Skip to main content

মায়ের হেল্প

অবশেষে দেবীর দেখা পেয়ে নিশ্চিন্ত হলেন শ্যামাপদ। মায়ের চোখে ভালোবাসা উপচে পড়ছে।
** 
- "তুই এসেছিস মা?"


- "তুই এমন ভাবে উপোস দিয়ে আমার কথা ভাবছিস। না এসে উপায় কী?"


- "ভাবছি কি আর সাধে গো মা। বড় দুঃখ"।


- "দুঃখ? কেন? অম্বলটা বড্ড বেশি জ্বালাচ্ছে বাবা?"।


- "মা, মা গো! সেই আঠাশ বছর বয়েস থেকে অম্বল এ দেহে বাসা বেঁধেছে। এখন আমি তেপান্নোয়। মায়ার বাঁধনে পড়ে আছি মা। অম্বল না থাকলে মন কেমন করে। চোঁয়া ঢেকুর বই তো নয়, ওদিকে নজর দিও না গো দশভুজা মা আমার"।


- "তাহলে কীসের এত কষ্ট বাবা শ্যামা?"


- " মা সমস্যা যে তুমি মা"। 


- "আমি? সমস্যা?"। 


- "অক্টোবর এলেই গায়ে জ্বর আসে মা। বৌ যেতে চায় গড়িয়াহাট। মেয়ে সিক্কিম। হাড় হিম হয়ে আসে মা। গড়িয়াহাটের ভিড় দেখে গা গুলোয়। বোনাস এত্তটুকু আর হেইসা বাজারের ফর্দ। পুজোয় শিলিগুড়ির কনফার্ম টিকিট পাওয়ার চেয়ে ময়দানে চায়ের বাগান করা সহজ মা। বাঁচাও। কিছু একটা দাও। পরশপাথর বা আশ্চর্য প্রদীপ গোছের কিছু। ওয়ান স্টপ সলিউশন। আর পারা যাচ্ছে না মা। মা, মা গো। ও মা। লক্ষী মা আমার। কিছু একটা কর"। 


- "ইয়ে বাবা শ্যামা, অমন আঁকুপাঁকু করলে কি চলে? তুমি ভক্ত মানুষ...শান্ত হও"।


- "মা, আমি আদতে শান্ত, ইয়েস। তবে গবেট নই। একবার তোমায় পেয়েছি যখন...ছাড়ছি না। আর মা...সেবার রামচন্দ্রকে পর্যন্ত ফেভার করে গেলে। সে ব্যাটা রাজার ছেলে। আমি পাতি রেলের ক্লার্ক মা। হেল্প যে আমার বেশি দরকার, কিছু একটা না পেয়ে তোমায় কিছুতেই যেতে দিচ্ছি না"। 


- "হুম...এক কাজ কর... চোখ বন্ধ করে হাত বাড়িয়ে দে দেখি আমার দিকে। তোর হাতে ঝুলিয়ে যাই কিছু একটা"।


- "মা তুমি সত্যিই দেবে?"


- "না দিয়ে উপায় কী বাবা শ্যামা? যেভাবে ধরে রেখেছ আমায়"। 


- "মা আমার জগদ্ধাত্রী। দাও মা দাও। এই চোখ বুজলাম। এই হাত বাড়ালাম। ডান হাত বাড়ালাম মা। মা মা গো, শ্যামাপদকে ভেবেচিন্তে দিও মা"।

**


শ্যামাপদ টের পেলে যে তার হাতে যেন সত্যিই কিছু ঝুলছে। উত্তেজনায় চোখ খুলতেই সে দেখলে দেবী হাওয়া আর তার হাতে ঝুলছে একটা নিভু নিভু আলোর হ্যারিকেন।

Comments

Anonymous said…
শেষমেশ হাতে হ্যারিকেন!

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু