Skip to main content

প্রফেসর গুপ্তর উপাখ্যান

-আমি কোথায়??
-আমার বাড়িতে।
-আপনি কে?
-আমি প্রফেসর আর গুপ্ত।
-এটা কেমন নাম?
-খুব গন্ডগোলে ঠেকছে, তাই না?
-খুব।
-তার কারণ আপনাদের সময় এমন আধুনিক নামের চল ছিল না।
-আমাদের সময় মানে??
-মানে আপনি হলেন আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগের মানুষ।
-ঠাট্টা করছেন?
-আরে না না। আপনাদের সময় টাইম ট্র‍্যাভেল ব্যাপারটা ছিল না তো। তাই আপনার এমন আজগুবি ঠেকছে।
-টাইম কী?
-ট্র‍্যাভেল। মানে সময়ের এপার থেকে ওপারে যাওয়ার প্রযুক্তি। এসব তো এখন জলভাত। অবিশ্যি সময়ের পিছন দিকে যাওয়াটা আইন বিরুদ্ধ। তবু রিস্ক আমায় নিতেই হল বুঝলেন। দুম করে হাজার খানেক বছর পিছিয়ে গিয়ে প্রথমে আপনাকে নজরে এলো। ব্যাস। ক্লোরোফর্ম আপনার নাকে চেপে উঠিয়ে নিয়ে এলাম। কিছু মনে করেননি তো ভাই?
-আমার মাথাটা কেমন করছে।
-চিন্তা করছেন কেন মশাই? আপনাকে আপনার সময়ে ফেরত পাঠিয়ে তবে আমার সোয়াস্তি। আপনাকে শুধু আমার একটা কাজ করে দিতে হবে। না করলে মানছি না, এই বলে রাখলাম।
-কী কাজ?
-আমি একটা তাবড় সুদীর্ঘ উপাখ্যান লিখেছি। দুরন্ত কেতাব। কিন্তু প্রকাশ করতে পারছিনা।
-কেন?
-লজ্জার কথা মশাই। এ যুগে আমরা এখন টাইম ট্র‍্যাভেল করতে পারি, কিন্তু পর্ন দেখা বা পড়া বারণ। পর্ন ব্যান রয়েছে যে। আদিরস নিয়ে আদিখ্যেতা এই আধুনিক যুগে অপরাধ। এদিকে আমার এই বইটি আমি লিখেছি বহু বছর অক্লান্ত ভাবে গোপন রিসার্চ চালিয়ে। কিন্তু প্রকাশ করার উপায় নেই। করলেই সোজা জেল।
-এতে আমি কী করতে পারি?
-সব পারেন মশাই। আপনিই সব পারেন। আপনি তো আর আধুনিক ভারতে পয়দা হননি। আপনাদের আদিম যুগে তো আর পর্ন ব্যান করেনি কেউ। আপনাকে শুধু আমার এই লেখাটা আপনার যুগে নিয়ে গিয়ে প্রকাশ করতে হবে। এ যুগের গভর্নমেন্ট না বুঝুক, আপনাদের যুগের মানুষ অন্তত বুঝবে এ কেতাব কতটা মূল্যবান। কথা দিন আপনি আমার এ অনুরোধ ফেলবেন না। আমি আপনার যুগোপযোগী ভাষার একটা অনুবাদ অলরেডি তৈরি রেখেছি। আপনি নিজের নামেই এ লেখা প্রকাশ করুন। খ্যাতি যশ আপনারই থাক। কিন্তু এই আদিরসাত্মক উপাখ্যানটিকে এই পর্ন ব্যানের অন্ধকার থেকে আপনি রক্ষা করুন প্লীজ। অরাজি হবেন না। 
-অরাজি হয়ে কী উপায় আছে! বেশ, তাই হবে। ও লেখা আমি নিজের নামে প্রকাশ করব। এবার আমায় তাড়াতাড়ি আমার সময়ে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করুন দয়া করে।

-ওহ! যাক, একটা বোঝা আমার বুক থেকে নেমে গেল। মানব ইতিহাস আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে...মিস্টার...ইয়ে...এই দেখুন...আপনাকে সময়ের ওপার থেকে চুরি করে এনে, এতক্ষন গপ্প করে, নিজের গোপন লেখা পর্যন্ত গছিয়ে দিলাম অথচ আপনার নামটাই তো জানা হয়নি।
-আমার নাম? শ্রী বাৎস্যায়ন।

Comments

Possible. Quite possible.

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু