Skip to main content

গণেশ পুজো

এক। 

জীবনের বিভিন্ন ধাক্কায় পর্যুদস্ত নির্মলের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল যখন ডিভোর্সের ছ’মাসের মাথায় তার বার্ন্স অ্যান্ড বার্ন্সের সাধের চাকরীটাও গেল। নিষ্ঠাবান বামুনের ছেলে নির্মলের পরিবার সিদ্ধিদাতার ভক্ত। গণেশ কে প্রণাম না ঠুকে এক গেলাস জল পর্যন্ত মুখে তোলে না নির্মল।

কিন্তু সিদ্ধিবিনায়ককে এত তোল্লাই দিয়েও যখন জীবনে এত দুরমুশ হয়ে পড়তে হল, নির্মলের সমস্ত রাগ গিয়ে পড়ল হাতি মাথা ইডিয়টের উপর। বাড়ির ঠাকুর ঘরের দরজা খুলে ঠাকুরের পেল্লায় সিংহাসনের সামনে গিয়ে গণেশ মূর্তির শুঁড় ধরে দিলেন বেদম ঠেলা; মূর্তি হেলে গেল।

“শালার পো, এই জন্যে গোটা জীবন তোমার পুজো করে হন্যে হলাম? কত লাখ লাখ কিলো লাড্ডু ভোগে হাপিশ হয়ে গেল। এই নিয়ম ওই উপোষে প্রাণ জেরবার হয়ে গেল। আর এই তার আর ও আই? ভগবান না হাতি! একটা ডেডবডি কোথাকার”, উত্তেজনায় হুড়মুড় করে বলে গেল নির্মল। আরও দু’চারটে খিস্তি ঝাড়তে যাচ্ছিলেন নির্মল এমন সময় এক বিরাশি সিক্কার ধাক্কায় সোজা মেঝেয় লুটিয়ে পড়লে নির্মল। অজ্ঞান হওয়ার আগে নির্মল অস্পষ্ট শুনতে পেলেন যেন “শুয়ার, আমার নামে লাড্ডু এনে নিজের ব্লাড শুগার আমি বাড়াতে বলেছি? পরকীয়ায় ল্যাটপ্যাট হয়ে কেস খেতে আমি বলেছি? অফিস টাইমে ঘুমিয়ে ট্যাঁস খেতে আমি বলেছি?”।

গণপতি বাপ্পা মোরিয়া প্রমাণ করিল, সে মরে নাই।

অন্য। 

- গণেশ পুজো? আরে ধুর, ও তো মেড়োদের উৎসব মশাই। বাঙালি কালচার ওই দুর্গাপুজোই হচ্ছে রিয়েল ফেস্টিভাল।
- বাঙালি? তা বটে। বাঙালি বই তো নয়। তবে ওই। জননী যেদিন মানুষ স্টেটাসে আপলিফট করবেন - সে'দিন আর চিন্তা থাকবে না।
- টন্ট করছেন?
- অন দ্য কন্ট্রারি, বাহবা দিচ্ছি।
- মানুষ স্টেটাসে আপলিফটেড হতে গেলে বাঙালিকে কী করতে হবে শুনি? আরও হাজার খানেক রবীন্দ্রনাথ পয়দা করতে হবে?
- না! আরও সহজ রাস্তা আছে।
- কী শুনি?
- আপাতত কয়েকদিন মেড়ো না বলে মারোয়াড়ি বলা প্র‍্যাক্টিস করুন। দেখবেন ন্যাজটা দু'দিনে হাফ ইঞ্চি ছোট হয়ে আসবে। প্রমিস।

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু