Skip to main content

ছোটকা

ছাতের ঘরে ছোটকা থাকে; তাই পিলুর সেখানে যাওয়া বারণ। ছোটকার মাথার ব্যামো আছে, তাই সারাক্ষণ ছোটকার ঘরে বাইরে থেকে শিকল টানা। রামখিলন শুধু দিনে তিন থেকে চার বার সেই শিকল খোলে; খাওয়ার দিতে, ছোটকাকে স্নান করাতে, ঘর সাফ করতে।

আজ কেউ খেয়াল করার আগেই পিলু ছাতে উঠে এসেছিল মিলি কে খুঁজতে। মিলি পিলুর পোষা মেনি; বয়েস আট মাস।

- অ্যাই পিলু, ইধার আ।
জানলার গ্রিলে থুঁতনি ঠেকিয়ে ডাক দিলে ছোটকা।

- মিলিকে খুঁজছি। দু'দিন ধরে দেখছি না ওকে।
ছোটকার গাল ভরা দাড়িকে ছোটকার চেয়েও বেশি ভয় পায় পিলু। মা বলে ওই দাড়িতে ইঁদুরের সাইজের সমস্ত উকুনেরা বাস করে।

- মিলি? কউন মিলি?

- আমার মেনি।

- হাউ সারপ্রাইজিং। তোর বেড়ালের নামও মিলি?

- হ্যাঁ।

- আমার রুমালের নামও মিলি। সে'টা জানিস?

- ধুৎ, রুমালের আবার নাম হয় নাকি?

- বিলকুল হয়।

- ও।

- দেখবি? রুমাল?

- বাবা তোমার কাছে যেতে বারণ করেছে।

- রুমালটা ম্যাজিকের রুমাল। কাছে আয়। আয়। আয়। দ্যাখাব।

- বাবা বকলে?

- তুই কি ভীতু?

- না।

- তাহলে আয়। আয়। আয় পিলু।
ছোটকার কাছে এগিয়ে আসতেই বিকট গন্ধ নাকে এলো। কিন্তু পিছন ফেরার আগেই জানলার শিকের ভিতর দিয়ে ডান হাত বাড়িতে খপাৎ করে পিলুর হাত ধরে ফেললে ছোটকা।
গলা শুকিয়ে এল পিলুর; ভয়ে গলা দিয়ে কোন আওয়াজ বেরোল না।

- রুমাল দেখবি না পিলু?

এই বলে নিজের বাঁ হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে ছোটকা বের করে আনলে সে'টাকে।

পিলু কাঁপছিল ; ছোটকার হাতে বেড়ালের পাতলা লোমশ রক্ত মাখা চামড়া...খয়েরী সাদা মেশানো। ওটা মিলির চামড়া; রক্তে মাখামাখি।

পিলু ভয়ে কাঁদতেও পারছিল না।

- সুকুমার রুমাল কে বিড়াল করেছিল। আমি রিভার্স অসমোসিস করেছি দ্যাখ। দ্যাখ, দ্যাখ। ল-র-ব-জ-হ...দ্যাখ দ্যাখ। কাঁদিস না পিলু। কাঁদিস না। আমার নাম হিজবিজবিজ...মনে রাখিস...তোর বাবার নাম হিজবিজবিজ...মনে রাখিস...।
সাত দিন পিলুর জ্বর ছাড়েনি।

**
- তুই পিলুকে ডেকে ফের সে সব কথা বলতে গেছিস?

- না। দাদা না। বলতে চাইনি।

- চুপ কর। রামখিলান নিজের কানে শুনেছে।

- বেশ। বলেছি। বেশ করেছি।

- তোর পিলুর ওপর কোন রাইট নেই। স্কাউন্ড্রেল, ফের যদি বিট্রে করেছ, তবে পাগল হয়েও আআর বাঁচতে দেব না। বলে গেলাম।

- মেরে ফেল দাদা প্লীজ। শুধু রামখিলানকে রোজ আর পাঠাস না। পিলুকে বল ওর বাবার নাম হিজবিজবিজ। আমি হিজবিজবিজ। প্লীজ।

- রামখিলান। ইঞ্জেকশন রেডি রেখেছিস?

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু