Skip to main content

প্রিয় রেস্টুরেন্ট




আমার অন্যতম প্রিয় 'রেস্তোরাঁ'; এই বহু ঘষটানো গাড়িখানা৷ 

দোকান থেকে খাবারদাবার নিয়ে এসে ধীরেসুস্থে সাজিয়ে বসা৷ ব্যাকগ্রাউন্ডে গাড়ির স্টিরিওতে নিজের প্রিয় প্লেলিস্টের গান (মোবাইলে ক্রিকেট চললে তো কথাই নেই)৷ আর হ্যাঁ, ভ্যাপসা গরম বা ধুলোর উপদ্রব না থাকলে আর একটা সুবিধে আছে; চাইলেই জানালার কাচ নামিয়ে 'ওপেন এয়ার অ্যাম্বিয়েন্স' ৷ এর ওপর ধরুন ঘ্যাম রেস্টুরেন্টের মতই নরম হলদেটে আলো৷ আর এমন আরামদায়ক সুপরিচিত চেয়ার অন্য কোথাও পাওয়া সহজ নয়, সীটে ঠ্যাং তুলে বসলেও কেউ হা-হা করে উঠবে না৷ সুড়ুৎ-সড়াৎ করে আঙুল চাটলেও কেউ বাঁকা চোখে তাকাবেনা, এটিকেটের খোঁটা দেবে না৷ মেজাজটাই আসল রাজা, মেজাজ খোলতাই হওয়াটাই তো ফাইন ডাইনিংয়ের মূলে৷ 

সবচেয়ে বড় কথা; এই রেস্টুরেন্টের একমাত্র ওয়েটার হিসেবে আমি নিজেকে দারুণ খাতিরযত্ন করে থাকি৷ সর্বক্ষণ মুখে হাসি, সর্বক্ষণ তৎপর। সময়মত নিজেকে টিস্যু পেপার এগিয়ে দেওয়া, চেবানো হাড় ফেলবার ঠোঙা এগিয়ে দেওয়া; সব ব্যাপারেই আমি অত্যন্ত চটপটে৷ আর হ্যাঁ, গাড়িতে মৌরিমিছরি গোছের মুখশুদ্ধিরও একটা স্টক মেন্টেন করা থাকে। 

একসময় যখন সেলসের কাজে বিহারের গ্রামেগঞ্জে ঘোরাঘুরি করতাম, তখন গাড়িতে ছাতুর ডিবে আর নুনের প্যাকেটও রেখেছি৷ আর থাকত স্টিলের গেলাস, চামচ আর অবশ্যই জল। আচমকা খিদেপেটে ধাবাটাবার খোঁজ না পেলে দিব্যি ছাতুর সরবতের গেলাস হাতে, সীট রিক্লাইন করে, সিঙ্গল মল্ট-লেভেল ঘ্যাম নিয়ে গা এলিয়ে বসেছি৷ গাড়ি তখন অলিপাব। স্টিরিওতে পঙ্কজ উদাস তালে তাল দিয়ে বলতেন; "গাড়ির ঘুপচি নয় হে এ'টা এখন৷ এ'টা পানশালা। তুমিই সাকী, তুমিই নেশায় আলুথালু পথিক। থোড়ি থোড়ি পিয়া করো। ইত্যাদি৷ ইত্যাদি"।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু