Skip to main content

কর্পোরেট বাউল, রামপ্রসাদ আর দিল্লীর বৃষ্টি



- এ যে ক্যাটস অ্যান্ড ডগস ভায়া৷

- ট্র‍্যাফিকে জবাই হওয়া ছাড়া গতি দেখছি না৷

- আহ্, তোমার খালি হাফ গ্লাস এম্পটি৷ ট্র‍্যাফিকের হয়রানিটাই দেখলে? বৃষ্টির পারকুইজিটগুলো অবহেলা করলে চলবে কেন৷ সাফিশিয়েন্ট মিঠে হাওয়া, গরমের হাঁসফাঁস গন, সন্ধ্যের ফুলুরি রাতের খিচুড়ি..। ফোকাস অন দ্য কন্ট্রোলেবলস, ট্র‍্যাফিক তোমার হাতে নেই৷ কিন্তু খিচুড়ির পাশের ডিমভাজার কোয়ালিটি তোমারই হাতে রয়েছে৷ 

- চাকরীবাকরী ছেড়ে কর্পোরেট ট্রেনিংয়ে ঢুকে পড়ুন সুদীপদা৷ এ'সব সুড়সুড়ি দিয়ে বেশ টুপাইস ইনকাম হবে৷

- আমি নিজেকে কী বলি জানো? কর্পোরেট বাউল৷ প্রমোশনে নেই, ল্যাং মারামারিতে নেই৷ দিনের কাজ দিনের মধ্যে মিটিয়ে নাও আর তারপর জীবনপুরের পথিক মোডে মানুষ কালটিভেট করে বেড়াও৷

- তা এই বৃষ্টিকে কালটিভেট করতে হলে কী করতে হবে?

- জ্যামের দিকে দাঁত খিঁচিয়ে বসে না থেকে বৃষ্টির ফ্লোটা ফীল করো ব্রাদার৷ এ তো আর কলকাতা নয় যে ঘ্যানরঘ্যানর বৃষ্টি আড়াই মাস ধরে চলবে৷ দিল্লীতে এমন বৃষ্টি সহজে জোটে না৷ সো মেক দ্য মোস্ট অফ ইট৷ 

- কলকাতা৷ হুঁহ্৷

- ঝেড়ে কাশো৷ 

- কলকাতায় থাকতে কলকাতার বৃষ্টিকে কম গালাগাল দিইনি৷ অথচ এখন মনে হচ্ছে এমন দিনে গড়িয়াহাটে দাঁড়িয়ে ইলিশের দরদাম করলে মন্দ হত না৷ তারপর দাস কেবিন থেকে মোগলাই প্যাক করিয়ে নেওয়া৷ নাহ্, এ'সব ভেবে একটু খারাপই লাগছে সুদীপদা৷ আমি অবশ্য একটু হোমসিক বাই নেচার। 

- কী জানো ভায়া, বৃষ্টি ব্যাপারটা স্মৃতি আর সিনেমায় যতটায় সুন্দর, ডেলি প্যাসেঞ্জারিতে ততটা নয়। তবে আদত নির্বাণটা কোথায় জানো? টু রিয়ালাইজ দ্যাট ডেস্পাইট দ্য ইনকনিভিনিয়েন্সেস; সাম ডে, ইভেন দিস রেইন শ্যাল বি মিসড। একদিন এই দিল্লীর বৃষ্টির জন্যেও বুকের মধ্যে একটা হাহাকার অনুভব করবে৷ হাজার বারো বছর ধরে আমরা চাষবাস করে চলেছি হে, এই চাকরীর ঘানিটানা তো হালের ফ্যাশন৷ বৃষ্টিকে ভয় পাওয়া, শ্রদ্ধা করা, ভালোবাসা; এ আমাদের মজ্জায়৷ বহুদিন পর জবরদস্ত বৃষ্টি দেখলে বুক চলকে ওঠাটাই সিভিলাইজেশ্যন৷ 

- নাহ্৷ কর্পোরেট ট্রেনার না হয়ে বরং বাবাজী-টাবাজীই হয়ে পড়ুন৷ তা এই বৃষ্টির সন্ধ্যেকে ভালোবাসতে হলে কী করনীয়? 

- বাড়ি ফেরার তাড়া না থাকলে চলো তোমায় রামপ্রসাদ মিশ্রর মির্চি পকোড়া খাওয়াই৷ রামপ্রসাদের পকোড়া হাইক্লাস, তবে সে একটা ঝাল মিষ্টি চাটনি অফার করে; সে'টা লেজান্ডারি৷ সে আদতে বলিয়ার মানুষ, এবং দিল্লীর জামাই৷ তার চুয়ান্ন বছরের জীবনে বেয়াল্লিশ বছর দিল্লীতে থেকেছে সে, অথচ আজও নিজের গাঁয়ের কথা ভেবে সে ছটফট করে৷ আর সেই ছটফটটুকুই সে চ্যানেলাইজ করে তার পকোড়া ভাজায়৷ সে এক আর্টিস্ট ভায়া, কড়াই না ধরে ক্যানভাস ধরলে আজ সে ওয়ার্ল্ড ফেমাস হত। আর রামপ্রসাদ আমার ডিয়ারেস্ট বৃষ্টিতুতো ভাই৷ যাবে নাকি তার কাছে? তোমার দাসকেবিন আর গড়িয়াহাটের অভাব মিটিয়ে দেব, আই প্রমিস। 

- এ'সব জিনিয়াসের খবর আপনি পান কী করে?

- শুয়োরে শুয়োর চেনে আর বাউল চেনে বাউল। চলো, এ'বার রামপ্রসাদের দোকানে হানা দেওয়া যাক৷ তোমায় দিল্লীর বৃষ্টি না চেনালেই নয়৷ 

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু