Skip to main content

মাধববাবু আর শনিবারের চা



দুপুরের মেনুতে মাংসভাত থাকার ফলে যা হওয়ার তাই হলো৷ ভাতঘুম হিসেবের বাইরে চলে গেল। সন্ধে সোয়া সাতটা নাগাদ চোখ কচলাতে কচলাতে রান্নাঘরে গিয়ে চায়ের জল বসালেন মাধব চ্যাটার্জী৷ 

সসপ্যানে জল ফুটছে। মাধববাবু দু'কলি কিশোরকুমার গুনগুন করতে শুরু করেছেন৷ দুনিয়াটা ভীষণ রঙিন৷ 

চায়ের কাপ তৈরি৷ আদা-চায়ের প্রাণকাড়া সুবাসে ঘর গুলজার। কিশোর ততক্ষণে মাধববাবুর গলা ছেড়ে বসার ঘরে রাখা ব্লুটুথ স্পীকারে গিয়ে সেঁধিয়েছে৷ এমন সময় কলিংবেলের ট্যাঙট্যাঙানিতে রোম্যান্সের সুতো গেলো কেটে৷ বিকেলের চায়ের সঙ্গে অযাচিত আলাপটালাপ ভদ্রলোকের নিতান্তই না-পসন্দ৷ 

দরজা খুলে একটা ছোটখাটো আর একটা বড়সড় বিষম খেলেন মাধববাবু৷ দু'জন সরকারি অফিসার কটমটিয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে। তাদের বিটকেল নীল-সবুজ চেক জামা আর কালো চশমাতেই মালুম হয়৷ একজনের হাইট অন্তত সাড়ে ছ'ফিট৷ অন্যজন নির্ঘাত পাঁচের নীচে৷ ছোটখাটো লোকটাই নেতা গোছের, কথাবার্তা তার সঙ্গেই হল৷

- আমি এজেন্ট ভবেশ দাস৷

- আজ্ঞে, আমি মাধব চ্যাটার্জী। 

- আমরা জানি৷ আপনার বয়স বাহান্ন৷ বিপত্নীক৷ নিঃসন্তান। পাইকারি বাজারে হালুয়ার ব্যবসা আছে আপনার৷ ট্যাক্সে ফাঁকি নেই৷ পুলিশের খাতায় কেস নেই৷

- আজ্ঞে৷ কিন্তু আপনারা..।

- আপনাকে আমাদের সঙ্গে যেতে হবে৷

- যেতে হবে?

- এখুনি৷ 

- আসলে চা'টা এখনও খাওয়া হয়নি৷

- পরশু থেকে যুদ্ধ৷ সেনাবাহিনীর লোক দরকার৷ আপনি চা নিয়ে চিন্তিত?

- স্যার, শনিবার বিকেলের চা। হেলাফেলা করলে দেশের অমঙ্গল যে।

- সময় নেই৷ বাজে কথা বন্ধ৷ ক্যুইক৷ কোনও জিনিসপত্র নেওয়ার দরকার নেই৷ ক্যুইক মার্চ জওয়ান।

- ভুঁড়ির ডেপথ দেখেছেন? হুটহাট দৌঁড়নোর কি উপায় আছে?

- বুস্কিয়ানাল্যান্ড আমাদের আক্রমণ করতে চলেছে।  অমন ঢিলেঢালা মেজাজ হলে চলবে না৷  আপনাকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে যাওয়া হবে। এজেন্ট হারু, ওঠাও মাধব চ্যাটুজ্জেকে।

**

এন্তার গোলাগুলি৷ রাস্তার এ'দিকে একজন বন্দুক হাতে তম্বি করছেন, অন্যদিক থেকে শত্রুপক্ষের এক সৈনিক ঠারেঠোরে জবাব দিচ্ছেন৷ এমন সময়, একদিকের বন্দুক থেমে গেল৷ একটা ভাঙা দেওয়ালের আড়াল থেকে ভেসে এলো চিৎকার। 

- রোক্কে রোক্কে রোক্কে।

- কী ব্যাপার হারামজাদা? রোক্কে রোক্কে করছিস কেন? হেস্তনেস্ত কর আগে৷ তারপর রোক্কে৷ এই চালালাম গুলি৷ 

- দেখুন স্যার৷ আমার একটা মাইডিয়ার নাম আছে। মাধব চ্যাটার্জী।  খামোখা হারামজাদা বলছেন কেন?

- তুই শত্তুর৷ তোর মুখে ছাই দেওয়াটা আমার দায়িত্ব। আর তোদের সবার নাম হারামজাদা। 

- তা ঠিক৷ কিন্তু এ যে শনিবার সন্ধ্যে৷ 

- তা'তে কী রে রাস্কেল? ছুঁড়ব গ্রেনেড? 

- আরে ধেত্তেরিকা৷ বুস্কিয়ানাল্যান্ডের মানুষরা কি শনিবার বিকেলেও ব্যাজার মুখে খিটমিট করে চলে?

- খবরদার!  খবরদার যদি বুস্কিয়ানাল্যান্ডের বদনাম শুনেছি তোর মুখে৷ আর দেখে যাস উইকেন্ড ইভনিং কাকে বলে আমাদের দেশে৷ রিল্যাক্সিং টু দি পাওয়ার ইনফিনিটি। কেউ মগ্ন হয়ে বই পড়ছে৷ কেউ আলাভোলা গান গাইছে৷ কেউ সোফায় শুয়ে ভুলভাল কবিতা লিখছে৷ এক্কেবারে টোটাল শখের প্রাণ গড়ের মাঠ সিচুয়েশন৷

- তা আপনি এমন খ্যাটখ্যাট মাস্টার কেন? খালি গুলি গ্রেনেড বাতিক আর বাতেলা৷ আরে শনিবার সন্ধে হলো তো নাকি।

- আপনার মতলবটা কী বলুন দেখি মাধববাবু?

- আজ্ঞে৷ ফ্লাস্কে চা এনেছি৷ দুধ চা৷ আর ইয়ে, এই যুদ্ধের বাজারেও আদা জোগাড় করে চার্জ করেছি৷ তাছাড়া একটা ছোট ব্লুটুথ স্পীকার আছে, তা'তে কিশোরকুমার বাজিয়ে গান শোনা যাবে৷ 

- আদা চা? কিশোরকুমার?

- আজ্ঞে৷ 

- মাধববাবু৷ হারামজাদাটা উইথড্র করছি৷ তবে সে'টা শুধু চা শেষ হওয়া পর্যন্ত।

- হ্যাঁ৷ তারপরেই খুনোখুনি৷ বুস্কিয়ানাল্যান্ডকে ছেড়ে দেব ভেবেছেন? 

- ইয়ে মাধববাবু৷ আমার পকেটে দু'টুকরো ক্যারট কেক রয়েছে৷ আশা করি আপনার চায়ের সঙ্গে বেমানান হবে না৷

- আরে করছেন কী মশাই! মার্ভেলাস৷ 

- তা'হলে স্যাটার্ডে টী-ব্রেকের জন্য সীজ-ফায়্যারে বেরোচ্ছি কেমন?

- ওয়েলকাম স্যার৷ ওয়েলকাম।

- ইয়ে, আপনার প্লেলিস্টে 'পল পল দিল কে পাস' গানটা রয়েছে কি?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু