Skip to main content

শক্তিগড় অপটিমাইজেশন থিওরি



দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে হুশহাশ বেরিয়ে গেলেই হল নাকি৷ শক্তিগড় এলে আপনাকে দাঁড়াতেই হবে৷ সঙ্গে জ্ঞানগর্ভ জ্যেঠু বা পিউরিটান পিসেমশাই থাকলে সেই পিটস্টপটা আরও মজাদার হয়ে উঠবে৷ তাঁরা হাইক্লাস ল্যাংচা সম্বন্ধে একটা ছোটখাটো লেকচার দিয়ে জানান দেবেন যে হাইওয়ের পাশের এইসব 'পেটি' দোকানের ল্যাংচাকে আদৌ পাত্তা দেওয়া উচিৎ নয়৷ তারপর আপনার অর্ডার দেওয়া  ল্যাংচাকে ক্রিটিসিজিমে ফালাফালা করতে করতে নির্দ্বিধায় উড়িয়ে দেবেন৷। এরা মিহিদানা সম্বন্ধেও তেমনই একটা চমকদার অ্যানালিসিস তুলে ধরবেন এবং বলাই বাহুল্য যে স্যাট করে মিহিদানার প্লেটটা সাফ করে আলাদা এক ডিবে প্যাকও করিয়ে নেবেন৷ আর তাঁরা এও জানাবেন যে সীতাভোগ ক্লাসিকাল মিষ্টির ব্র‍্যাকেটে পড়েইনা৷ আবারও আপনি অবাক হবেন দেখে যে সেই অখাদ্য সীতাভোগকে তাঁরা কী'ভাবে আলগোছে কাছে টেনে নিয়েছেন গল্পগুজবের আড়ালে৷ 

যাকগে৷ জ্যেঠু-পিসেমশাইদের বাদ দিয়ে বলি। শক্তিগড়ে হাইওয়ের পাশে না দাঁড়ানোটা অন্যায়৷ দেশে ডিসিপ্লিন বলে এখনও তো কিছু আছে, না কী! দেখবেন, গাড়ির ইঞ্জিন কেমন আপনা থেকেই ঢিমে হয়ে আসে শক্তিগড় পৌঁছনোর কয়েক মাইল আগে থেকে৷ আর বাসটাস হলে তো থামতেই হবে, পঞ্জিকায় বোধ হয় তেমনটাই প্রেসক্রাইব করা আছে। 

আর শক্তিগড় নেমে কচুরী তরকারি (বা ডাল) না খাওয়ার মানেই হয় না৷  আর হ্যাঁ, সে কচুরীর-তরকারি জমে ভালো মিহিদানা মিশিয়ে খেলে৷ একটা টুকরো কচুরী, তার মধ্যে তিনভাগ তরকারি আর একভাগ মিহিদানা৷ পরের কচুরী-গ্রাস মুখে পোরার আগে আগে আর এক ভরাট চামচ মিহিদানা৷ এইভাবেই সে মিহিদানার কদর করতে হবে। 

তবে হ্যাঁ৷ সীতাভোগকে কিন্তু মিহিদানার ফর্মুলায় ফেলা যায় না৷ সে জিনিস বেশ স্বতন্ত্র, লুচি-কচুরীর সঙ্গে খাপ খায় না। ইয়ে, সীতাভোগের 'এফেক্টিভনেস এনহান্স' করার একটা আলাদা ফর্মুলা রয়েছে বটে৷ শক্তিগড়ে হাইওয়ের পাশের প্রায় সমস্ত মিষ্টির দোকানের সামনেই রয়েছে ডিম-পাউরুটির ঠেলা৷ কাগজের প্লেটে সার্ভ করা ডিম-পাউরুটি সাপটে শেষ করুন৷ তারপর সেই প্লেটেই ঢেলে নিন সীতাভোগ। সে প্লেট কাছিয়ে সীতাভোগ খাওয়ার আনন্দই আলাদা৷

সবশেষে ঘিয়ে ভাজা ল্যাংচা এক বাক্স প্যাক করিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসুন৷ তারপর জ্যেঠু-পিসের মুখে "মিষ্টান্ন খাইবার আদর্শ উপায়" বিষয়ক পাঁচালী শুনতে শুনতে ফরওয়ার্ড মার্চ৷ শক্তিগড়কে ষোলোআনা উশুল করতে হবে তো, নাকী!

(ছবিটা বছর পাঁচেক পুরনো)

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু