Skip to main content

আশিসবাবুর খাওয়াদাওয়া



অনেকের মতই আমিও প্রচুর খাওয়াদাওয়ার ভিডিও দেখি৷ এবং বাকিদের মতই বহু ধরণের খাওয়াদাওয়ার ভিডিও দেখে থাকি৷ কেউ জাম্বিয়ার রাস্তায় হেঁটে হেঁটে ভালো মাংসের পদের খোঁজ করছেন, কেউ থাইল্যান্ডের কোনও গ্রামে বসে বিদঘুটে নামের কিছু চেখে দেখছেন, কেউ পাকিস্তানের গলিঘুপচি চষে দুর্দান্ত সব কাবাবে মনোনিবেশ করছেন। আবার কেউ হরিদ্বারের পুরি তরকারি সাজিয়ে গুডমর্নিং বলছেন বা বাঁকুড়ার আশেপাশের কোনও ছোট্ট ভাতের হোটেলের রুই মাছের ঝোল আর মোটা চালের ভাত খেয়ে মুগ্ধ হচ্ছেন৷ অনেক ব্লগার নিজগুণে সেলিব্রেটি হয়ে উঠেছেন, অনেকে তেমন 'পপুলার' না হয়েও মনের সুখে ভিডিও রেকর্ড করছেন আর আমাদের তৃপ্ত করছেন। এ'ছাড়া আছেন এমন অনেক সেলিব্রেটি যারা পথে নেমেছেন ভ্লগারের ভূমিকায়৷ 

আশিস বিদ্যার্থী ওই তৃতীয় ক্যাটেগরিতে পড়েন৷ এবং ইদানিং আমার বড় প্রিয় হয়ে উঠেছেন৷ ভদ্রলোকের সারল্যের তুলনা নেই৷ চেটেপুটে খাচ্ছেন, সাপটে প্লেট থালা সাফ করছেন, আর যে'খানে সে'খানে থেবড়ে বসে পড়ছেন৷ এ সমস্ত ভিডিও শ্যুট করার আগে নির্ঘাৎ খানিকটা আগাম পরিকল্পনা থাকেই। তবে ভদ্রলোক গোটা প্রসেসটা যে'ভাবে উপভোগ করেন, তা'তে ভালো না লাগার কোনও প্রশ্নই নেই৷ ওঁর মধ্যে খাওয়ার অ্যানালাইজ করার ঝোঁক নেই, স্রেফ মুখ চালানোয় মশগুল। যেন একরাশ ভালো লাগা নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছেন ভদ্রলোক, সে'টাই তাঁর সুপারপাওয়ার; তাকে হতাশ করা সহজ নয়৷ এবং ওঁর হাতে যেন অঢেল সময়, যেন বত্রিশ ঘণ্টার দিন আর বাহাত্তর মিনিটের ঘণ্টা হাতে নিয়ে চলার লোক তিনি৷ সবচেয়ে বড় কথা; এমন "দিব্যি আছি ভাইটি" গোছের লোক টাইমলাইনে একবার এসে পড়লে চারপাশটা আলোয় আলো হয়ে যেতে বাধ্য৷ 

সাধারণত ছোটখাটো খাওয়ার জায়গাগুলো বেছে বেছেই ঢুঁ মারছেন৷ এবং বেশিরভাগ ভিডিওতে খাবার ছাপিয়ে যে'টা আছে সে'টা হল ভদ্রলোকের নিখাদ মুগ্ধতা। ওই যে বললাম, খাবারের বিশ্লেষণ দেখার জন্য ওর চ্যানেলে যাওয়ার মানে হয়না৷ একজন মাঝবয়সী মানুষ, আলাভোলা মেজাজে ঘুরছেন, মৌজ করে খাচ্ছেন আর পাড়ার মাইডিয়ার দাদা-কাকাদের মত তোফা গপ্প জুড়ছেন৷ 

সবই খাবার ভিডিও নয়। মাঝেমধ্যে পাড়ার সেলুনে মাথা মাসাজ করছেন, কিংবা কোনও ছবির মত সুন্দর স্টেশনের স্টেশনমাস্টারের সঙ্গে গল্প জমাচ্ছেন; আর সর্বক্ষণ মুখে তৃপ্তির হাসি নিয়ে ঘুরছেন। সে হাসি যেন ক্যামেরার জন্য নয়, স্রেফ তাঁর নিজের জন্যই৷ অমুক সারকাজম,  তমুক প্রতিবাদ, এই দুঃসংবাদ, ওই ঝগড়া; এ'সব টপকে টাইমলাইনে একটু অক্সিজেন ইঞ্জেক্ট করে যায় ভদ্রলোকের ভিডিওগুলো।

ইয়ে, বলে রাখিঃ
ঘটনাচক্রে আমার টাইমলাইনে ঘুরেফিরে ওঁর খাওয়াদাওয়ার ভিডিওগুলোই আসে। তার বাইরেও ভদ্রলোককে বোধ হয় সাত-সতেরো রকমের ভিডিওতে দেখা যায়৷ আমার মন্তব্যগুলো শুধুই ওর খাওয়াদাওয়া আর আলগা ঘুরে বেড়ানোর ছোট ছোট ভিডিও ও রিলগুলো সম্বন্ধে (বিশেষত ইন্সটাগ্রামে)৷

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু