Skip to main content

গোলাপি খাম আর মুদীর ফর্দ



- অনি, এ'দিকে আয়৷
- আ..আমায় ডাকছেন স্যার?
- তুই ছাড়া আশেপাশে আর কে আছে যে ডাকব?
- স্যার, ভালো আছেন? আপনার ব্লাডশুগার কন্ট্রোলে আছে তো? আমার জ্যাঠাইমা কী বলে জানেন? ব্লাডশুগার হল সাইলেন্ট কিলার। আমি অবশ্য..।
- এ'বেলা ও'বেলা রোজ ইস্কুলে পথেঘাটে দেখা হচ্ছে, আজ হঠাৎ তোর আমার খবর নেওয়ার দরকার পড়ল কেন?
- আপনি গুরুজন স্যার৷ আমাদের আইডল..।
- ব্যাপারটা কী বল দেখি? আমার বাড়ির সামনে ঘুরঘুর করছিস কেন? আর ওই দোতলার দক্ষিণের জানালার দিকে এত উঁকিঝুঁকি কীসের?
- দোতলা? না না। আমি আপনার ছাতে মেলা ওই নীল ফতুয়াটা অবজার্ভ করছিলাম। ওটা পরেই আপনি গত মঙ্গলবার আমায় আর বিশুকে আড়ং ধোলাই দিয়েছিলেন না স্যার? ওই ফতুয়াটা দেখছিলাম আর আপনার ক্লাসের কথা মনে পড়ছিল, বিশ্বাস করুন। থ্রিলিং৷
- তোর হাতে ও'টা কী?
- হাতে?
- ডান হাতে৷ ও'টা কী।
- এ'টা?
- হ্যাঁ। ও'টা কী?
- এ'টা কিছুই না স্যার৷ কিস্যু না৷ একেবারেই কিছু না৷ কখনই কিছু ছিল না৷
- অনি৷ ও'টা কীসের খাম।
- চিঠির।
- কী চিঠি?
- মু..মুদীখানার।
- মুদীখানার চিঠি?
- ইয়ে..হ্যাঁ। পিসেমশাই লিখে পাঠিয়েছে। মাঝেমধ্যেই লেখে পিসে৷ তাই তো এই খাম নিয়ে গোকুলকাকার দোকানে যাচ্ছিলাম৷ এই রাস্তা দিয়েই আমি ও'দিকে যাই৷ আপনি ভাবছেন এই ঘুরলি রাস্তা দিয়ে খামোখা কেন যাওয়া৷ আসলে পিটি স্যার অনুকুলবাবু বারবার বলেন, দিনে অন্তত দশ কিলোমিটার না হাঁটলে চলবে না..।
- তোর পিসেমশাই গোকুলের মুদীর দোকানে চিঠি পাঠায়? মাঝেমধ্যেই?
- না মানে, ঠিক চিঠি নয়। ফর্দ। মাসকাবারি জিনিসপত্রের।
- মুদীর ফর্দ পাঠায় গোলাপি খামে?
- পিসে বড় শৌখিন স্যার। বড় শৌখিন৷ সে'বার পিসির বালুচরির আঁচল দিয়ে এঁটো টেবিল পুছে তিনদিনের জন্য গা ঢাকা দিয়েছিল। চীনেবাদামটুকুও দামী চিনেমাটির প্লেট আর কাঁটাচামচ আর ছুরি ছাড়া খেতে পারে না।
- পিটিয়ে তোর চামড়া তুলে নেব রে রাস্কেল।
- আমি..আমি বরং আসি স্যার..।
- ফের যদি ঝুমির ধারেকাছে ঘুরঘুর করতে দেখেছি..।
- ঝুমি কে স্যার? নামটা তো কখনও শুনেছি বলে..।
- থার্ড ডিগ্রী শুনেছিস? ঝুমির জানালার নীচে ফের যদি তোকে তিড়িংবিড়িং করতে দেখেছি..।
- স্যার, আমি আজ আসি৷ দেরী হলে পিসেমশাই চিন্তা করবেন। মাসকাবারির ফর্দের মধ্যে সাদা তেল রয়েছে তো৷ ও'টা সময়মত না পৌঁছলে আবার লুচি ভাজা শুরু করা যাবে না৷ আর সময়মত লুচি না পেলে পিসের মাথাটা কেমন যেন গোলমাল হয়ে যায়। সে এক কেলেংকারি কাণ্ড৷ ও গল্প পরে হবে স্যার৷ আজ আসি৷ আর শুগারটাকে হাল্কাচালে নেবেন না স্যার, প্লীজ৷ আসি, কেমন?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু