Sunday, June 1, 2025

মাধব সেনের সততা



- হ্যান্ডস আপ!
- এই, চালিয়ে দেবেন না প্লীজ। প্লীজ।
- এ'দিক ও'দিক কিছু চেষ্টা করবেন না সেনবাবু।
- আপনি কিন্তু খামোখা এতটা রিস্ক নিচ্ছেন স্যার। আজকাল দোকানের ক্যাশবাক্সে অতি সামান্যই টাকা পয়সা থাকে। সবই তো অনলাইন ট্রান্স্যাকশন। অবিশ্যি মিষ্টির ট্রে কয়েকটা নিয়ে সরে পড়তে চাইলে..।
- বড্ড বাজে কথা বলার অভ্যাস আপনার।
- বন্দুকের নলের সামনে..বড্ড নার্ভাস বোধ করছি স্যার। তাই মুখে লাগাম দিতে পারছি না..প্লীজ ডোন্ট মাইন্ড।
- ঝড়বৃষ্টির রাত। প্রায় এগারোটা বাজে। এলাকায় সমস্তদোকানপাট বন্ধ। আপনার দোকানটা খুলে রেখেছেন কেন?
- ওহ। তা'তে আপনার খারাপ লেগেছে বুঝি? আমি এখুনি শাটার নামিয়ে দিচ্ছি। এখুনি। আসলে আমি একা মানুষ। দোকানটাই আমার সংসার। কাজেই..।
- ফের বাজে কথা।
- আপনার কী চাই যদি..। ইয়ে, আপনি আমার নামটা কী'ভাবে জানলেন?
- সেন সুইটসের ক্যাশবাক্সের সামনে যে রোয়াব নিয়ে বসে আছেন, আন্দাজ করলাম আপনিই মালিক।
- ভেরি গুড অবজার্ভেশন। আমি কি একটা প্রশ্ন করতে পারি?
- পারেন।
- রিভলভার নিয়ে যারা দোকানবাজারে চড়াও হয়, তারা তো মুখ ঢেকে রাখে মাস্কে। আপনি তো..।
- আমি আপনার ক্যাশবাক্স হাতাতে আসিনি। আমার রাত কাটানোর একটা জায়গা দরকার।
- ওহ। ইয়ে, পুলিশ তাড়া করেছে?
- গুণ্ডার দলও তো আমায় তাড়া করতে পারে? নাকি আমার চেহারার মধ্যেও একটা অসামাজিক ব্যাপার আছে?
- আপনার হাতের অস্ত্রটি তো খাটি দিশি। লাইসেন্স আছে বলে মনে হয় না। তা'ছাড়া গুণ্ডাদের থেকে আপনাকে আমি প্রটেক্ট করতে পারবো কেন। কিন্তু হ্যাঁ, পুলিশ যদি আপনার খোঁজে এ'দিকে এসে পড়ে আর একজন ভদ্রলোক ব্যবসায়ী যদি সাফাই গেয়ে দেয়, আপনি একটা রাতের জন্য বেঁচে যাবেন।
- আপনি সত্যিই বড্ড বাজে কথা বলেন। শাটারটা নামিয়ে দিন দেখি।
- হ্যাঁ। এই দিই। এই..এই যে। এ'বার নিশ্চিন্ত? এ'বার অন্তত পিস্তলটা নামান। আমি এমনিতেও বৃদ্ধ মানুষ। হাতাহাতিতেও এঁটে উঠবো না।
- ভোরের আলো ফোটার আগেই আমি বেরিয়ে যাবো। পুলিশ সম্ভবত এ'দিকে ঘেঁষবে না। যদি আসে..আমি ওই দেরাজের আড়ালে থাকবো। তাঁরা সার্চ যাতে না করে, সে'টা দেখার দায়িত্ব আপনার।
- পুলিশ দোকান পর্যন্ত এলে আপনি কিন্তু আমার মার্সিতে পড়ে যাবেন।
- একদম বাজে কথা নয়। আবার পিস্তল তাক করে বসতে চাই না।
- পুলিশ যদি আসে তখন দেখা যাবে। বলছিলাম, রাতে তো আজ তাহলে আমিও এ'খানেই আছি। দোকানে চায়ের ব্যবস্থা আছে, কিন্তু আমার স্যাঙাৎটি আপাতত নেই। আর আমার হাঁটুতে বাতের মারাত্মক ব্যথা, দু'মিনিটের বেশি দাঁড়াতে পারিনা। তাই তোমাকেই বানিয়ে নিতে হবে। আর ইয়ে, তার আগে বরং তোমার দু'টো জলভরা খাওয়াই। ফ্রেশ। রাত আটটার পর তৈরি।
- চুপচাপ ওই চেয়ারেই গা এলিয়ে শুয়ে পড়ুন। বাড়াবাড়ি করতে যাবেন না।
- একটা কথা বলবো?
- আপনার কথা এখনও শেষ হয়নি?
- প্লীজ?
- বলুন।
- দু'টো জলভরা খাও। কেমন?
- আপনি আমায় চিনতে পেরেছেন সেনকাকু?
- তুমি জানতে আমি তোমায় ঠিক চিনতে পারবো।
- সম্ভবত। এই শিমুলতলা বাজারে আপনার চেয়ে সৎ ব্যবসায়ী আর কেউ নেই। আপনার সত্যনিষ্ঠার কথা গোটা পাড়ায় সবাই এককথায় স্বীকার করে। অতএব এ'বার নিশ্চয়ই পুলিশে খবর দেবেন?
- তুমি যে গুলি চালাবে না সে'টাও বেশ বুঝছি। দিই দু'টো জলভরা তপু? কী, তোমার নাম তপু তো?
- আপনি পুলিশে খবর দিচ্ছেন না কেন?
- ছোটবেলায় জলভরা চাইতে রোজ রাতে আমার কাছে, মনে আছে?
- হুম।
- এই আমি। মাধব সেন। প্রবল ভাবে অনেস্ট। বাজারেই তো মানুষের মুখে মুখে ঘোরে; "সেনবাবু দেবতুল্য মানুষ"। অথচ দেবতা হওয়ার মধ্যে কী প্রবল জ্বালা দ্যাখো। একটি বছর দশেকের বাপ-মা মরা ছেলে খিদের টানে সামান্য দু'টো মিষ্টি চাইতো রোজ রাতে। আমি তাকে ক্যারেক্টার বিল্ড করার ভাঁওতা দিয়ে বোঝাতাম গতর থাকতে ভিক্ষে করবি কেন। তোমায় দিয়ে আমার প্রতিদিনের চায়ের বাসনপত্র মাজিয়ে নিতাম, তবে দিতাম একজোড়া জলভরা সন্দেশ। অনেস্টির অহঙ্কার বড় বিষাক্ত তপু। বিশেষত অসহায় মানুষকে সততার জ্ঞানে সেঁকে নেওয়ায় যে কী তৃপ্তি! যাক গে, আমার মত পাথুরে ভালোমানুষদের খপ্পরে না পড়লে হয়তো তোমায় আজ দিশি বন্দুক হাতে পালিয়ে বেড়াতে হতো না।

***

শেষের কথাগুলো বিড়বিড়িয়ে বলে যাচ্ছিলেন মাধব সেন। বৃদ্ধের চোখ ঝাপসা; তাই তিনি খেয়াল করেননি যে নি:শব্দে কখন যেন বন্দুকটাকে কাচের শোকেসের ওপর ফেলে রেখে চায়ের বাসনপত্র ধুতে শুরু করেছে বেয়াদপ বখে যাওয়া তপু।

হেমন্তবাবুর আশ্বাস



মিউজিক সিস্টেম থেকে ভেসে এলেও হেমন্তর কণ্ঠস্বর হেলাফেলা করা সম্ভব নয়। ভদ্রলোক "এই করেছ ভালো" বলেছেন মানে সে'টাই ফাইনাল ট্রুথ। এরপর আর 'এ'টা হচ্ছে না, সে'টা পাইনি' বলে দু:খ করার কোনো মানেই হয় না। 'ভালো', 'সুন্দর', 'দারুণ' এইসব বিশেষণ দিয়ে হেমন্তবাবুকে দাগিয়ে দেওয়ার দু:সাহস আমার মত সঙ্গীতহীন মানুষের অন্তত নেই। ওঁর গলায় কেমন একটা ব্যাপার আছে যাতে মনে হয় পাশে বসেই কেউ গাইছেন। আর তাঁর কণ্ঠে রয়েছে সুপারসিরিয়াস ইমপ্যাক্ট, গান-শুনিয়ের সামান্যতম ফিচলেমোও সে গানের ধবধবে সাদা চিকন-কাজের টেবিলক্লথে ঝোল ছিটিয়ে দিতে পারে। জনগনমন কানে এলেই যেমন দাঁড়িয়ে পড়া, হেমন্ত কানে এলেই তেমনই সজাগ ও শান্ত না হয়ে উপায় নেই।

সেই হেমন্ত যখন রবীন্দ্রনাথের লাইন তুলে বলছেন "এই করেছ ভালো, নিঠুর, এই করেছ ভালো। এমনি করে হৃদয়ে মোর তীব্র দহন জ্বালো" - তখন দুনিয়ার ভার মাথা নুইয়ে মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। নয়তো যেন রবীন্দ্রনাথকে নয়, হেমন্তবাবুকে ইনসাল্ট করা হবে; আর সে'টা হলে পৃথিবী স্পিন ছেড়ে রিভার্সসুইংয়ের দিকে ঝুঁকবে। হেমন্তর গলা বুকের ভিতরের লিখে দিচ্ছে "আমার এ ধূপ না পোড়ালে গন্ধ কিছুই নাহি ঢালে, আমার এ দীপ জ্বালালে দেয় না কিছুই আলো"। আমি পুড়লে পোড়া থার্মোকলের গন্ধ ছাড়া কিছুই বেরোয় কিনা জানা নেই, তবে তা নিয়ে অভিযোগ জানানোর আমি কে। হেমন্তবাবু অমনভাবে বলছেন যখন এই ভালো। যা হচ্ছে বেশই হচ্ছে; খামোখা ঘ্যানঘ্যান বাড়িয়ে কী আর হবে।

রবীন্দ্রনাথকে বোঝার মত বোধবুদ্ধি নেই, হেমন্তকে অ্যাপ্রিশিয়েট করার মত সুর নেই। এলেবেলে মানুষ, তাঁর এলোমেলো দু:খ। নেহাৎ হেমন্ত অমন যত্ন করে পিঠে হাত রাখার আশ্বাসে গাইছেন, "বজ্রে তোলো আগুন করে আমার যত কালো, এই করেছ ভালো"। তাই আমারও নিশ্চিন্তে বলে দেওয়া: "ওউক্কে, ঠিক হ্যায়, এই ভালো, এই বেশ"।

সংবাদ



- নমস্কার। আপনিই মিস্টার লাহিড়ী? আমি..।
- আরে! এ কী স্যার, আপনি? প্লীজ আপনার পরিচয় দিয়ে আমায় লজ্জা দেবেন না। আপনাকে এ এলাকায় কে না চেনে বলুন। প্লিজ বসুন। ওরে ভজা, কোথায় আছিস..দত্তবাবুর জন্য চা বিস্কুট মামলেট নিয়ে আয় বাবা..।
- আহা, আপনি এত ব্যস্ত হচ্ছেন কেন লাহিড়ীবাবু। আমি দু'মিনিট মাত্র সময় নেব..।
- ও কী কথা স্যার। মাধবপুর দৈনিক পত্রিকার অফিসে এই প্রথম কোনো কাউন্সিলরের পদার্পণ ঘটলো। এর ফলে আমরা যাকে বলে যার পর নাই..।
- থাক থাক। আমায় প্লীজ বিব্রত করবেন না এইসব বলে।
- তা বললে হবে কেন স্যার। আপনি কেন যে কষ্ট করে আমাদের অফিসে আসতে গেলেন...আমায় তলব করলেই তো পারতেন দত্তবাবু।
- না না। আমার আসতে পেরে ভালোই লাগছে। মাধবপুরের একমাত্র দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক আপনি। আপনার একটা স্টেচার আছে, সে'টা আমি রেস্পেক্ট করি।
- হে হে হে..এইবার কিন্তু আপনিই আমায় লজ্জিত করছেন স্যার। যাক গে, এ'বার বলুন আপনার কী সেবা করতে পারি।
- কাউন্সিলর আমি, সেবার করার দায়িত্বও আমারই। আমি ভেবেছি আপনাদের কন্টিজেন্সি ফান্ডে দু'লাখ টাকা ডোনেট করবো। সামান্য বিজ্ঞাপনের টাকায় কি আর কাগজ চলে?
- কনটিনজেন্সি ফান্ড? কই, আমাদের সে'সব নেই তো।
- বানিয়ে নিন। তা'ছাড়া ক্যাশে দরকার পড়লে তাও ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
- সো কাইন্ড অফ ইউ। এমনিতেও আমাদের এই অফিসঘরটা মেরামত না করিয়ে নিলে চলছে না। তা ভালোই হলো। আর ক্যাশে পেলে তো ট্যাক্স রিপোর্টিংয়ে কোনো ব্যাপার নেই বোধ হয়..।
- আপনি বেশ ইন্টেলিজেন্ট লাহিড়ীবাবু। তা, একটা ছোট্ট ব্যাপারে আপনার হেল্প দরকার ছিলো।
- আজ্ঞা করুন দত্তবাবু। কাউন্সিলরকে সাহায্য করতে পারবো, এ তো আমার সৌভাগ্য।
- আপনাদের কাগজে গতকাল একটা তহবিল তছরুপ বিষয়ক খবর বেরিয়েছিলো।
- ওহ ওইটা। হ্যাঁ, স্কুপটা জেনুইন। তাই খবরটা করতেই হলো।
- শুনেছি সে'টার ফলোআপ স্টোরি আগামী বুধবার বের করছেন?
- আজ্ঞে। কেঁচোর ন্যাজে টান দেওয়ায় কত যে কেউটে বেরোচ্ছে স্যার।
- হুম।কেউটে দিয়ে তো আর কন্টিনজেন্সি ফান্ড তৈরি করা যায় না লাহিড়ীমশাই। ও খবর যেন না বেরোয়। বরং আমাদের পার্টি থেকে একটা জলসার আয়োজন করা হচ্ছে, তা নিয়ে একটা ফিচার করুন।
- তছরুপের ব্যাপারটা একটু নেগেটিভ বটে।
- তাই তো। পসিটিভে ফোকাস করুন। আর হ্যাঁ, আগের খবরটা সম্বন্ধে একটা অনিচ্ছাকৃত ভুল তথ্য প্রকাশের জন্য দু:খিত মার্কা একটা করিজেন্ডাম ছাপানো দরকার।
- ওই কনটিনজেন্সি ফান্ডের জন্য, তাই না স্যার?
- আপনি চমৎকার মানুষ মিস্টার লাহিড়ী।
- আপনি ভারি মাইডিয়ার স্যার।
***
- হ্যালো! লাহিড়ীবাবু! আমি দত্ত বলছি!
- নমস্কার স্যার। ভালো আছেন তো? আপনার ফোন পেয়ে যে কী ভালো লাগছে..।
- চাবকে পিঠের ছাল তুলে নেবো হারামজাদা। ন্যাকামি যত। আমি বারণ করা সত্ত্বেও তছরুপের সেকেন্ড স্টোরি ছাপা হলো? আমি দু'লাখ দিলাম...কড়কড়ে দু'লাখ..তবুও!
- কই স্যার। বুধবারে সেকেন্ড স্কুপ বেরোনোর কথা ছিল, আপনি আদেশমত সে খবর আমি বুধবার ছাপবো না।
- তাই বলে সে খবর আজ মঙ্গলবার ছেপে দিলি রাস্কেল? তুই জানিস ল্যাংড়া নগেন আমার পোষা গুণ্ডা? আমার এক ইশারায় সে এবং তার ছেলের দল তোকে পিটিয়ে তক্তা করে দেবে? তোর প্রেস জ্বালিয়ে ছাই করে দেবে?
- নগেনদা? যাকে আপনি মাসে দশহাজার দিয়ে পোষেন? ভারি মাইডিয়ার মানুষ। ওহো আপনাকে বলা হয়নি, নগেনদার মাস্তান কোম্পানির কনটিনজেন্সি ফান্ডে আমি দু'লাখ টাকা ডোনেট করেছি। আগামী এক বছর কেউ আমার একটা হাড় ভাঙলে নগেন তার দু'টো হাড় ভাঙবে। নগেন যা বুঝলাম ভারি অনেস্ট লোক। আজকাল সে'টা খুব রেয়ার। তাই না?

জুহু হন্টন



জুহু চৌপাটির বীচে নামা মানেই ভিড় আর বেশ খানিকটা জঞ্জাল। তবে আধমাইল মত হাঁটতে পারলেই (নভোটেল ছাড়িয়ে) ভিড় পাতলা হয়ে আসে, বীচটাও ও'দিকে খানিকটা চওড়া। আরও এগিয়ে গেলে বেশ নিরিবিলি। পা ছড়িয়ে বসা যায়, জলে পা ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে ঢেউ-থেরাপিও নেওয়া যায়, অথবা স্রেফ হেঁটে এগিয়ে যাওয়া। রাতের দিকে রোদ্দুরের হ্যাপা নেই, আর নেই মিষ্টি হাওয়ার অভাব। আজ বৃষ্টি না থাকলেও ও'দিকের সমুদ্রের হাওয়ায় দিব্যি জোলো ভাব। অতএব সে' এলাকায় হাফপ্যান্ট মেজাজে মিনিট চল্লিশ হাঁটার ইম্প্যাক্ট সেলুনের চেয়ারে বসে নবরত্ন তেলমালিশ করানোর সমান।

রাত সাড়ে আটটার মধ্যে ডিনার সেরেই বেরিয়েছিলাম, অতএব খাবারদাবারের স্টলে সময় নষ্ট করতে হয়নি। শুধু বাড়ির পাশের পার্কের বদলে আরবসাগরের পাশে হাঁটা। পার্কে হাঁটলে কানে ইয়ারফোনের দরকার পড়ে, সমুদ্রের পাশে সে'সবের দরকার পড়ে না। ফেরার আগে চৌপাটির উল্টোদিকের পানের দোকান থেকে হাইক্লাস কলকাত্তা মিঠা মুখে না দেওয়ার কোনো মানে হয় না। আর বাড়ি ফেরার পথে চারবাংলোর বাজার হয়ে আসা, সে'খান থেকে সামান্য বেলফুল না কিনলেই নয়। একা সমুদ্রদর্শন সেরে বাড়ি ফিরলে সামান্য ঘুষ দেওয়ার দরকার তো পড়বেই।

দশ টাকার ব্যাপার



- দশটা টাকা দেবেন স্যার?
- এগিয়ে যান।
- দিন না, বড্ড দরকার।
- খুচরো নেই। অন্য কারুর কাছে চান গিয়ে।
- দশটাকা ঠিক থাকবে, একটু পকেট হাতড়ে দেখুন না স্যার।
- আচ্ছা মুশকিল তো, প্ল্যাটফর্মে এতগুলো মানুষ, অন্যদের কাছে গিয়ে হাত পাতুন না। কেউ না কেউ ঠিক দিয়ে দেবে।
- আমি কিন্তু ভিখিরি নই স্যার।
- ভিখিরি না হয়ে ভিক্ষে করছেন কেন?
- আমার প্রসেসটা একটু আলাদা। যাকে পছন্দ হয়ে, তাঁর থেকেই একটু হেল্প নিয়ে নিই আর কী। যার তার কাছে হাত পেতে নাকি কান্না জোড়াটা আমি পছন্দ করিনা।
- ওরে বাবা। আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে?
- আপনার মুখের মধ্যে একটা ভারি পসিটিভ ইয়ে আছে।
- পসিটিভ ইয়ে, বটে!
- হ্যাঁ, খুব মারাত্মক ভাবে আছে। তাকালেই মনে হয়, "নাহ্, মানুষটা মন্দ হয়। সুবিবেচক। স্থিতধী.."।
- দেখবেন। আবার গলে পড়বেন না।
- দিন না। দশ টাকা।
- আচ্ছা জ্বালাতন মশাই।
- মুখে জ্বালাতন বলছেন। অথচ স্পষ্ট দেখতে পারছি আপনার মনটা নরম হয়ে এসেছে।
- এই নিন।
- এইত্তো। থ্যাঙ্কিউ। দেখুন দেখি, সামান্য দশটাকার জন্য খামোখা কত কথাবার্তা..।
- তা এই টাকা দিয়ে আশা করি বিড়িটিড়ি কিনবেন না।
- দশটা টাকা তো দিয়েছেন। তা'তে অত কৈফিয়ৎ তলব করার কী আছে!
- ভারি ডেঞ্জারাস লোক তো মশাই আপনি। এতক্ষণ টাকাটার জন্য ঝুলোঝুলি করে এখন..।
- মাইন্ড করবেন না প্লীজ। ও'ভাবে বলতে চাইনি। চিন্তা করবেন না, ও টাকার সঠিক ব্যবহার হবে।
- পারলে এক স্লাইস বাটার পাউরুটি কিনে খান দেখি।
- দ্যাখো দেখি কাণ্ড। আরে আমায় ভিখিরি ঠাউরেছেন নাকি। দিব্যি সকাল সকাল ভরপেট পরোটা ঘুগনি সন্দেশ সাঁটিয়ে বেরিয়েছি।
- ও মা, আমি আবার আপনার চেহারা দেখে ভাবলাম..।
- ভিখিরি?
- না মানে, ফতুয়াটা আপনার ঠিক..।
- ময়লা। ছেঁড়া। তা না হলে মানুষ দশটাকা দেবে কেন বলুন।
- কী কেস বলুন দেখি। টাকাটা নিয়ে করবেন কী?
- বলি?
- চটপট বলুন। আমার ট্রেন ঢুকছে।
- পাঁচটাকা দিয়ে ধনলক্ষ্মী ধামাকা লটারির টিকিট কাটবো। ফার্স্ট প্রাইজ এক কোটি, বুঝলেন? আর পাঁচ টাকা দিয়ে আগামী কালের খবরেরকাগজ, সে'খানে লটারিতে জেতা টিকিটের নম্বর প্রকাশ হবে।
- কিন্তু তার জন্য অন্যের থেকে টাকা নেওয়া আবার কেন..।
- ম্যাটার অফ প্রিন্সিপাল। নিজের টাকা দিয়ে আমি জুয়া খেলি না, আর মগজ পলিউট করা খবরের কাগজও কিনিনা। নিজের রক্তজল করা পয়সা, পারলে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেবো কিন্তু তা লটারি কিনে আর খবর পড়ে নষ্ট করতে পারি না। অথচ আমার বহুদিনের শখ লটারিতে ফার্স্ট প্রাইজ জিতে একটু জমিদারি রোয়াব ঝাড়ার। তাই আর কী..হপ্তায় বার তিনেক লটারি মাধুকরীতে বেরিয়ে পড়তে হয়। যাক। এ'বার তা'হলে আসি?
- ইচ্ছে করছে আপনার পায়ের ধুলো একটা কাগজে মুড়ে মানিব্যাগে রাখি। নেহাত ট্রেন দিয়ে দিয়েছে তাই। অল দ্য বেস্ট মশাই।

জরুরী তলব



তিনবার কলিংবেল বাজানোর পর দরজা খুলে দাঁড়ালেন এক মাঝবয়সী ভদ্রলোক। মাঝারি হাইট, শ্যামবর্ণ, বুদ্ধিদীপ্ত ভালোমানুষ চেহারা, গালে খোঁচা দাড়ি, পরনে নীল হাফ শার্ট আর সাদা পাজামা। নিশ্চিন্ত হলাম, সঠিক বাড়ি। ভদ্রলোক স্বাভাবিকভাবেই আমায় দেখে হকচকিয়ে গেলেন। আমি চট করে কাজের কথা পেড়ে বসলাম।

- বসন্ত, প্লীজ দরজা বন্ধ করবেন না।
- আপ..আপনি..।
- বুঝতে পারছি অবাক হচ্ছেন কিন্তু..।
- কী বিশ্রী ধরণের রসিকতা....।
- রসিকতা যে নয় সে'টা বুঝতেই পারছেন। এ'টা তো আর মেকআপ নয়..।
- আপনি..আপনি..।
- আমায় আবার আপনি আজ্ঞে করা কেন। অবশ্য সেল্ফরেস্পেক্টের ব্যাপারটাও আছে। বেশ, আপনিই থাক।
- আপনি!
- ঠিকই ধরেছেন বসন্ত। আমিই আপনি। আপনিই..।
- আমি! কী সর্বনাশ! অবিকল চেহারা! এমন কী নীল জামাটাও..।
- একই তো জামা। একটাই তো আমি ও আপনি। এ'বারে বেরিয়ে আসুন।
- আমি..আমি বেরিয়ে আসব কেন? আপনি যদি আমিই তা'হলে আপনি এলেন কেন..আমার কেমন মাথা গুলোচ্ছে।
- মাথাটা আপনার সত্যিই গেছে বসন্ত; লিটারেলি এবং ফিগারেটিভলি। দোষ দেওয়া যায় না। তবে এ'বার আপনাকে বেরিয়ে আসতেই হবে।
- ক..কিন্তু কেন?
- বাহ্। এক টুকরো বসন্ত বাড়ির মধ্যে বসে থাকলে অর্ধেক আত্মা আমি ওই দিকে ফিরে যাবো কী করে।
- অ। কিন্তু আমি তো কিছুই..।
- দু'ঘণ্টা আগে একটা মোটোর অ্যাক্সিডেন্টেই ব্যাপারটা হয়ে গেলো যে..আমি সোজাই চলে যেতাম অন্য দিকে কিন্তু মনটা ছাই অর্ধেকটা তো রোজ বাড়িতেই ফেলে আই। ঘরকুনো মানুষের যা সমস্যা আর কী। মনের একখাবলা অংশ হামেশা বাড়ির সোফাতেই শুয়ে থাকে। তাই তো ডেকে নিতে এলাম। চলুন দেখি, গোলমাল পাকানোর আগে বেরিয়ে আসুন। ও'দিকে হাফসোলদের প্রসেসিং হয় না শুনেছি। চলে আসুন বসন্ত।
- বেরোব?
- বেরোতেই হবে। তাজা তাজা ও'দিকে যেতে পারলেই মঙ্গল।
- বিকেলের দিক বেরোলে হত না ভাই? দুপুরটা অন্তত একটু গড়িয়ে নিতাম..।

গুলজার

নিরলস তপস্যা করলে তবে মিথ্যেরা গুল হয়ে ফুটে উঠতে পারে।
মিথ্যেরা নির্মম, গুলেরা সাধক।
মিথ্যেরা তলোয়ার নিয়ে তম্বি করে, গুলেরা হরবোলা হয়ে অলিগলি সরগরম করে ঘুরে বেড়ায়।

সেই গুলবাবাজীই যখন ভালোবেসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় তখন সে হয়ে ওঠে গপ্প।
গুলে আতসবাজি, গপ্পে সুর।
গুলের হিং টিং ছট, গপ্পের পাশে এসে দু'দণ্ডের জন্য বসা।

আর গপ্পদাদার যখন ভালোবাসায় চোখ ছলছল,
তখন তার আদত মুক্তি; তখন সে আশ্বাস - "সব ঠিক হয়ে যাবে, দেখো"।

দ্য গ্রেট মুম্বই সিক্রেট



মুম্বই বড়াপাউরুটি নিয়ে উপন্যাস-কবিতা লিখবে, ট্রেনের ভিড় নিয়ে স্পিরিট বিষয়ক লেকচার দেবে, তবু নিজের তুরুপের তাসটা সচরাচর বের করবে না: একটা আস্ত সমুদ্র। রোব্বারে রাস্তায় জ্যাম নেই, মানুষ তাড়াহুড়ায় তালগোল পাকিয়ে হদ্দ হচ্ছে না, সেই সুযোগে সকালে গিয়ে যে কোনো বীচে গিয়ে দাঁড়ালেই মনে হয় দু'দণ্ড বসি, গুনগুনিয়ে গান গাই (ঢেউ ভাঙার শব্দের সে অ-সুর অন্য কারুর কানে পৌঁছবে না), ধীরে সুস্থে হাঁটাহাঁটি করি, সামান্য জিরিয়ে নিই।

অফিস-বাড়ির কাজে এ সমস্ত কিছুতে পেষাই হওয়ার ফাঁকে হপ্তায় একদিন আরবসাগর সুরসিক গপ্পিয়ে গাইয়ে মেজমামার মত মাদুর পেতে হারমোনিয়াম নিয়ে বসে আছে। সেই শেল্টার ক'টা তাবড় শহরে মেলে? অথচ এই বিশাল ব্যাপারটাকে একটা তাবড় ট্রেডসিক্রেটের মত চেপেচুপে রাখাটাই এ শহরের 'রিলিজিয়ন'।

কাবাববন্ধুর প্রতি



কাবাবওলার সঙ্গে গলায়-গলায় দোস্তি নির্মলবাবু্র। কাবাবের দোকানটা নির্মলবাবুর বাড়ি থেকে হেঁটে বড়জোর দেড়-মিনিট, রাস্তার ধারের ছোট্ট ঠেলা বই তো নয়। কিন্তু কাবাবদাদাটি বড় দরদী। আগুনে নির্মমভাবে মাংস পুড়িয়ে দেওয়ার মধ্যে গাম্বাটপনা আছে, কাবাব শিল্প নেই; সে'কথাটা নির্মলবাবুকে আত্মস্থ করিয়েছেন এই কাবাবকবিই।

সন্ধে থেকে রাত দশটা পর্যন্ত সে ঠেলার চারপাশে বড্ড ভিড়। ব্যাচেলর মধ্যবয়স্ক নির্মল সাহা হপ্তায় অন্তত বার দুয়েক সে দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ান তবে রাত এগারোটা নাগাদ। বাড়াবাড়ি ভিড়ে কাবাবের কদর করতে পারেন না ভদ্রলোক। নির্মলবাবু এমনিতে রাত আটটায় ডিনার সেরে নেন, তবে কাবাবের ম্যাজিক বুঝতে মোটাদাগের পেটের খিদে নয়, দরকার রসিক মনের চনমন। এ সত্যটাও কাবাবিস্ট-ভাইটির থেকেই শেখা।

আজ বাতাসে মৃদু বৃষ্টির আভাস ছিলো। মাঝেমাঝে দু'চার ফোঁটা গায়ে এসে পড়ছিলোও বটে। তা'তে আগুন নেভার নয়, তবে হাওয়ায় সামান্য ছ্যাঁত যোগ হচ্ছিল বটে। নির্মলবাবু একটা ফ্লাস্কে চা নিয়ে আসেন, দু'টো প্লাস্টিকের কাপ। এক কাপ কাবাবনবাবকে ধরিয়ে নিজে এক কাপ ঢেলে দোকানের সামনের বেঞ্চিতে বসেন। এ'টাই নিয়মে দাঁড়িয়েছে।

- নির্মলবাবু, আজ চায়ের পাতা নতুন মনে হচ্ছে?
- ঠিক ধরেছ হে। নিউমার্কেট থেকে নতুন আমদানি।
- ভারি মোলায়েম। বহুত খুব।
- আকাশ দেখেছ? আজ রাতে ঢালবে, জানো।
- গরমটা একটু কমবে বটে তা'তে। আপনার শিক দু'টো রেডি। এক মিনিট দিন, ফ্রেশ পেঁয়াজ কুচিয়ে দিই।

নির্মলবাবুর স্নেহ অনুভব করেন। পোড়া কয়লার উষ্ণতা গায়ে এসে ঠেকে। কানে আসে কাবাবক্যাপ্টেনের পেঁয়াজ কুচোনোর মিহি শব্দ। নির্মলবাবুর বিশ্বাস প্রতিবার কাবাবগুরু তাঁর জন্য একটু বাড়তি ভালোবাসা নিয়ে মাংস ঝলসান, পেঁয়াজ কুচোন, আর প্লেট সাজিয়ে দেন। আসল স্বাদটুকু বোধ হয় সে বিশ্বাসেই। নির্মলবাবু টের পান যে এই ঘিঞ্জি শহরে তিনি একা নন।

কাবাববন্ধুর প্রতি মনে মনে বিগলিত সেলাম ঠুকে এই শনিবারের শেষ চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিলেন নির্মলবাবু।

মেজোকাকা ও লাল



ফুলুদির বিয়ের সকালে পরার জন্য মেজোকাকা একটা লাল রঙের ফতুয়া কিনেছে। মিইয়ে যাওয়া লাল নেয়, একবারে যাকে বলে গনগনে লাল। ভোরবেলা উঠে, স্নান সেরে; সে ফতুয়া আর পাজামা চাপিয়ে গোটা বিয়েবাড়ি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মাঝেমাঝেই সলজ্জ হাসি নিয়ে মানুষজনকে জিজ্ঞেস করছে "স্নোপাউডার ছাড়াই আমায় বোধহয় ফুলুর চেয়েও ব্রাইট লাগছে, তাই না"?

ব্রেকফাস্টে দু'টো বাড়তি কচুরি চেয়ে খেলে কারণ "রেড কালার এমনিতেই স্লিমিং"। ফুলুদির শ্বশুরবাড়ি থেকে এক ঝাঁক হবু দেওর এলো তত্ত্ব নিয়ে, মেজোকাকা তাদের ফলাও করে "রেড স্যালুট জেন্টলমেন, মাছ-মিষ্টির ডালাগুলো আমায় দাও। বাকি ট্রেগুলো ওই খাটে সাজিয়ে রাখো। চলো জওয়ান, লেফট রাইট লেফট.."।

দুপুরের দিকে ট্যুয়েন্টিনাইনের আসরে বসে বারবার বলে চললে যে "হাতে দু'তিনটে লাল কার্ড এলে কিন্তু কল আমিই ধরবো, কালারটা হেবি সুট করেছে"। সন্ধেবেলা আদ্দির পাঞ্জাবি পরার কথা ছিল, কিন্তু শেষে দরদী সুরে গান গেয়ে ঘোষণা করলে যে "ইয়ে লাল রঙ ম্যায় নহি ছোড়ুঙ্গা"। রাতের দিকে ফুলুদির বিয়ে মিটে গেলে মেজোকাকা আমাদের ছেলেছোকরাদের আসরে এসে বসে ভাটিয়ালি গাইলে আর বড়জ্যাঠার মাতব্বরি নিয়ে প্রাণখুলে নিন্দে করলে।

রাত দু'টো নাগাদ শুতে যাচ্ছি। মেজোকাকা পাশে এসে কাঁধে হাত রাখলে।

- ভটকাই, ইউ আর আ গুড বয়।
- মদ খেয়েছো কাকা?
- না। ওই একটিই লাল, মানে লাল জল, আমার সয় না। অম্বল হয়।
- তবে হঠাৎ প্রশংসা? ইডিয়ট হতচ্ছাড়া বাদে কোনোদিন কিছু বলতে শুনলাম না তো।
- একটা কথা কাউকে বলা হচ্ছে না। বলা দরকার।
- কী ব্যাপার কাকা?
- আমার বিজনেসে লালবাতি জ্বলে গেলো রে। গত পরশু থেকে শাটার ডাউন।
- সর্বনাশ। কাকী জানে?
- ফুলুর বৌভাতে পরবে বলে একটা গর্জাস লাল বেনারসি কিনেছিলো। সে'টা একদিন অন্তত আনন্দ করে পরে নিক।
- এরপর?
- প্রদীপ দত্ত এ'সব মাইনর সেটব্যাকে ঘাবড়ে যায় ভেবেছিস? গত তিরিশ বছরে চারটে ব্যবসা করেছি। সব কটাতেই লাল হয়েছি আবার ডুবেওছি। নতুন ব্যবসা খুঁজে নিয়েছি। ফুলুর মেয়ে বা ছেলের মুখেভাতে দেখিস আমার কী র্যালা।
- যাক। নিশ্চিন্ত হলাম।
- কাউকে বলতে না পেরে দম বন্ধ হয়ে আসছিল। এ'বার একটু স্বস্তি পেলাম।
- ক্যাটক্যাটে লাল জার্সিটা এ'বার ত্যাগ করবে কি?
- ওই রঙের কনফিডেন্সেই তো মার দেগা কেল্লা অ্যাটিটিউডটা ধরে রাখতে পেরেছি রে রাস্কেল।
- আবার রাস্কেল?
- ও'সবে মন খারাপ করতে নেই ইডিয়ট। ইউ আর আ গুডবয়। নে, একটা বিড়ি খাওয়া দেখি।

প্রেম-ফেল

ফার্স্ট ইয়ারের শেষ দিকে গজিয়ে ওঠা ভালোবাসা থার্ড ইয়ারের শুরুর দিকে ফেল পড়া মাত্র সুমন্ত নরম প্রেমের গান শোনা বন্ধ করেছে। বিকেলে পার্কের বেঞ্চে বসে আহা-উঁহু করার মত মনোরম হাওয়া গায়ে লাগলেই দাঁত খিঁচিয়ে গ্লোবালওয়ার্মিংয়ের কথা বলছে। গল্পের বই বাদ দিয়ে ধারালো সব সেল্ফডেভেলপমেন্ট মার্কা বই খুঁজছে। এমন কী শুরুর দিকে সিগারেট ধরার একটা মৃদু চেষ্টাও করেছিল, তবে অনেক কেশেও ধোঁয়া ব্যাপারটার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলা যায়নি। তার বদলে সর্বক্ষণ চুয়িংগাম চিবিয়ে গোটা দুনিয়াকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করে চলেছে সে। তবে এত কিছু করেও সুমন্ত নিজের অপ্রেমিক বিপ্লবী ব্যক্তিত্বের ঝাঁজ নিয়ে সন্তুষ্ট হচ্ছিল না। আরও রাগতে হবে, গর্জে উঠতে হবে, কথায় কথায় খেইমেই করে উঠতে হবে, তেমনটাই তার ইচ্ছে।

শেষে এক বর্ষার বিকেলে সব এলেমেলো হয়ে গেলো, যেমনটা হয় আর কী। যুগে যুগে তো ঠিক এ'ভাবেই বিপ্লব ভেসে গেছে, ফিকে হয়ে এসেছে প্রতিবাদের রঙ। বিকেলের দিকে রেলের মাঠের পাশে ফার্স্টইয়ারি ভালোবাসাকে ফুচকার ঝালে নাকানিচোবানি খেতে দেখে ইনকিলাব হলো টলোমলো। পড়ন্ত আলোয় ফেলে-আসা-"ও"কে ফুচকা সাঁটাতে দেখে সব কেমন যে্ন এলোমেলো হয়ে গেলো। সুমন্তর মনে পড়লো "আহা, ও যে আমার চেয়ে মাস চারেকের ছোটো। যেই ওর সঙ্গে থাকুক, ফুচকাওলাকে ঝালের ব্যাপারে সঠিক ইন্সট্রাকশন যেন দিতে পারে। ও যে ঝাল সইতে পারে না"।

এরপর "বম্ ভোলে" হুঙ্কার দিয়ে নচিকেতার প্রেমের গান গুনগুন করতে করতে বাড়ির দিকে এগোলো সুমন্ত, আজ নারায়ণ দেবনাথে ঝাঁপ না দিলেই নয়।