Skip to main content

হুতোমবাবু ও দাদা

- দাদা, হয়ে গেছে।
- হয়ে গেছে হুতোম?
- ঘরদোর সাফসুতরো। বাসনপত্র মেজে রেখেছি৷ বাথরুমের চারটে বালতিতে জল ভরে রাখা আছে৷ তোমার ওষুধের স্টক রিফিলিড৷ ডিনারে আলু পটলের তরকারি আর মাগুরের ঝোল৷ ফ্রিজে রাখা আছে৷
- তুই প্রতিবারই বড্ড বেশি পরিমাণে রেঁধে যাস৷ শেষে দু'বেলা ধরে খেতে হয়৷
- এমন হাইক্লাস রেঁধেছি দাদা, কম পড়লে হাত কামড়াতে।
- তোর তুলনা নেই হুতোম। তুই মার্ভেলাস।
- দাদা, এ'বার আমি আসি?
- বেরোবি?
- বেরোব না? সাতাটা বাজে৷ ট্যাক্সি নিলেও ফিরতে ফিরতে সেই রাত ন'টা৷ টিভি সিরিয়াল মিস হয়ে যাবে দাদা।
- শোন না হুতোম, আজ থেকেই যা না৷
- থেকে যাব? তা হয়না৷
- অদ্ভত গোঁয়ার গোবিন্দ তুই৷
- এ'টা গোঁয়ার্তুমি? যে বাড়ি থেকে বাবা আমায় তাড়িয়ে দিয়েছে, সে বাড়িতে আমি রাত্রিবাস করব? নেভার৷ দ্যাখো দাদা, আমি আসি তোমার টানে৷ একা মানুষ, অসুস্থ৷ মায়ের পেটের ভাই না দেখলে আর দেখবেটা কে৷ কিন্তু তুমি আমায় রাত্রিবাস করতে বলবে না৷ খবরদার।
- বাবা বুড়ো বয়সে অভিমানে কী না কী বলেছে, তার জন্য ভিটেমাটি ছেড়ে দিবি?
- বুড়ো সাংঘাতিক ধান্দাবাজ ছিল৷ সবে হিসেব করে বলেছে৷ আমায় স্ক্যান্ডালকুমার আর গবেটগ্যাম্বলার বলে খোঁটা দেওয়া? না হয় নিজের মাইনের দু'পয়সা জুয়ায় উড়িয়েছি৷ তার জন্য একটা দামড়া লোককে মাঝরাতে বাড়িছাড়া করবে?
- বাবা একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিল বটে৷ কিন্তু যে বেঁচে নেই, তার ওপর রাগ পুষে রাখবি রে?
- দাদা, আসি৷ আর এ'বার আয়া চেঞ্জ করো দেখি৷ এত কামাই করে। রোজ রোজ তো আর এদ্দূর ছুটে আসা সম্ভব হয়না৷
**
হুতোমবাবু সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে সামনের পানদোকান থেকে একটা খয়ের ছাড়া সাদা পান কিনে মুখে দিলেন৷
দাদাকে দেখতে এসে প্রতিবারই রান্নাঘরে ঢোকেন তিনি৷ নিজের হাতে দাদাকে রেঁধে খাওয়ানোর যে আনন্দ৷ আহা৷ বাবার কথা মনে পড়ে৷ হুতোমের হাতের রান্না পেলে বাবা রেস্তোরাঁর খাবারদাবারও পাশে সরিয়ে রাখতেন৷ কতবার মাকে ঠেস দিয়ে বাবা বলেছেন, "তোমার ছোটছেলের থেকে রান্নার টিপস নিলে পারো তো"৷ মা মিচকি হাসতেন; বড় নরম মানুষ ছিল মা৷ বড় মায়ার৷
প্রত্যেকবার বাড়ি ফিরে দাদার জন্য মনপ্রাণ দিয়ে রান্না করেন হুতোম। প্রতিবার দুটো মানুষের জন্য রান্না করেন। কতবার মনে হয় "আজ থেকেই যাব। দুই ভাই মিলে এঁটো হাতে গপ্প জুড়ব"। কোনওবারই থাকা হয়না।
তবে হুতোমবাবু নিশ্চিত, একদিন ঠিক তিনি টিভি সিরিয়ালের টানে হুড়মুড় করে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসবেন না। দু'জনের জন্য করা রান্না দাদাকে দু'বেলা জুড়ে একলা খেতে হবে না।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু