শুধু একটাই ছোট্ট ফারাক।

-কী ফারাক?

-আজ্ঞে আস্তিক মেনুতে রয়েছে চাপাটি আর নাস্তিক মেনুতে চাপাতি।

****

অন্য লেখাগুলো ঃ 

Plight of secular bloggers in Bangladesh (কৌশিক দত্ত)

আহত কলম (তপব্রত ব্যানার্জি) 

আইডিয়া (অভিষেক মুখার্জি)  

আমার মহানবী ( রোহোণ কুদ্দুস) 

ঊনচল্লিশের এক এবং অন্যান্য – বাংলাদেশ প্রসঙ্গে (প্রবীরেন্দ্র চ্যাটার্জি)

অভিজিৎ রায় হত্যা প্রসঙ্গে (প্রবীরেন্দ্র চ্যাটার্জি)

আজকের খবরে অভিজিৎ মৃত (শিঞ্জিনী সেনগুপ্ত)  

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি (শিঞ্জিনী সেনগুপ্ত)

ধর্ম  (BongPen- অন্য পোস্ট)

Know that You have Won (অমৃতরূপা কাঞ্জিলাল)

ফিসফাস ( সৌরাংশু )

Comments

Rohon said…
আমি আলবাত ঈশ্বরে বিশ্বাসী; বিদ্যাসাগরে। ঠাকুর না মেনেও উপায় নেই- গুরুদেব বলে কথা। আর ইসলামেও আছি- নজরুল ইসলামে।

আহ! দিলখুশ।
Anonymous said…
বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে সোজা খুন ছবিটা নিলাম। প্লিজ কিছু মনে করবেন না।
কিছু বলার নাই। প্রতিবাদ করা দূরে থাক, এই ধরণের লেখা শেয়ার দিতেও ভয়ে কুঁকড়ে যাই! চারপাশে শিক্ষিত মূর্খদের আধিক্য দেখি। আমিও তাদের একজন হয়ে যাই।
debalina said…
Rokto phunte other r chokhe jol asar shobdo lekhar kolom amar nei...Tobu chup Kore thakata osombhob mone holo

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু