Skip to main content

সুমনবাবুর হুকুম



- কফি চলবে অনিলবাবু?

- না৷ থাক৷

- টাকাটা পেয়ে গেছেন আশা করি।

- হ্যাঁ।

- ভালো কথা৷ কাল গুপ্তাদের চারটে ট্রাক বর্ডার ক্রস করে ওদের করিমগঞ্জের গোডাউনের দিকে যাবে৷ বড় কনসাইনমেন্ট, হাতাতে হবে৷

- বারো পার্সেন্ট।

- দশ থেকে এক্কেবারে বারো? ট্যুয়েন্টি পার্সেন্ট জাম্প? আপনি যে আমাদেরও এক্সটর্ট করতে শুরু করলেন মশাই৷ ও'টা এগারো করুন।

- বারো৷

- আমার কথার অনারে অন্তত কিছুটা..। সাড়ে এগারো, ফাইনাল! সেটল করুন।

- শম্ভু সিংকে বলুন৷ সাড়ে সাতে ট্রাক হাতিয়ে আপনার জিম্মায় ফেলে দেবে৷ তবে ওর পুলিশের ওপর কন্ট্রোল কম৷ সে ঝক্কিটা সামাল দিতে পারবেন নিশ্চয়ই৷

- সামনে বসিয়ে কফি অফার করেছি বলে নিজেকে আমার ইকুয়াল বলে ভেবে বসবেন না অনিল৷ 

- ও মা, না! আপনি পে-মাস্টার৷ আমাদের নমস্য৷ আর শম্ভু একসময় আমারই সাগরেদ ছিল৷ ইদানীং নিজের মত করে লাইনে নেমেছে, উইথ মাই ব্লেসিংস৷ তাই ভাবলাম রেকমেন্ড করি৷ ব্যাপারটা অন্যভাবে নেবেন না সুমনবাবু৷

- আপনার থেকে আমার বয়স অনেক কম হতে পারে৷ কিন্তু আমি গুণ্ডা নই অনিলবাবু, আমি একজন ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট। বাজারে আমার একটা সুনাম আছে৷ অবশ্য দোষটা আমার বাবার৷ বেঁচে থাকতে লাই দিয়ে আপনাদের মাথায় তুলে গেছে, আর এখন সাফার করছি আমরা। যাক গে, আপনার সঙ্গে তর্ক করে সময় নষ্ট করতে চাইনা। ওই বারো পার্সেন্টই পাবেন। কিন্তু কাজে যেন ঢিল না দেখি৷আপনার ছেলেদের বলে রাখবেন৷ ট্রাকের ডিটেলস আমি পাঠিয়ে দেব৷ 

- আপনার বাবার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা একটু অন্যরকম ছিল বটে৷ সে যাকগে। সুমনবাবু,আপনি বোধ হয় আমাদের ওপর সামান্য অসন্তুষ্ট৷ তাই কি?

- ন্যাচরেলি। আপনার স্যাঙাৎ, ওই কী যেন নাম..বিমল। গতকাল সে আমার অফিসে এসে কী রুডলি কথা বলে গেল৷ আমার ইচ্ছে ছিল মেরে চামড়া গুটিয়ে নেওয়া। আমি বেশি ঝামেলায় না গিয়ে স্রেফ খানকয়েক চড়চাপড় মেরে ছেড়ে দিয়েছি। তবে অতটা লিনিয়েন্ট আমি না হলেও পারতাম। আপনার দলের ছেলে আমার সঙ্গে ও'ভাবে কথা বলতে সাহস পায় কী করে?

- সে কী! বিমল আপনার সঙ্গে মিসবিহেভ করলে?

- রীতিমত। আরে আমার শালাবাবুর একটা মেডিকাল সিক সার্টিফিকেট চাই, অফিসে জমা দিয়ে আর্জেন্ট ছুটির দরখাস্ত করতে হবে৷ আমি বিমলকে বললাম একটা ডাক্তারকে চমকে মাসতিনেকের সিক সার্টিফিকেট লিখিয়ে আনবে। এ'সব সামান্য ফাইফরমাশ খাটার  সার্ভিস যদি নাই পাই, তা'হলে এত খরচ করে গুণ্ডা পুষছি কেন। তো অথচ আপনার বিমল বলে কিনা পয়সা ছাড়া কোনও কাজ সে করবে না৷ ক্যান ইউ ইম্যাজিন?আমার মুখের ওপর সে বললে যে এমন ছিচকে কাজ সে করে না? রাস্কেলটা কি ভেবেছে কি নিজেকে? 

- নাহ্৷ কাজটা বিমল ঠিক করেনি৷ ও নিয়ে আপনি ভাববেন না। সিক সার্টিফিকেট পরশু দুপুরের মধ্যে পেয়ে যাবেন। আপনার শালার নাম আর বয়সটা লিখে দেবেন, তা'হলেই হবে। আপনার জন্য এ'টুকু আমরা করতেই পারি। 

- যাক৷ ঠিক আছে৷ আর দেখুন অনিলবাবু৷ ও'সব চ্যাংড়া ছেলেকে আমার কাছে পাঠাবেন না৷ 

- নাহ্, সিনসিয়ার এপলজিস। 

**

- হ্যালো। সুমনস্যার, আমি ফ্যাক্টরি থেকে বলছি। তাপস। খানিকক্ষণ আগে হয়েছে কী..। 

- পঞ্জিকা খুলে বসতে হবে না৷ ট্রাক ঢুকেছে?

- আধঘণ্টা আগে। 

- মালপত্র? 

- সব আছে৷ যেমন খবর ছিল।

- গুড৷ নাহ্, অনিল গুণ্ডার এলেম আছে৷ আগাম বারো পার্সেন্ট নেওয়াটা গায়ে লেগেছিল বটে, তবে কাজকর্ম এত স্মুদলি এক্সেকিউট করে যে পুষিয়ে যায়..।

- ইয়ে, স্যার..অন্য একটা জরুরী খবর দিতে আপনাকে ফোন করা..।

- আবার কী? গুপ্তারা আরও ট্রাক আনাচ্ছে?

- না স্যার৷ ব্যাপারটা একটু সিরিয়াস৷ একটা ট্রাকে..একটা ট্রাকে মালের মধ্যে...হয়েছে কী...।

- তাপস৷ ভ্যানতারা ছাড়ো।

- একটা ট্রাকে আপনার শালাকে পাওয়া গেছে...আনকনশাস..পা দু'টো বিচ্ছিরি ভাবে থেঁতলানো৷ মুখেও চোট আছে। আর বড্ড ব্লাডলস হয়েছে। আমরা ইমিডিয়েটলি এম্বুলেন্স ডেকেছি..এখনও এসে পৌঁছয়নি। আশপাশ থেকে একজন ডাক্তারকেও ধরে এনে দেখানো হয়েছে৷ ডাক্তার দেখে বললেন ইমিডিয়েটলি অ্যাডমিট করতে হবে৷ অন্তত মাসতিনেক হাসপাতালের ধাক্কা..।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু