Tuesday, April 28, 2020

ট্যুইটস অফ আইসোলেশন - ৫


ট্যুইটস অফ আইসোলেশন - ৫

- হবে গো হবে।

- কী হবে?

- নিজের স্যানিটাইজড হাতে স্পষ্ট দেখতে পারছি।

- কী আছে?

- পাহাড়। এ' ভাইরাস ব্যাটাচ্ছেলের মাস্তানিটাই শেষ কথা নয়।

- সঙ্গে আছি। ইন সিকনেস অ্যান্ড ট্র‍্যাভেল।

- প্লীজ,কাঠের বাড়িতে থাকব।

- সে'খানে ছবির মত ব্যালকনি!

- লাঞ্চের পর রোদ পিঠে বসব সেখানে; সঙ্গে তালমিছরির ডিবে।

ট্যুইটস অফ আইসোলেশন - ৪


ট্যুইটস অফ আইসোলেশন - ৪

- সব চুকেবুকে যাক! তারপর কেল্লায় গিয়ে রাজারাজড়ার মত তম্বি করে আসব।

- কেল্লাফতে প্ল্যান করলেই হবে? দুজনে মিউচুয়ালফান্ডে যা রেখেছিলাম, সব ডকে। কপালে সেই ব্যান্ডেল চার্চ।

- সিংহকে নটেশাক দেখিও না তো! করোনা কাটলেই কেল্লা চলো।

-কানের দুল বরং পরের বছর।

- আমার কোটও।

- চলো কেল্লা।

ট্যুইটস অফ আইসোলেশন - ২


ট্যুইটস অফ আইসোলেশন - ২

- এসব কেটে গেলে একদিন পাহাড়ে যাবো, কেমন?

- জরুর। জরুর। 

- খুব শিগগিরি এসব কেটে যাবে, তাই না?

- জরুর। জরুর। 

- তারপর স্বস্তি। ট্রেনের আপার বার্থে শুয়ে বই পড়তে পড়তে শিলিগুড়ি। 

- অথবা দিল্লী। 

- তারপর দার্জলিং। 

- অথবা লাদাখ। 

- কেটে যাবে এসব, তাই না?

- জরুর। জরুর।

ট্যুইটস অফ আইসোলেশন - ৩


ট্যুইটস অফ আইসোলেশন - ৩

-এমন একটা বেঞ্চি খুঁজে বের করতে হবে বুঝলে। 

-সঙ্গে ফ্লাস্কে একটু কফি। 

-মন্দ নয়। 

-চীজ স্যান্ডউইচ। 

-তোমার আবার বাড়াবাড়ি। 

-আইসোলেশনে টানা ফেনাভাতে রয়েছি,একটু ভাবতে দাও। 

-বেশ স্যান্ডউইচ। আর বাঁটুল সমগ্র। 

-চুমু। চুমু।

-সব সামলে উঠব আমরা, কী বল?

-আলবাত। চুমুর দিব্যি।

ট্যুইটস অফ আইসোলেশন - ১

ট্যুইটস অফ আইসোলেশন - ১

***

মহামারীর মধ্যে দাঁড়িয়ে টের পাচ্ছি নিজেদের মধ্যে কৃতজ্ঞতা-বোধের কী নিদারুণ অভাব এদ্দিন জমেছিল।

এই দুর্দিনে বাড়ির জলের ফিল্টার বিগড়লো। ফোন করতেই অ্যাকুয়াগার্ডের কর্মী রাণাবাবু এসে পড়লেন চটজলদি, মুখে মাস্ক পিঠে ভারী ব্যাগ।

চাকরীর দায়।

কৃতজ্ঞতায় নুয়ে না পড়ে উপায় আছে?

***

হাত ধুয়ে ধুয়ে যা অবস্থা দাঁড়িয়েছে, আর ক'দিন এ'ভাবে চললে বাড়ির সাবানগুলো নিজের হাত দিয়ে ঘষে সাফ করে দিতে পারব।

***

একটা জরুরী ওষুধ সংগ্রহের জন্য বেরিয়েছিলাম। তড়িঘড়ি ফেরার পথে দেখলাম মিষ্টির দোকানে ভীড়, রোল-চাউমিনের জন্য হুড়মুড়, এমন কী মোবাইলের দোকানে ক্রেতাদের ব্যস্ততা। 

জানি ব্যবসা বন্ধ মানে কত মানুষের পেটে   টান পড়বে। সব বুঝি। কিন্তু এই ভীড় দেখে গা শিউরে উঠছে।

***

বিভ্রান্ত হব না।
হাত ধোব।
বাতেলা ঝাড়ার স্বার্থে নিয়ম/সতর্কতা অমান্য করব না।
হাত ধোব।
গাঁজাখুরির বানান 'সায়েন্স' নয়, সে'টা মাথায় রাখব।
হাত ধোব।
খেজুরে দরকারে বাড়ির বাইরে পা রাখব না।
হাত ধোব।
হেল্পলাইনগুলো সম্বন্ধে সচেতন থাকব।
হাত ধোব।
কন্সপিরেসি থিওরি কপচাব না।
হাত ধোব।

***

সাবান যে কাজ বেশি হয় তা নিয়ে সন্দেহ নেই।তাছাড়া মানসিক ব্যাপারটাও দেখতে হবে তো। 

স্যানিটাইজারের স্বভাব বড় চাপা। ছুমন্তর গোছের কাজ, এই আছে এই নেই। তুলনায় হাত সাবানের ফেনায় ভরে যাওয়া যে কী অপরিসীম তৃপ্তির; কনফিডেন্সের বেলুন রীতিমতো ফুলেফেঁপে ওঠে।

Wednesday, April 22, 2020

আলমারি

চারুশিলা আজ আনন্দে ডগমগ; তিনি সকাল থেকে কিছুতেই স্থির হয়ে বসতে পর্যন্ত পারছেন না। একবার ছুটে ঝুল-বারান্দায় গিয়ে নীচে রাস্তার দিকে উঁকি মারছেন তো পরক্ষণেই আবার হেঁসেলে ঢুকে কমলার মাকে রান্নার  খুঁটিনাটি টেনে হাজারটা প্রশ্ন করে অস্থির করে তুলছেন৷ ঘরের সমস্ত আসবাব নিজের হাতে বারবার পুছেও যেন ঠিক তৃপ্ত হতে পারছেন না। 

মাঝেমধ্যেই দেওয়াল ঘড়ির দিকে  উদগ্রীব হয়ে তাকাচ্ছেন তিনি; অথচ কাঁটা যেন এগোতেই চায় না ছাই। এই সোয়া বারোটা, এই বারোটা সাতাশ, এই বারোটা বত্রিশ৷ কখন যে পৌনে পাঁচটা বাজবে, তখন খোকার ট্রেন ঢুকবে স্টেশনে৷ রেলস্টেশন থেকে  বাড়ি পৌঁছতে খোকার আরও মিনিট চল্লিশেক সময় লাগবে। 

কতদিন পর। কতদিন পর খোকা ফিরছে৷ প্রায় বছর খানেক পর বাড়ি ফিরছে খোকা কিন্তু মায়ের মনের ভিতর এমন তোলপাড়; যেন কত যুগ পর ফের খোকাকে দেখবেন তিনি। নতুন চাকরীর এমনই চাপ যে বছরখানেক বাড়িমুখো হতে পারেনি খোকা; এদ্দিন পর কয়েকদিনের ছুটি পেতেই সে ফিরছে।

খোকার ঘর, বিছানাপত্র সব নিজের হাতে সাজিয়েগুছিয়ে বিকেল চারটে নাগাদ নিজের শোওয়ার ঘরে গেলেন চারুশিলা। আলমারি বোঝাই শাড়ি অথচ খোকা না থাকলে তার সে'সব ছুঁয়েও দেখতে ইচ্ছে করে না। খোকার বাবা প্রায়ই বকাঝকা করেন, বলেন "এ দুনিয়ায় তুমিই কি একমাত্র মা নাকি যার ছেলে চাকরীর জন্য ঘরছাড়া"? কিন্তু তাঁর মন সরে না তাতে। আলনার ঝুলে থাকা কয়েকটা আলুথালু শাড়ি উল্টে পাল্টে পরেই বছর খানেক কেটে গেছে। আজ বহুদিন পর চারুশিলার ইচ্ছে হল আলমারিটা খুলে ভালো একটা শাড়ি বের করে পরতে৷ আজ খোকা ফিরছে বলে কথা। 

এদ্দিন পর আলমারিটা খোলার কথা ভেবে চারুশিলার যে কী ভালো লাগছিল। শাড়ি আর ন্যাপথালিন মেশানো গন্ধ, সোনাগয়না রাখা লকার; সব মিলে এই সাতাশ বছর পুরনো নিজের বিয়ের আলমারিটা চারুশিলার বড্ড প্রিয়। কত অলস দূপুর তার কেটেছে এ আলমারির পাল্লা হাট খোলা রেখে বিভিন্ন শাড়ি ঘাঁটতে বা সোনাগয়নার গায়ে হাত বুলোতে৷ একসময় দিনে অন্তত একবার এ আলমারি তিনি ঘাঁটতেন আর প্রাণ ঢেলে গোছাতেন। শুধু খোকা যাওয়ার পর এমন মনমরা হয়ে পড়লেন যে আলমারির কথা তার মনেও পড়ত না। 

এদ্দিন পর আলমারি খোলার কথা মনে পড়তেই চারুশিলা বুকের মধ্যে একটা বাড়তি চনমন বোধ করলেন। বিছানার তোশকের নীচ থেকে চাবিটা বের করে এগিয়ে গেলেন আলমারিটার দিকে। 

আলমারি পাল্লাটা খুলতেই একটা ঝোড়ো হাওয়ায় চারুশিলার চারপাশটা কেমন এলোমেলো হয়ে গেল। মাথাটা গেল ঘুরে, একটা বিশ্রী গা গোলানো আনচান চেপে ধরল তাঁকে। কিছুক্ষণের জন্য যেন চোখে অন্ধকার দেখলেন তিনি। খানিকটা ধাতস্থ হওয়ার পর যখন দৃষ্টির ঝাপসা ভাবটা কেটে গেল; তখন চারুশিলা টের পেলেন তাঁর গলাটা শুকিয়ে কাঠ। কারণ আলমারির পাল্লা খুলে তিনি শাড়ি গয়নার সম্ভার নয়, দেখতে পেলেন নিজের শোওয়ার ঘরটাকেই৷ কিন্তু শোওয়ার ঘর, ওই খাট, ওই দেওয়াল ঘড়ি; এ'সব তো তাঁর পিছনে থাকার কথা। আলমারির মধ্যে শাড়ি গয়নার বদলে তাঁর শোওয়ার ঘরটা উঠে এলো কী করে৷  চারুশিলা মাথার ভিতরটা কেমন ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। মন্ত্রাবিষ্টের মত নিজের আলমারির ভিতরে পা বাড়ালেন তিনি। অথচ আলমারির ভিতরে নয়, চারুশিলা এসে দাঁড়ালেন নিজের শোওয়ার ঘরেই। এই পালঙ্ক, এই মেঝে, এই জানালা; সবই তাঁর সুপরিচিত।

আর ঠিক তখনই তাঁর চোখ পড়ল সামকে দাঁড়ানো দু'জনের দিকে। দু'জনের একজন খোকা; খোকার সামনে তিনি দাঁড়িয়ে অথচ খোকা  যেন তাঁকে দেখতেই পারছে না। খোকার দৃষ্টি বিহ্বল,  ছলছলে। "খোকা" বলে প্রাণপণে চিৎকার করতে চাইলেন চারুশিলা অথচ মুখ থেকে একটা শব্দও বেরোল না কারণ ততক্ষণে তাঁর দৃষ্টি টেনে নিয়েছে খোকার পাশে দাঁড়ানো ওই বিশ্রী মানুষটা। 

মানুষটা চারুশিলার পরিচিত নয় কিন্তু ভদ্রলোকের দিক থেকে কিছুতেই চোখ সরানো যায় না যেন। মানুষটার লাল চাদরে মোড়া দীর্ঘ দেহর দিকে তাকিয়ে চারুশিলার গোটা গায়ে কেরোসিনে পোড়া জ্বলুনি শুরু হল৷ তিনি চেঁচিয়ে বলতে চাইলেন "খোকা আমায় তুই এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দে" অথভ কিচ্ছুটি বলতে পারলেন না৷ চারুশিলার মনে হল যেন তাঁর দেহটা ছিঁড়েখুঁড়ে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ছে। 

খোকার পাশে দাঁড়ানো মানুষটা ততক্ষণে বরফঠাণ্ডা সুরে বিড়বিড় করতে শুরু করেছে;

"সুবিমলবাবু, আপনি তাঁকে দেখতে পাচ্ছেন না কিন্তু আমি পেরেছি। হ্যাঁ আপনার মাকে আমি দেখতে পেরেছি। এদ্দিনে তাঁর মুক্তির পালা। বছর পাঁচেক আগে ঘটেছিল তো দুর্ঘটনাটা? ওই যে, আপনার যে বিকেলে।বাড়িতে ফেরার কথা ছিল, সেই দুপুরেই তো? আপনাকে না দেখতে পাওয়ার দুঃখ পুষে এদ্দিন এ আলমারিতে বন্দী ছিলেন মা। আজ তাঁর মুক্তি। সামান্য ছটফট আছে বটে, কিন্তু মুক্তি এ'বার আবশ্যম্ভাবী। আলমারি কেন, সিন্দুকের আড়ালে থেকেও গুপি তান্ত্রিকের চোখকে ফাঁকি দেওয়া সম্ভব নয়"।

Friday, April 3, 2020

সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং


- মিস্টার চৌধুরী...হ্যালো...মিস্টার চৌধুরী...ক্যান ইউ হিয়ার মি? মিস্টার চৌধুরী...হ্যালো...হ্যালো..।

- হ্যালো..অভিষেক নাকি...।

- যাক...আধঘণ্টা ধরে হাঁকডাক করেও আপনার সাড়া না পেয়ে খুব নার্ভাস হয়ে গেছিলাম...।

- আমার এদিকের স্ক্রিনটা হ্যাং করে গেছিল। তার বেশি কিছু নয়...। তা তুমি কী ভাবলে..বুড়ো অক্কা পেয়েছে বোধ হয়..তাই না?

- ছি ছি, ও কথা মুখে আনবেন না প্লীজ।

- মুখে না আনলে কি ভবিতব্য আটকে থাকবে হে? মেঘে মেঘে বেলা তো কম হল না৷ সামনের শনিবার একশো দুইয়ে পড়ব। আর কদ্দিন বলো।

- বিশ্বের সমস্ত রাষ্ট্রনেতারা আপনার স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন, এ তো আপনার অজানা নয় মিস্টার চৌধুরী। আধুনিক মেডিকাল সায়েন্স দুনিয়া ওলটপালট করে দিচ্ছে আপনার জন্য...।

- তোমার রাষ্ট্রনেতাদের বোলো যে আমি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ কিন্তু বয়সের ভারে এ'ভাবে ন্যুব্জ হয়ে একাকী আর দিন কাটেনা। আমার এ'বার মুক্তির প্রয়োজন হে।

- এমন বলছেন কেন মিস্টার চৌধুরী...গোটা পৃথিবী জুড়ে আপনার যে সমাদর...দুনিয়ার প্রতিটি মানুষ আপনাকে এত ভালোবাসে...। আপনি তো আমাদের কাছে ঈশ্বরতুল্য।

- কিন্তু এই বন্দীদশা যে আর সহ্য হয় না অভিষেক।  এত খ্যাতি, এত ভালোবাসা; সবই আজকাল যন্ত্রণার মত ঠেকে। প্রাইমমিনিস্টারকে বলো এ'বার আমার মুক্তির প্রয়োজন। 

- অমন করে বলবেন না মিস্টার চৌধুরী। আর আপনি নিজেকে বন্দী বলে কেন ভাবছেন..স্রেফ সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং বই তো নয়। 

- বাহাত্তর বছরের সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং..এর চেয়ে জেলে পচলে যন্ত্রণা কম হত হে।

- আপনার সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং বাহাত্তর বছর হতে চলল? সেভেনটি ট্যু? ভাবলেই কেমন..।

- গায়ে কাঁটা দেয় না গা গুলিয়ে ওঠে?

- সমীহ হয়।

- বাহাত্তর বছর। ভাবলে কেমন আশ্চর্য লাগে যে সেই খুনে ভাইরাস পৃথিবীতে আজ সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আর কেউ তার থেকে নিজেকে বাঁচাতেও পারলে না...কেউ না। নট আ সিঙ্গল সোল..।

- কিন্তু আপনি পেরেছেন..। গোটা বিশ্বে...মানব।ইতিহাসে একা আপনি।

- কারণ আজ থেকে বাহাত্তর বছর আগে একা আমি এই খুনে ভাইরাস আর তা ঠেকাতে সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নিয়েছিলাম।

- সে জন্যেই তো পৃথিবীর সমস্ত স্কুলপাঠ্য ইতিহাসের বইতে আপনি নায়কের  মত জ্বলজ্বল করছেন মিস্টার চৌধুরী। 

- নায়ক। তা বটে। এখন আমায় নিয়ে আদেখলপনা কম দেখি না। অথচ এই আমাকেই এককালে গোটা পৃথিবীর মানুষ মিলে হেনস্থা করেছে। যে ভাইরাসের আক্রমণে জ্বর হয় না, কাশি হয় না, কেউ মারা যায় না; তার সংক্রমণের ভয়ে ইকনমি ডকে তুলে সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং..? এ যে উন্মাদের প্রলাপ। এ ভাইরাসে কী আর এমন হয়; স্রেফ সঙ্গীত তৈরির ক্ষমতা চলে যায়। এই অ্যান্টি মিউজিক ভাইরাস কোনও অদ্ভুত তন্ত্রবলে মানুষের সুর তৈরির ক্ষমতা শেষ করে দেয়; এর জন্য ইকোনমি লাটে তোলা? নৈবচ। এই  আজ যারা আমায় মাথায় তুলে নাচছে, তাক্বদের বাপ-ঠাকুর্দার দলই এককালে আমায় দুয়ো দিয়েছে। খ্যাপা মিউজিশিয়ান বলে আমায় নিয়ে মিম বানিয়ে ফেসবুক ভারি করেছে।

- আসলে...সত্যিই যে পৃথিবীর প্রতিটা মানুষই সংক্রমিত হতে পারে আর কেউই যে এ ভাইরাসকে রেসিস্ট করতে পারবে না..তেমনটা বোধ হয় সে সময় কেউই আঁচ করতে পারেনি।

- কারণ সে সময়ের মানুষ ছিল অত্যন্ত বাতেলাবাজ আর কুচুটে। যাক, যা হওয়ার তাই হয়েছে, সে ভাইরাসের আত্মপ্রকাশের দেড়বছরের মাথায় গোটা পৃথিবীতে এমন একটাও মানুষ পড়ে রইল না যে সুর বাঁধতে পারে।

- আর কোনওদিন তেমন মানুষ আসবেও না। এ ভাইরাস এখন প্রতিটি মানুষের দেহে, এ গ্রহের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে। আর আমাদের মুক্তি নেই।

- বেশ হয়েছে। এমন বেপরোয়া জাতের এই হওয়া উচিৎ। নাও, ঠ্যালা বোঝো এ'বারে৷ সাধের ইকোনমি ধুয়ে জল খাও এ'বারে। গান তৈরি করতে না পারাটা যে একটা সোশ্যাল ক্যান্সার, ব্যাটাগুলো এদ্দিনে বুঝেছে। 

- ক্যান্সারই তো। আর সে ক্যান্সারে একমাত্র আশার আলো যে আপনিই। বাহাত্তর বছর হোম আইসোলেশনে থেকে আপনি আজও মানুষকে নিত্যনতুন সুর উপহার দিয়ে চলেছেন৷ আপনি না থাকা মানে..এ দুনিয়া থেকে সুর উবে যাওয়া...।

- ইকোনমি তো ফুলেফেঁপে উঠবে। আমার সুরও যখন থাকবে না তখন লোকের ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রডাক্টিভিটি আরও খানিকটা বেড়ে যাবে। তা নিয়েই না হয় নাচানাচি কোরো সবাই মিলে।

- আপনাকে ছাড়া যে পৃথিবীটাই অন্ধকার হয়ে যাবে মিস্টার চৌধুরী।  আপনি নিশ্চয়ই সে'টা চাইবেন না।

- এদ্দিন চাইনি। কিন্তু আজ..।

- আজ? 

- আজ মনে হচ্ছে যাক, সবাই গোল্লায় যাক। কিন্তু মরার আগে আমি একটা দিনের জন্য অন্তত এ বাড়ি থেকে বেরিয়ে ভিড়ে মিশে যাই৷  মিষ্টির দোকানের ভিড় ঠেলে গিয়ে দু'টো কচুরি চেয়ে খাই বা মাছের বাজারে হুড়মুড়ে কোয়ালিটি ট্যাংরা খুঁজে বের করি। বাজারের হট্টগোল, ভরা স্টেডিয়ামের হইহই; মরার আগে এ'সব একবার স্পর্শ না করলেই নয় হে অভিষেক। পিএমকে বলো...আমার মুক্তি চাই। 

- তার তো উপায় নেই মিস্টার চৌধুরী। 

- তোমাদের ছেলেপিলেদের ইস্কুলের বইয়ের অবিসংবাদিত নায়ক আমি, আমারও ইচ্ছামুক্তি নেই?

- আপনার বাড়িটা হচ্ছে ওয়ার্লডস মোস্ট প্রটেক্টেড প্লেস মিস্টার চৌধুরী।  একমাত্র প্রটেক্টিভ স্যুট পরা মেডিকাল টীম ছাড়া কারুর ক্ষমতা নেই ও বাড়িতে ঢোকে। আর আপনারও ক্ষমতা নেই বাড়ি ছাড়ার। অ্যান্টিমিউজিক-ভাইরাস মুক্ত শেষ মানুষ হিসেবে, সে অধিকার আপনি খুইয়েছেন। সরি।

- কীসের সমীহ অভিষেক। আমার প্রতি তোমাদের কীসের ভালোবাসা। 

- সে যাকগে। মিস্টার চৌধুরী, যে কথা বলার জন্য আপনার সঙ্গে কনেক্ট করেছি৷ আমাদের প্রাইমমিনিস্টার আগামীকাল নতুন ক্যাম্পেন লঞ্চ করছেন, সামনেই ভোট কিনা। একটা থীমসং লেখা হয়ে গেছে, উনি নিজেই লিখেছেন। আপনাকে এ'বার সুরটা করে দিতে হবে। চটপট চাই কিন্তু। কেমন?  

(ছবি সূত্রঃ Independent)