Skip to main content

সানডে অপটিমিস্ট



- ভাইটি।

- ফ্লেক?

- আজ নয়৷ 

- কেন কাকা? সিগারেট কমাচ্ছেন?

- তা নয়৷ তবে এ'সন্ধেয় ফ্লেকবাজি চলবে না হে। 

- এ সন্ধেটা কী'রকম?

- আজ সন্ধেবেলায়, বুঝলে হে; একটা পিকিউলিয়ার মনকেমন অনুভব করছি৷

- কী'রকম মনখারাপ কাকা? হজমে গোলমাল? 

- আরে না না৷ ডাইজেস্টিভ ট্র‍্যাকের বাইরেও জীবন আছে৷ এই মনকেমনের নেচারটা স্পিরিচুয়াল৷

- বুঝিয়েই বলুন না।

- আজ সন্ধে থেকেই, বুঝলে.."আগামীকাল বৃষ্টি হবে" টাইপের মনকেমন৷ 

- যাচ্চলে৷ কাল নামবে নাকি?

- গুগল বলছে কাঁচকলা৷ কিন্তু মন বলছে সোমবারটা জাস্ট ধুইয়ে দেবে৷ তবে ঝেঁপে নামবে দুপুরের দিকে৷ ফাইলের ঢিপির ও'পারের জানালার দিকে তাকিয়ে দেখব ঝাপসা কাচ৷ অফিস থেকে বেরোনোর আগেই অবশ্য ধরে যাবে। ফেরার সময় বাতাসে শুধুই মিঠে আমেজ৷ অটোর সাইডে বসলে মনে হবে ফ্লাইং কার্পেট৷ রোলের দোকানের সামনে দাঁড়ালে মনে হবে চিৎকার করে বলি; তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার জোড়া রোলই চাই। 

- তা কাকা, সোমবারের বৃষ্টিতে রোব্বারে মনখারাপ কেন?

- আরে ধের ছাই কাঁচকলা৷ মনখারাপ আর মনকেমন এক নয়৷ মনখারাপ চিমটি, মনকেমন সুড়সুড়ি৷ মনখারাপ খবরের কাগজ, মনকেমন আবোলতাবোল৷ মনখারাপ "ভোট দিন ভোট দিন", মনকেমন হল, "আর একটু ভাত দিই"। কী বুঝলে?

- আপনার মনখারাপ নয়৷ মনকেমন।

- করেক্ট ভাইটি৷ করেক্ট৷ ভ্যাপসা গরম ক্যান্সেল করে একটা বৃষ্টিতে-ঠাণ্ডা লেবুজল-মার্কা সোমবার আসছে৷ সে ঠাণ্ডা হাওয়ার চোটে অফিসের বড়সাহেবের মুখ বাঙলার পাঁচ থেকে তৃপ্ত অনিল চ্যাটুজ্জ্যেতে কনভার্ট হবে৷ অফিস ক্যান্টিনের মেনু সবাইকে চমকে দিয়ে ক্ষীরকদম অফার করবে৷ এমন কত কী দুর্দান্ত সব ব্যাপার ঘটে যাবে; স্রেফ ওই হঠাৎ বৃষ্টির গুণে। 

- কিন্তু কাকা, ওয়েদার ফোরকাস্ট তো বলছে রুখাশুখা দিন। টেম্পারেচার বাড়বে৷ 

- সে হিসেবের ফোরকাস্টটুকুই কি সব রে? এই যে এমনভাবে মন ডাকছে, তার কোনও ভ্যাল্যুই নেই?

- তা আছে কাকা৷ দেখবেন, কাল নিশ্চিত বৃষ্টি হবে৷

- আলবাত হবে৷ হতেই হবে৷ আমি এত কনফিডেন্ট কেন জানিস?

- কেন?

- কারণ আমি সানডে অপটিমিস্ট৷

- অ৷ তা, জর্দাপান দেব কাকা?

- নো স্যার৷ আজ নো জর্দা৷ একটু নরম দাগের কিছু চাই৷ একটু মোলায়েম৷ একটু মখমলে।

- একটা মিঠা বানাই? 

- বানাও৷ তবে নো সুপুরি৷ সাফিশিয়েন্ট গুলকন্দ৷ রকমারি মিঠে মশলা। মনকাড়া খুশবু৷ এক্কেবারে ভীমনাগের পান। কী ইয়ংম্যান,  পারবে না?

- নিশ্চয়ই কাকা..।

- ইরশাদ..।

- কী স্বাদ কাকা?

- পানটা বানাও ভাইটি৷ ধীরেসুস্থে, কেমন?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু