Skip to main content

হোয়্যাটস্যাপিস্টস



পেল্লায় হোয়্যাটস্যাপ গ্রুপগুলো দাঁড়িয়ে আছে দু'ধরণের মানুষের কাঁধে ভর দিয়ে৷ 

প্রথম দল সর্বক্ষণ 'মডারেট' করে চলেছে৷ 'ডিসিপ্লিন' নিয়ে তারা সর্বক্ষণ শশব্যস্ত৷ তাদের ধারালো দৃষ্টি এড়িয়ে গ্রুপে হাওয়াও বইতে পারেনা। রাজ্যশাসনের ভার তাদের হাতে৷ কড়া ধমক, শ্লেষ, বিরক্তি আর নিয়মকানুন বানানোর হুজুগ; এ'সব মিলিয়েমিশিয়ে সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখছে তারা৷ তারা নিয়মিত চাবুক কষাচ্ছে;

"দেখুন মিস্টার দত্ত, ফরওয়ার্ড মেসেজ পাঠাতে হলে অন্য গ্রুপে যান৷ এই গ্রুপ একটা সিরিয়াস পারপাস নিয়ে তৈরি হয়েছে, এ'সব ছেলেমানুষি যেন এ'খানে না দেখি"৷ 
মিস্টার দত্ত চোরাই সোনার বিস্কুট সমেত ধরা পড়লেও বোধ হয় এত ভেবড়ে যেতেন না। 

"এই যে, সাহাবাবু! আপনাকে কতবার বলেছি গুড মর্নিং মেসেজ পাঠাবেন না৷ গ্রুপ মেম্বারদের মোবাইলে স্পেস নষ্ট হচ্ছে৷ আপনাকে অনুরোধ করা হচ্ছে গ্রুপ কন্সটিটিউশনটা আর একবার পড়ে দেখতে"।
সাহাবাবু আজ পর্যন্ত খবরের কাগজের প্রথম পাতাখানা ছাড়া কিছু পড়ে দেখেননি৷ গ্রুপের কন্সটিটিউশন যে আছে তাই তিনি জানেন না, জানবেনও না৷ হোয়্যাটস্যাপের কড়া মেমোটিও তিনি পড়বেন না৷ পরের দিন ফের সকাল সাড়ে ছ'টায় টুং শব্দে গ্রুপ মডারেটরের ঘুম ভাঙাবেন ভদ্রলোক; গোলাপের ছবির ওপর লেখা থাকবে "শুভ সকাল বন্ধুরা"৷ 

"বঙ্কুবাবু আর অমিয়বাবু৷ আপনাদের ভাষা এ গ্রুপের পরিবেশ নষ্ট করছে৷ ঝগড়া করতে হলে পাড়ার মোড়ে দেখা করুন। অথবা নিজেদের মধ্যে ডায়রেক্ট মেসেজ চালাচালি করে খেউড় চালিয়ে যান৷ নয়ত আমর বাধ্য হব আপনাদের গ্রুপ থেকে এস্কপেল করতে"। 
ইন্টারনেট ঝগড়ার বড় হাইভোল্টেজ ব্যাপার, সে মায়া কাটানো অসম্ভব৷ মাঝেমধ্যেই শক্তির কবিতার লাইন শেয়ার করা বঙ্কুবাবু মডারেটরের কাছা খুলবেন; "গ্রুপটা তোর বাপের সম্পত্তি নাকি রে শালা"? অমিয়বাবু এক ধাপ ওপরে গিয়ে, "এমন ফোঁপরদালালের গ্রুপে আমি ইয়ে করি" বলে স্যাট করে গ্রুপত্যাগ করবেন৷ 

আর একদল মানুষ হল হোয়্যাটস্যাপ গ্রুপের আদত লক্ষ্মী।  মডারেটর আর গ্রুপ-জ্যাঠাদের ডিফেন্স হেলায় উড়িয়ে তারা শুধু ফরওয়ার্ড খেলে যায়৷ এই পাঠালো মাজার বোতলে এবোলার গল্প, পরক্ষণেই চীনের প্লাস্টিক ডিমের কারখানার ওপর ডকুমেন্টারি, তারপরেই পলিটিকাল মীম বা এমন খবর যার গাঁজাখুরিত্ব পাঁচ বছরের খোকাও ধরে ফেলবে- এ'ভাবে একটানা অক্লান্ত ভাবে তারা গ্রুপ গুলজার করে রাখে৷ মডারেটর ধমক, সৎ মেম্বারের শুধরে দেওয়ার প্রচেষ্টা, ভূমিকম্প,  ঝড়,; কোনও কিছুই এদের রুখতে পারেনা৷ মাঝেমধ্যে 'সরি'ও বলে ফেলে এরাঃ

"ওহ হো, ফরওয়ার্ডটা আমি পাঠাইনি৷ আমার ভাইপোর হাতে ফোন ছিল তো, সেই ব্যাটা...(জিভ বের করা স্মাইলি-সহ)"৷ অবশ্যই পরের দিন ফের ফরওয়ার্ড চালু করবেন। 

"তাই কি? এ খবরটা গুজব? ওহ, আমি বুঝতে পারিনি৷ ক্ল্যারিফাই করে দেওয়ার জন্য থ্যাঙ্কিউ"৷ বলেই গুজব ব্রডকাস্টার অন্যান্য গ্রুপে সে গুজবই ফরওয়ার্ড করবে৷ 

এই হলো এ যুগের সবচেয়ে ধারালো ইডিওলজিকাল যুদ্ধ৷ ডিসিপ্লিনবাজরা কমল মিত্তিরের মত পাথুরে এবং হিমশীতল। অন্যদিকে ফরোয়ার্ডিস্টরা মাতাল কবি; অনিল চ্যাটুজ্জ্যে ঘরানায়৷ কবিতা এবং যশ চোপড়ার মহব্বতের নিয়ম মেনেই ডিসিপ্লিনকে মাথা নীচু করে সরে পড়তে হবে৷ প্রতিটা সৎ  হোয়্যাটস্যাপ গ্রুপ হিজবিজ মেসেজের সমুদ্রে ভেসে যাবে আর নিয়মকাকুকাকীমারা যন্ত্রণায় ছটফট করে হদ্দ হয়েও বিপ্লবের স্বপ্ন ত্যাগ করবেনা; এই ভিসিয়াস সাইকেল থেকে বেরোনো অসম্ভব৷

Comments

Popular posts from this blog

গোয়েন্দা গল্প

- কিছু মনে করবেন না মিস্টার দত্ত...আপনার কথাবার্তাগুলো আর কিছুতেই সিরিয়াসলি নেওয়া যাচ্ছে না।  - কেন? কেন বলুন তো ইন্সপেক্টর? - ভোররাতে এই থানা থেকে একশো ফুট দূরত্বে ফুটপাথে আপনাকে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায়।  - আপনার কনস্টেবল নিজের চোখে দেখেছে তো।  - না না, সে'টাকে আমি কোশ্চেন করছি না। আমি শুধু সামারাইজ করছি। আপনার গায়ে দামী চিকনের পাঞ্জাবী, ঘড়িটার ডায়ালও সোনার হলে অবাক হব না। এ'রকম কাউকে বড় একটা ফুটপাথে পড়ে থাকতে দেখা যায় না। যা হোক। হরিমোহন কনস্টেবলের কাঁধে ভর দিয়ে আপনি থানায় এলেন। জলটল খেয়ে সামান্য সুস্থ বোধ করলেন। অল ইজ ওয়েল। নিঃশ্বাসে অ্যালকোহলের সামান্যতম ট্রেসও নেই। শরীরে নেই কোনও চোট আঘাত।  - আমার কথা আমায় বলে কী লাভ হচ্ছে? আমি যে জরুরী ব্যাপারটা জানাতে মাঝরাতে ছুটে এসেছিলাম...সেই ব্যাপারটা দেখুন...। ব্যাপারটা আর্জেন্ট ইন্সপেক্টর মিশ্র।  - আর্জেন্সিতে পরে আসছি। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ আপনি থানায় ছুটে এসেছিলেন। ওয়েল অ্যান্ড গুড। কিন্তু...ফুটপাথে পড়ে রইলেন কেন...।  - এ'টাই, এ'টাই আমি ঠিক নিশ্চিত নই। মাথাটাথা ঘুরে গেছিল হয়ত। আফটার অল বা

পকেটমার রবীন্দ্রনাথ

১ । চাপা উত্তেজনায় রবীন্দ্রনাথের ভিতরটা এক্কেবারে ছটফট করছিল । তার হাতে ঝোলানো কালো পলিথিনের প্যাকেটে যে ' টা আছে , সে ' টা ভেবেই নোলা ছুকছাক আর বুক ধড়ফড় । এমনিতে আলুথালু গতিতে সে হেঁটে অভ্যস্ত । তাড়াহুড়ো তার ধাতে সয় না মোটে । কিন্তু আজ ব্যাপারটা আলাদা । সে মাংস নিয়ে ফিরছে । হোক না মোটে আড়াই ' শ গ্রাম , তবু , কচি পাঁঠা বলে কথা । সহৃদয় আলম মিয়াঁ উপরি এক টুকরো মেটেও দিয়ে দিয়েছে । তোফা ! নিজের লম্বা দাড়ি দুলিয়ে ডবল গতিতে পা চালিয়ে সে এগোচ্ছিল ।   গলির মোড়ের দিকে এসে পৌঁছতে রবীন্দ্রনাথের কেমন যেন একটু সন্দেহ হল । ঠিক যেন কেউ পিছু নিয়েছে । দু ' একবার ঘাড় ঘুরিয়েও অবশ্য কাউকে দেখা গেলনা । ভাবনা ঝেড়ে ফেলে মাংসের পাকেটটায় মন ফিরিয়ে আনলেন রবীন্দ্রনাথ । বৌ নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আজ । খোকাটাকে যে কদ্দিন মাংসের ঝোল খাওয়ানো হয়নি ।   খাসির রান্নার গন্ধ ভেবে বড় গান পাচ্ছিল রবীন্দ্রনাথের । সে বাধ্য হয়েই একটা কুমার শানুর গাওয়া আশিকি সিনেমার গান ধরলে ।

চ্যাটার্জীবাবুর শেষ ইচ্ছে

- মিস্টার চ্যাটার্জী...। - কে? - আমার নাম বিনোদ। - আমি তো আপনাকে ঠিক...। - আমায় বস পাঠিয়েছেন। - ওহ, মিস্টার চৌধুরী আপনাকে...। - বসের নামটাম নেওয়ার তো কোনও দরকার নেই। কাজ নিয়ে এসেছি। কাজ করে চলে যাব। - আসুন, ভিতরে আসুন। - আমি ভিতরে গিয়ে কী করব বলুন। সৌজন্যের তো আর তেমন প্রয়োজন নেই। আপনি চলুন আমার সঙ্গে। চটপট কাজ মিটে গেলে পৌনে এগারোটার লোকালটা পেয়ে যাব। আমায় আবার সেই সোনারপুর ফিরতে হবে। - যা করার তা কি এ'খানেই সেরে ফেলা যায়না? - এমন কনজেস্টেড এলাকায় ও'সব কাজ করা চলেনা। চুপচাপ ব্যাপারটা সেরে ফেলতে হবে। - প্লীজ দু'মিনিটের জন্য ভিতরে আসুন বিনোদবাবু। জামাটা অন্তত পালটে নিই। - কী দরকার বলুন জামা পালটে। - দরকার তেমন নেই। তবু। ওই, লাস্ট উইশ ধরে নিন। - ক্যুইক প্লীজ। ট্রেন ধরার তাড়াটা ভুলে যাবেন না। আর ইয়ে, পিছন দিক দিয়ে পালাতে চেষ্টা করে লাভ নেই। বসের লোকজন চারপাশে ছড়িয়ে আছে। - ও মা, ছি ছি। তা নয়। আসলে মিতুলের দেওয়া একটা জামা এখনও ভাঙা হয়নি। বাটিক প্রিন্টের হাফশার্ট। একটু ব্রাইট কালার কিন্তু বেশ একটা ইয়ে আছে। ও চলে যাওয়ার পর ও জামার ভাজ ভাঙতে ইচ্ছে হয়নি। কিন্তু...আজ না হয়...। - মিতু